সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৩৬ অপরাহ্ন

ই-পেপার

আলোচিত স্বাস্থ্যখাতের ডন মিঠু ও হামিদুলের ইন্ডাস্ট্রি দখলের গল্প

প্রতিনিধির নাম:
আপডেট সময়: সোমবার, ৬ জুলাই, ২০২০, ১১:৩৫ পূর্বাহ্ণ

চলনবিলের আলো অফিস:

স্বাস্থ্যখাতের যে কোনো অনিয়মের গোড়া খুঁজতে গেলেই অবধারিতভাবে চলে আসে মিঠু সিন্ডিকেটের নাম। সিন্ডিকেটের এই মিঠু হলেন মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠু। স্বাস্থ্যখাতের সর্বত্র তার অদৃশ্য জাল ছড়ানো। প্রায় তিন দশক ধরে বিছানো এই জাল দিনে দিনে আরো পোক্ত হয়েছে, আর হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন বরাবরেই মতোই আড়ালে থাকা মিঠু। অভিযোগ আছে, এখনো মিঠুর অঙ্গুলি হেলানো ছাড়া স্বাস্থ্যখাতে কোনো কেনাকাটা হয় না।

২০১৬ সালে বিশ্ব তোলপাড় করা পানামা পেপারস কেলেঙ্কারিতে যে ৩৪ বাংলাদেশির নাম উঠে এসেছিল, তাদের একজন এই মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠু। দেশ থেকে যারা হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন তাদেরই নাম ছিল ওই তালিকায়। তারপর কিছুদিন মিঠুর ব্যাপারে চলে তথ্যানুসন্ধান। সেসময় তার বিরুদ্ধে নন-সাবমিশন মামলা করেছিল দুদক। প্রাথমিক তদন্তের পর রহস্যজনক কারণে মামলার কার্যক্রম থেমে যায়!

স্বাস্থ্যখাতের ওপর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ থাকলেও মিঠু কখনোই সামনে আসেননি। বেশিরভাগ সময় দেশের বাইরে থেকেই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। ৪ বছর আগের ওই প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, নামে-বেনামে দেশে মিঠুর ১৬টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সক্রিয়। তবে লেক্সিকোন মার্চেন্ডাইজ এবং টেকনোক্র্যাট লিমিটেড নামে দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই মূলত ৯০ শতাংশ যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হয়।

সূত্র জানায়, স্বাস্থ্যখাতের শীর্ষ পদগুলোতে যারাই আসেন তারা কিছুদিন পর মিঠুর সিন্ডিকেটের অংশ হয়ে যান। তাদের মাধ্যমেই স্বাস্থ্যসংশ্লিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠানে যন্ত্রপাতির প্রয়োজন না থাকলেও চাহিদা তৈরি করা হয়। শুরু হয় টেন্ডার কারসাজি। মিঠুর প্রতিষ্ঠানের বাইরে কেউ টেন্ডারে অংশ নিতে পারে না, কিংবা নিলেও যাচাই পর্বে বাতিল হয়ে যায়।

এরপরই শুরু হয় আসল লুটপাট। নিম্নমানের মালামাল গছিয়ে দেওয়া হয় অস্বাভাবিক দামে। চীন বা ভারতের তৈরি মালামাল চালিয়ে দেওয়া হয় ইউরোপ-আমেরিকার মালামালের কথা বলে। গত দুই দশক ধরে এটাই হয়ে আসছে। সেসব অকেজো আর নিম্নমানের যন্ত্রপাতির ‘ফল’ ভোগ করছে দেশের কোটি কোটি মানুষ।

মিঠুর গ্রামের বাড়ি রংপুরের গঙ্গাচড়ার মহিপুর ইউনিয়নে। ২০১৬ সালে দুদক তার বিরুদ্ধে যে তদন্ত শুরু করেছিল, সেখানে তার পরিচয় দেওয়া হয়েছে ঢাকা সেন্ট্রাল ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালের চেয়ারম্যান হিসেবে। এর বাইরেও বেনামে রংপুরসহ দেশের আরো তিনটি হাসপাতালের মালিকানা রয়েছে মিঠুর কব্জায়।

জানা যায়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতর, স্বাস্থ্য অধিদফতর, সিএমএসডি, ওষুধ প্রশাসন, স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যুরো, স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ, জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, নার্সিং অধিদফতর, প্রতিটি মেডিকেল কলেজ ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ সব স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে আছে মিঠুর বিশ্বস্ত এজেন্ট। এদের মাধ্যমেই স্বাস্থ্যখাতে চলে মিঠুর লুটপাটের দৌরাত্ম্য।

আরো জানা যায়, ২০০৫ সালে একজন গার্মেন্টস মালিককে ধোঁকা দিয়ে একটি সোয়েটার ফ্যাক্টরী লিখে নেয় আলোচিত ঠিকাদার মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠু । গার্মেন্টস মালিককে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে কোন টাকা দেয়নি । বিক্রিত সোয়েটার ফ্যাক্টরীর টাকা মালিককে না দেওয়ার ওযুহাতে নানা রকম তালবাহানা করে্ । এবং পরে এই মিঠু ওই মালিককে ভয়-ভীতি দেখায় এবং জীবননাশের হুমকি দেয় । অসহায় মালিক উপায়ান্ত না দেখে জীবন বাঁচানোর তাগিদে নীরব থাকতে বাধ্য হন । এর মধ্যে মিঠু ওই গার্মেন্টসের মালিকের স্বাক্ষর জাল করে ব্যাংকের লোকের সহযোগীতায় ওরিয়েন্টার ব্যাংক নয়া পল্টন শাখা থেকে ১০ লাখ টাকার অধিক লোন উত্তলোন করে ।এই ঘটনা গার্মেন্টস মালিক ২০০৮ সালের দিকে জানতে পারে ।তারপর মিঠুর সাথে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তার সাথে একদিন ফোনে কথা হয় । এবং তাকে ঐ লোনের কথা বললে মিঠু ঐ লোন পরিশোধের আশ্বাস দেয় ।

দুই/তিন মাস পরে ব্য্ংকের চাপে আবারও মিঠুর সাথে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে সে আর ফোন রিসিভ করে নাই । পরে গার্মেন্টস মালিক মিঠু’র বিরুদ্ধে এনএসআই’তে দুর্নীতির অভিযোগ দেন । সেখানেও ঐ মিঠু উচ্চপদস্হ কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে ফেলেন ।এনএসআই থেকে গার্মেন্টস মালিককে তলব করে বলেন আপনারা দুইপক্ষ পরামর্শ করে সমস্যা সমাধান করে নেন । তখন গার্মেন্টস মালিক বুকের ব্যাথা বুকে নিয়েই ঘরে ফিরতে বাধ্য হন । ২০০৯/২০১০ সালে ওরিয়েন্টাল ব্যাংকের নাম পরিবর্তন হয়ে মালেশিয়ার একটি ব্যাংকের নামে রূপান্তরিত হয় । এবং ব্যাংকের বারং বার চাপের কারণে ঐ ব্যাংকেই সুদ-আসলে ১৭ লাখ টাকা ঐপূর্বের গার্মেন্টস মালিক তার এই লোন পরিশোধ করতে বাধ্য হন ।

বিভিন্ন গনমাধ্যমে ও টিভি’তে যখন মিটু’র খবর প্রচার হচ্ছে তখনই মিঠু’র ব্যবসায়ীক অংশীদার হামিদুল হক চৌধুরী’র সাথে ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, মিঠু এখন আমেরিকায় আছে ।হামিদুল হক চৌধুরী’র পরিচয় জানা যায় সে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী কর্নেল ফারুকের নিকট আত্মীয় । হামিদুল হক চৌধুরী’র বাড়ি দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ি উপজেলায় ।

হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, মিঠুর সমস্ত সম্পত্তি তার আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও ব্যবসায়ী অংশীদারদের নামে আছে । তাছাড়া আমেরিকাতেও তার টাকা-পয়সা, বাড়ি-গাড়ির পাহাড় আছে । এবং তিনি আরো বলেন, আপনারা মিডিয়া এবং সরকারের কেউই মিঠু’র বা আমাদের কিছু করতে পারবে না ।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর