নাটোরের নলডাঙ্গায় প্রচন্ড খড়ায় জমিতে শুকিয়ে মরে যাচ্ছে পাট। পানির অভাবে পাট জাগ দিতে না পেরে দুশ্চিন্তায় পড়েছে চাষীরা। অতিরিক্ত খড়ার কারণে খাল-বিলে পানি না থাকায় পড়েছেন কৃষকরা চরম দুর্ভোগে। বর্ষার ভরা মৌসুমেও খাল-বিলে পানি না থাকায় জলাশয়, ডোবা, পুকুরে পাট জাগ দিতে হচ্ছে। এতে স্বাভাবিক খরচের চেয়ে বেশি হওয়া সহ পাটের গুনগত মান কমছে।
নলডাঙ্গা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে জানাগেছে, এ বছর চলতি মৌসুমে উপজেলাতে ১৯০০শ ১০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর ১০০ হেক্টর জমিতে বেশি পাটের আবাদ হয়েছে। নলডাঙ্গা উপজেলার পাটের চাহিদা রয়েছে সারা দেশে।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখাগেছে, পানি না থাকায় কৃষকরাই চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। সেখানে নদী, মাছ চাষের পুকুর, খাল, বিলে, কোথাও পর্যাপ্ত পানি না থাকায় পাট জাগ দিতে পারছে না। কোনো উপায় না পেয়ে কৃষকরা পাট কেটে ক্ষেতেই ফেলে রাখছেন। অনেকে বন্যার পানির আশায় পাট না কেটে রেখে দিচ্ছেন। অনেকে কষ্ট করে মহিষের গাড়ি, টলি ও বিভিন্ন গাড়িতে করে দুর দুরান্ত নদী গুলোতে পাট নিয়ে যাচ্ছে। আবার কেউ পুকুর লিজ নিয়ে ও পুকুর কয়েকদিনের জন্য ভাড়া নিয়ে পাট জাগ দিচ্ছেন, স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পাট চাষিকে একবিঘা জমির পাট ১০০০ টাকা হতে ১৫০০ টাকা পযন্ত পুকুর মালিককে দিতে হচ্ছে।
আবার কেউ কেউ পর্যাপ্ত পানি না পেয়ে নিচু জায়গায় জমে থাকা ময়লা পানি ও সেখানে পানি সেচ দিয়ে জাগ দিচ্ছেন। তবে পাটের ফলন ভালো হলেও পর্যাপ্ত পানির অভাবে পাটের আঁশ আর সোনালি না থেকে কালো রঙের ফ্যাকাসে হয়ে যাচ্ছে। আবার অনেকে ধারণা করছে এবার বৃষ্টি না হলে পাটের ফলন কম হবে। এটির বাজারমূল্য সোনালি আঁশের থেকে অনেক কম হবে বলে ধারণা কৃষকদের।
শাকিল নামে এক কৃষক বলেন, এ বছর বৃষ্টির পরিমাণ খুবই কম, আষাঢ় মাস শেষ হয়ে গেছে এখনো খালে বিলে কোথায়ও পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি নেই, বন্যার পানির আশায় আছি। খালে সামান্য বৃষ্টির পানি জমছে সেখানে পাট জাগ দিতে হচ্ছে। কম পানিতে পাট জাগ দেওয়ায় পাটের আঁশ কালো হয় বলে তা কম দামে বিক্রি করতে হয়। পাটের ফলন এবার ভালো হওয়া সম্ভবনা কম পানির অভাবে আঁশ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। আওয়ার ফরাজী নামের এক কৃষক বলেন, পাট চাষে কোন লাভ নেই। অনেক খরচ জমি প্রস্তুত করা, বীজ বোপন, সেচ, সার, আগাছা পরিষ্কার, পাট কর্তন, জাগ দেওয়া, পাট ধোয়া পর্যন্ত যে খরচ হয় হিসাব করলে কৃষকদের লোকসান হয়।
নলডাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফৌজিয়া ফেরদৌসী বলেন, খড়ায় খালে বিলে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় কৃষকরা পাট জাগ দেওয়া নিয়ে কিছুটা সমস্যায় পড়েছেন। আবহাওয়া বার্তার পূর্ব আবাশে আশা করা যাচ্ছে যে এই সাপ্তাহ হতে বৃষ্টি শুরু হবে ইনশাআল্লাহ। আর তারপরও যদি বৃষ্টি না হলে তাহলে জমিতে পানি সেচের ব্যবস্থা করতে হবে, যদিও এটা ব্যয়বহুল।
এছাড়া পাট কাটা দেরী হওয়ার কারণে বোরো আবাদ নিয়ে এখন বিড়ম্বনায় পড়ছেন।
তিনি আরো বলেন, জমি থেকে অনেক দূরে বহন করে নিয়ে পাট জাগে ফেলতে হচ্ছে বলে কৃষকদের পাট উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। পাটের ভালো দাম না পেলে লোকশান গুনতে হবে কৃষকদের।