মানবজীবনের শ্রেষ্ঠ নিয়ামত হলো জীবন ও স্বাস্থ্য। ইসলাম মানুষের জীবন ও দেহকে আল্লাহর এক মহামূল্যবান আমানত হিসেবে ঘোষণা করেছে। তাই নিজের জীবন রক্ষা করা এবং রোগ-ব্যাধি থেকে বাঁচার প্রচেষ্টা করা শুধু অনুমোদিতই নয়, বরং ইসলামী দায়িত্ব। আধুনিক যুগে টিকা বা ভ্যাকসিন হলো রোগ প্রতিরোধের একটি কার্যকর উপায়, যা মানুষের জীবন রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন—
“তোমরা নিজেদেরকে ধ্বংসের মধ্যে নিক্ষেপ করো না।”
(সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৯৫)
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় আলেমরা বলেছেন, নিজের শরীর বা জীবনকে বিপদে ফেলা হারাম। বরং সুস্থ থাকা ও রোগ থেকে বাঁচার জন্য সব বৈধ উপায় গ্রহণ করা ইসলামের নির্দেশ। টিকা গ্রহণ ঠিক তেমনি একটি বৈধ ও উপকারী পন্থা, যা নিজের ও সমাজের জীবন রক্ষায় সহায়ক।
আল্লাহ আরও বলেন—
“যে ব্যক্তি একজন মানুষের জীবন রক্ষা করল, সে যেন সমগ্র মানবজাতির জীবন রক্ষা করল।”
(সূরা আল-মায়িদাহ, আয়াত: ৩২)
টিকা নেওয়ার মাধ্যমে শুধু নিজের নয়, অন্যদেরও জীবন রক্ষা হয়। অর্থাৎ এটি একটি সামাজিক ও মানবিক দায়িত্বও বটে।
রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন—
“আল্লাহ তায়ালা কোনো রোগ দেননি, কিন্তু তার চিকিৎসাও দিয়েছেন। তাই তোমরা চিকিৎসা গ্রহণ করো, তবে হারাম জিনিস দিয়ে নয়।”
(সহীহ মুসলিম)
এই হাদীসের মর্ম হলো, ইসলাম চিকিৎসা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাকে উৎসাহ দেয়। টিকা চিকিৎসারই অংশ, যা রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। সুতরাং এটি গ্রহণ করা সুন্নাহ ও শরীয়তসম্মত।
অন্য এক হাদীসে নবী করিম (সা.) বলেন—
“রোগ আসার আগে প্রতিরোধ করো।”
(ইবনে মাজাহ)
এই বাণীর মাধ্যমে নবী করিম (সা.) আমাদের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। টিকা গ্রহণ হলো সেই প্রতিরোধেরই আধুনিক ও বৈজ্ঞানিক রূপ।
টিকা নেওয়া ইসলামি শরীয়তের দৃষ্টিতে একটি বৈধ ও কল্যাণকর কাজ। এটি নিজের, পরিবারের ও সমাজের সুরক্ষার প্রতীক। ইসলামী আইনের নীতিমালা অনুযায়ী “ক্ষতি দূর করা এবং জীবন রক্ষা করা” অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত। তাই টিকা গ্রহণ করা এক অর্থে ফরজে কিফায়া—অর্থাৎ সমাজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য এটি সামষ্টিক দায়িত্ব।
ইসলাম আমাদের শিখিয়েছে—“প্রতিরোধ চিকিৎসার চেয়ে উত্তম।” টিকা নেওয়ার মাধ্যমে আমরা যেমন রোগ থেকে বাঁচি, তেমনি অন্যদেরও নিরাপদ রাখি। তাই কোরআন ও হাদীসের আলোকে টিকা গ্রহণ শুধু চিকিৎসা নয়, বরং এক ইবাদত, এক দায়িত্ব—নিজেকে ও সমাজকে রক্ষা করার নামেই।