শনিবার, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:৩৬ পূর্বাহ্ন

ই-পেপার

শিরোনাম :
শিরোনাম :
নাগরপুরে জামায়াতে ইসলামী’র ইউনিয়ন ভিত্তিক নির্বাচনী কর্মশালা অনুষ্ঠিত ভাঙ্গুড়ায় তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করেও তথ্য না পাওয়ার অভিযোগ ইউএনও’র বিরুদ্ধে জকিগঞ্জে এইচসিআই’র উদ্যোগে আধুনিক মাদরাসার উদ্বোধন ও ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প যথাযোগ্য মর্যাদায় বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ এর ৫৪তম শাহাদত বার্ষিকী পালন করলো বিজিবি ঈশ্বরদীতে নানা আয়োজনের মধ্যে দিয়ে বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন ভাঙ্গুড়ায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষককে শোকজ ঘিরে বিতর্ক সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার ও বিতর্কিত ওসিকে প্রত্যারের দাবিতে সাংবাদিকদের  মানববন্ধন লামায় সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে মোবাইল কোর্ট অভিযান 

ইসলামে মাতৃভাষা চর্চার গুরুত্ব – মাওলানা:শামীম আহমেদ

চলনবিলের আলো ডেস্ক:
আপডেট সময়: শুক্রবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৭:৫২ অপরাহ্ণ

পৃথিবীতে মানবজাতির আগমনের সঙ্গে সঙ্গে ভাষার উৎপত্তি হয়েছে। প্রথম মানব ও নবী হজরত আদম (আ.) এবং হজরত হাওয়া (আ.) নিজেদের মনের কথা প্রকাশের জন্য বেহেশত থেকে আরবি ভাষা শিখে এসেছিলেন।

আল্লাহতায়ালা তাদের সবকিছুর নাম শিক্ষা দিয়েই তবে দুনিয়াতে পাঠান। এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হচ্ছে, ‘আর তিনি (আল্লাহ) আদমকে যাবতীয় নাম শিক্ষা দিয়েছেন।

’ -সূরা আল বাকারা : ৩১

ইসলামের শিক্ষা মানুষকে বিভিন্ন ভাষাচর্চায় দারুণভাবে উৎসাহিত করে ও বিশেষ অনুপ্রেরণা জোগায়। ইসলাম মাতৃভাষার উৎকর্ষ সাধনে যথাযথ গুরুত্বারোপ করেছে।

জ্ঞানার্জন করতে হলে মানুষের অবশ্যই প্রয়োজনীয় ভাষাজ্ঞান থাকা জরুরি। প্রকৃত অর্থে জ্ঞানী-গুণী হতে হলে ভাষা সম্পর্কে ব্যাপক অনুশীলন করা উচিত।

পড়াশোনার মাধ্যমে জ্ঞানার্জনের সঙ্গে ভাষাচর্চাও যথেষ্ট পরিমাণে বৃদ্ধি পায়। কোরআনে কারিমের বিভিন্ন আয়াতে ভাষাচর্চার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। কোরআনে কারিমের নাজিলকৃত প্রথম আয়াত ‘ইক্বরা’য় জ্ঞানার্জনের জন্য মানবজাতির প্রতি উদাত্ত আহ্বান রয়েছে।

এ ছাড়াও আল্লাহতায়ালা প্রত্যেক জাতির স্বীয় মাতৃভাষাকে যথাযথ মর্যাদা প্রদান করে নিজ নিজ জাতির নিজস্ব ভাষায় আসমানি কিতাবগুলো নাজিল করেছেন। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, প্রধান প্রধান চারটি আসমানি কিতাবের মধ্যে হজরত মূসা (আ.)-এর প্রতি ‘তাওরাত’ হিব্রু ভাষায়, হজরত ঈসা (আ.)-এর প্রতি ‘ইঞ্জিল’ সুরিয়ানি ভাষায়, হজরত দাউদ (আ.)-এর প্রতি ‘যাবুর’ ইউনানি ভাষায় এবং শেষ নবী হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি ‘কোরআনে কারিম’ আরবি ভাষায় নাজিল হয়।

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মাতৃভাষা ছিল আরবি। তার কাছে সর্বশেষ আসমানি কিতাব ‘কোরআন’ নাজিল হয় আরবি ভাষায়। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মাতৃভাষায় কোরআন নাজিল হওয়া প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি কোরআনকে তোমার ভাষায় সহজ করে দিয়েছি, যাতে তুমি তা দিয়ে মুত্তাকিদের সুসংবাদ দিতে পার এবং কলহকারী সম্প্রদায়কে সতর্ক করতে পার। ’ -সূরা মরিয়ম : ৯৭

আল্লাহতায়ালার একত্ববাদ ও রিসালাতের দাওয়াত সফলভাবে মানুষের কাছে পৌঁছাতে হলে সেই এলাকার নিজস্ব ভাষায় প্রচার চালানো দরকার। এ ক্ষেত্রে দাওয়াত প্রদানকারীর প্রয়োজনীয় ভাষাজ্ঞান না থাকলে সফলভাবে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছানো সহজ নয়; এটা অসম্ভবও বটে। যথার্থ ভাষাজ্ঞান না থাকলে দাওয়াতের দায়িত্ব পালন করা অত্যন্ত কঠিন কাজ। ইসলামী আদর্শ যেমন সর্বজনীন, ইসলামে ভাষা তেমনি সর্বজনীন। এভাবে ভাষা, বর্ণ ও আঞ্চলিকতার সীমাবদ্ধতা পেরিয়ে ইসলাম চিরন্তন শাশ্বত সত্য-সুন্দর ধর্ম প্রচারে মাতৃভাষা চর্চার জোরালো তাগিদ দিয়েছে। কোরআনে কারিমে বুদ্ধিমত্তা ও উত্তম বাক্য দ্বারা ইসলাম প্রচারের আহ্বান জানিয়ে ইরশাদ হচ্ছে, ‘তুমি মানুষকে তোমার প্রতিপালকের পথে হিকমত (বিজ্ঞানসম্মত) ও সদুপদেশ দ্বারা আহ্বান কর এবং তাদের সঙ্গে সদ্ভাবে আলোচনা কর। ’ -সূরা আন নাহল : ১২৫

এরই পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী সময়ে যুগে যুগে ইসলাম ধর্মের মহান প্রচারকগণ পৃথিবীর যেসব অঞ্চলে ইসলাম প্রচার করতে গিয়েছেন সেই অঞ্চলের ভাষা আয়ত্ত করেই তবে সে ভাষায় ইসলামের বাণী সেই অঞ্চলের মানুষের কাছে সহজ ও সাবলীলভাবে তুলে ধরেছেন। এভাবেই ইসলামের অগ্রযাত্রা সাধিত হয়েছে।

ইসলাম প্রচারকদের কেউ কেউ সেসব অঞ্চলের মাতৃভাষায় কোরআনে কারিম অনুবাদ করে অনুসারীদের মাঝে কোরআন-হাদিসের জ্ঞানদান করেছেন এবং ইসলামের বিধিবিধান ও নিয়মকানুন শিক্ষা দিয়েছেন। মাতৃভাষার প্রতি দ্বীন প্রচারকদের অত্যধিক গুরুত্বারোপের কারণে মুসলিম মননে জন্ম নিয়েছে মাতৃভাষার প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা। মাতৃভাষার প্রতি এই অবারিত ভালোবাসার পরিপ্রেক্ষিতেই হয়তো ইমাম আবু হানিফা (রহ.) এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। তিনি তার দেশবাসীর জন্য মাতৃভাষা ফারসিতে কোরআন অনুবাদ করার ঐতিহাসিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন এবং তা নামাজে তেলাওয়াতের অভিমত প্রদান করেন। অবশ্য এ অভিমত তিনি বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের স্বার্থে পরে প্রত্যাহার করে নেন। এ ঘটনায়ও ইসলামী পণ্ডিতদের মাতৃভাষা মূল্যায়নের প্রমাণ মেলে।

সব ভাষাই আল্লাহর দান। বাঙালি হিসেবে স্বভাবতই বাংলা ভাষা আমাদের প্রতি আল্লাহতায়ালার সেরা দান। বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশ একমাত্র দেশ, যে দেশের দামাল ছেলেরা নিজ ভাষা বাংলাকে রক্ষা করার জন্য অকাতরে জীবন বিলিয়ে দিয়েছে। ভাষাশহীদদের এই আত্মদানে দেশবাসী তাদের প্রতি চিরকৃতজ্ঞ। কিন্তু আমরা পরবর্তী সময়ে তাদের এই আত্মত্যাগকে কৃতজ্ঞতার বন্ধনে আবদ্ধ করতে পারিনি।

ভাষা আন্দোলনের এত বছর পরে যখন বিশ্বের আনাচে-কানাচে অজস্র বাংলাভাষী ছড়িয়ে পড়েছে, তখনও আমরা বাংলা ভাষায় ইসলামকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছি। ইসলামের নান্দনিকতা ও সামগ্রিকতার সঙ্গে বিশ্ববাসীকে পরিচয় করিয়ে দিতে পারিনি। আমি মনে করি, এই ব্যর্থতার দায়ভার ইসলামী স্কলারদের। আমাদের সমাজের অনেককেই দেখা যায় যে, তারা ভালো আরবি বা ইংরেজি পারে না বলে তাদের দুঃখ আর আফসোস আছে অথচ তারা যে ভালো বাংলাও পারে না সে ব্যাপারে তাদের মনে কোনো দুঃখ নেই; অনুশোচনা নেই। এই অবস্থার পরিবর্তন দরকার। প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি এলেই কেবল আমাদের মাঝে ভাষাপ্রেমের চেতনা জাগ্রত হয়। একুশ আসে, একুশ যায়। কিন্তু সর্বস্তরে মাতৃভাষার চর্চা এখনও কাগুজেই রয়ে গেছে।

সুতরাং একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে বাংলা ভাষার স্বকীয়তা রক্ষা করা আমাদের একান্ত অপরিহার্য। এ লক্ষ্যেই আমাদের মাতৃভাষাকে জাগতিক ও পারলৌকিক কল্যাণের কাজে ব্যবহার করতে হবে। মাতৃভাষায় ইসলাম চর্চায় মনোযোগী হতে হবে। কোরআন-হাদিসসহ আরবি-উর্দু-ফার্সি ভাষার বিশাল ভাণ্ডার বাংলা ভাষায় অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরতে হবে।

এ ছাড়া পাঠ্যপুস্তকে ইসলামী ভাবধারা সমন্বিত সাহিত্য রচনা করে মাতৃভাষায় ইসলামের প্রচার-প্রসারে এগিয়ে আসতে হবে। সর্বোপরি মানবতার সার্বিক কল্যাণে মাতৃভাষার চর্চা, অনুশীলন, সংরক্ষণ ও উৎকর্ষ সাধনে সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, প্রত্যেক নবী-রাসূল (আ.) নিজেদের মাতৃভাষায় মানুষের কাছে ইসলামের বাণী পৌঁছে দিয়েছেন এবং বিপথগামী মানুষকে চিরসত্য ও সুন্দরের পথে আহ্বান করেছেন। নবীর ওয়ারিশ হিসেবে আলেম-ওলামাদের এই পথ ও পদ্ধতি ছেড়ে দেওয়ার কোনো অবকাশ নেই।

 

#চলনবিলের আলো / আপন


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর