পাবনার চাটমোহর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত এবং স্থানীয়দের কাছে ‘গরিবের ডাক্তার’ হিসেবে পরিচিত চিকিৎসক আলমগীর হোসেনের আকস্মিক বদলীর প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন সাধারণ মানুষ। তাদের দাবি—ডা. আলমগীরের বদলী বাতিল করে তাকে পুনরায় চাটমোহর হাসপাতালের দায়িত্বে ফিরিয়ে আনা হোক।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা একইসঙ্গে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ওমর ফারুক বুলবুলের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, সিন্ডিকেট সৃষ্টি ও রোগী হয়রানির অভিযোগ এনে তাকে অপসারণেরও দাবি জানান।
বুধবার (১০ ডিসেম্বর) সকাল ১০টার দিকে সচেতন নাগরিক সমাজ, চাটমোহরের ব্যানারে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান ফটকের সামনে অনুষ্ঠিত এই মানববন্ধনে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন আসাদুজ্জামান লেবু, মোতালেব হোসেন, তানভীর জুয়েল লিখন, শাহীন হোসেন, ফুলচাঁদ হোসেন শামীম, হাসানুজ্জামান সবুজ, ফয়সাল কবীর, সাজেদুর রহমান সেজান, ইমরান হোসেন, হাসিনুর রহমান, জান্নাতুন নাঈম জুঁইসহ অনেকে।
বক্তারা বলেন, হাসপাতালের জরুরি বিভাগে রোগীরা যথাযথ চিকিৎসা না পেয়ে অন্যত্র রেফার্ড হচ্ছেন। ভর্তি রোগীরাও সন্তোষজনক সেবা পান না। হাসপাতালের অভ্যন্তরে দুর্নীতি, কমিশননির্ভর পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও প্রশাসনিক অনিয়ম ইতোমধ্যেই ‘নিয়মিত দৃশ্য’ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তারা অভিযোগ করেন, ডা. আলমগীর হোসেন বহুদিন ধরে গরিব ও অসহায় রোগীদের বিনামূল্যে বা অল্প খরচে চিকিৎসা দিয়ে আসছিলেন। অপ্রয়োজনীয় কোনো টেস্ট না লিখে এবং কমিশনভিত্তিক সিন্ডিকেটে যোগ না দিয়ে তিনি সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করেন। এই সততা ও নীতিনিষ্ঠা কিছু অসাধু চিকিৎসক এবং টেস্ট-সিন্ডিকেটের স্বার্থে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। ফলে মাত্র এক বছরের মাথায় তাকে সুজানগর হাসপাতালে বদলি করা হয়।
বিক্ষোভকারীরা দাবি করেন, এসবের নেপথ্যে রয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ওমর ফারুক বুলবুল। দীর্ঘদিন ধরে তিনি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থেকে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন, এবং নিজের স্বার্থের বাইরে গেলে চিকিৎসকদের নানা ধরনের হয়রানির শিকার হতে হয়। তারা অভিযোগ করেন, একসময় রাজনৈতিক পরিচয়ের প্রভাব দেখালেও এখনো তিনি একই আচরণ বজায় রেখেছেন।
আগাম বিক্ষোভের খবর পেয়ে সেদিন সকালে হাসপাতালে না এসে অন্যত্র অবস্থান নেন ডা. বুলবুল। আর দাপ্তরিক কাজে হাসপাতালে আসা পাবনার সিভিল সার্জন ডা. আবুল কালাম আজাদকে এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ জনতা ঘেরাও করে।
বিক্ষোভকারীদের কথা শুনে সিভিল সার্জন আশ্বস্ত করেন, “তিন কার্যদিবসের মধ্যে ডা. আলমগীর হোসেনকে ফের চাটমোহর হাসপাতালে আনা হবে। ডা. বুলবুলের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে এবং তিনি আপাতত এখানে দায়িত্ব পালন করবেন না।”
এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ওমর ফারুক বুলবুল বলেন, “সকালে আমি হাসপাতালে ছিলাম না, বিকেলে আমার ডিউটি ছিল। কি ঘটেছে সেটি পুরোপুরি জানি না। আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ ওঠানো হয়েছে সেগুলো সত্য নয়। ডা. আলমগীরের বদলীর বিষয়ে আমার কোনো ভূমিকা নেই—আমি শুধু আমার দায়িত্ব পালন করেছি।”