কবি সামসুল আলম মন্ডল পাবনা জেরার চাটমোহর উপজেলার নিমাইচড়া ইউনিয়নের চিনাভাতকুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন। পিতা মরহুম লবু মন্ডল ও মাতা মরহুমা সুমতির কোল আলো করে ১৯৫৩ সালের ১ জানুয়ারি চলনবিলের ছাওয়ালদহের পাড়ে চিনাভাতকুর গ্রামের মন্ডল পরিবারে তার জন্ম হয়।
কবি সামসুল আলম মন্ডল বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে হোসেন আলী স্যার সপ্তাহে একদিন গানের আসর বসাতেন সেখানে আমরা আব্দুল আলীম, মীনা হামিদ এবং আব্দুল জব্বারের গান প্রতিযোগিতা করে গাইতাম। সেখান থেকেই আমি গানের প্রতি অনুপ্রাণিত হই। দেশ স্বাধীনের পরে অষ্টমনিষা উচ্চ বিদ্যালয় খুলে দেওয়া হলে ছাত্রদের সারি সারি দাঁড়িয়ে পিটি প্যারেড শেষে জাতীয় সংগীত গাওয়ার প্রস্তুতি চলছিল কিন্তু কোন ছাত্র জাতীয় সংগীত বলতে রাজি না। অবশেষে আমার চাচা আব্দুস সাত্তার মন্ডল আমার হাত ধরে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের জন্য সকলের সামনে হাজির করল সমস্ত ছাত্র এবং শিক্ষকগণ আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। ভয়ে আমার হাত পা কাপছে তবুও সাহস করে নির্ভুল সুরে সংগীত পরিবেশন করলাম সবাই শুনে মুগ্ধ হয়ে আমাকে বাহবা জানালো। এখান থেকে আমার গানের জগতে যাত্রা শুরু। শ্রদ্ধেয় মোসলেম উদ্দিন স্যার আমাদের বাংলা পড়াতেন। পল্লীকবি জসীম উদ্দীনের কবর কবিতা আবৃত্তি করতেন, কবিতাটি প্রথম শোনার পর খুব ভালো লাগে এবং স্যারকে অনেক দিনই অনুরোধ করতাম কবিতাটি আবৃত্তি করতে তিনি স্বতঃস্ফূর্তভাবে আবৃত্তি করতেন এবং ব্যাখ্যা করতেন। এটি স্যারের প্রিয় কবিতা ছিল। এখান থেকেই আমার কবিতা পড়া এবং লেখার প্রতি আকৃষ্ট হই। সেই সময় নিমাইচড়া ইউনিয়ন অর্থাৎ চলনবিলের একটি অংশ ছিল সাংস্কৃতিক অঙ্গনের কেন্দ্র। খুদে শিল্পীর অভিভাবকগণ যখন আমাকে একটি গান লিখে দেওয়ার জন্য বলতো তখন ভালো লাগতো এবং লিখে দেওয়ার চেষ্টা করতাম মাঝে মাঝে পথ চলতে দূর থেকে যখন আমার লেখা গানের কলি মাইক এর মাধ্যমে উচ্চ-স্বরে ভেসে আসত তখন অবাক হতাম বিধাতাকে ধন্যবাদ জানাতাম। ১৯৯০ সালে দেওয়াল পত্রিকায় আমার প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়। ২০১০ সাল থেকে বিভিন্ন যৌথ কাব্যগ্রন্থে আমার কবিতা প্রকাশ হয়। ঠিক সেই বছরেই আমার লেখা এবং সুর করা গানে অডিশন দিয়ে নির্মল কুমার রায় বাংলাদেশ টেলিভিশনে শিল্পী নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে আমি বাংলাদেশ টেলিভিশনে গীতিকার হিসেবে তালিকাভুক্ত হই। এভাবেই এ জগতে আমার পথ চলা।
এ পর্যায়ে আসার জন্য যারা আমাকে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন তারা হলেন, মো: মঞ্জুরুল ইসলাম মনি, কে এম জাহাঙ্গীর কবির, মো: সেলিম উররাজি, মো: খায়রুল আলম, প্রভাষক ইকবাল কবির রঞ্জু , মুহাইমিনুল হালিম, মো: নুরুজ্জামান সবুজ, স্বাধীন মাহবুব, মোস্তফা জামান আরেফিন প্রমুখ।
আমার লেখা গানের জন্য আমি যাদের কাছে ঋণী তারা হলেন, বাবু প্রেমানন্দ সাহা, নির্মল চন্দ্র রায়, ওস্তাদ মানিক সিংহ। সর্বশেষে এ বছর যার অক্লান্ত প্রচেষ্টায় কাব্যগ্রন্থ “হৃদয়ে চলনবিল” এবং “শিয়াল মামা” পাঠকদের হাতে তুলে দিতে যাচ্ছি তিনি হলেন আমার প্রাণপ্রিয় মো: জিল্লুর রহমান ।
আলোচিত তারুণ্য ও যৌবনের কবি সামসুল আলম মন্ডল অষ্টমনিষা উচ্চ বিদ্যালয়ে ১০ শ্রেণী পর্যন্ত লেখা পড়া করেন। এত অল্প পড়া শুনা করেও কৃতিমুখ কবি সামসুল আলম মন্ডল এখন তার চিনাভাতকুরসহ চলনবিলের গর্ব ও অহংকার।
কবি সামসুল আলম মন্ডল তার কবিতার মাধ্যমে মানুষের হৃদয়ে নিজের জন্য গচ্ছিত একটি স্থান তৈরি করে নিতে চায়। বড় হওয়ার প্রবল স্বপ্নই সামসুল আলম মন্ডলকে স্থান করে দিয়েছে সময়ের তুমুল জনপ্রিয় কবির কাতারে। কবিতা লিখে চলেছেন বিভিন্ন স্থানীয় দৈনিক প্রত্রিকা গুলোতে।
প্রসঙ্গত, এ কবি যখন সপ্তম শ্রেণির ছাত্রাবস্থায় কবিতা লেখা শুরু করে তখন সুযোগ ও মাধ্যমের বঞ্চনায় কোনো কবিতা প্রকাশই করতে পারেনি তৃণমূল পর্যায়ের অবহেলিত এ কবি। উপযুক্ত মাধ্যম ও সুযোগের অভাবে এ প্রতিভাবান তরুণ কবির কাব্যপ্রতিভা অবহেলিতই থেকে গিয়েছিলো বহুদিন যাবৎ। একা পথ চলতে যেয়ে বারেবারে ব্যর্থ হয়েছে সামসুল আলম। তার এই পথচলায় এগিয়ে আসেনি কেউ-ই। তবু সামসুল আলম রঙিন স্বপ্ন বুনে গিয়েছিলো বুকের ভেতর। নিজের ভেতরই আটকে রেখেছিলো প্রতিভার বোবা কান্না। মানুষের উপহাস তাই প্রবলভাবে আক্রান্ত করেছিলো তখনকার উঠতি এ কিশোরকে। কিন্তু সেই উপহাসই হয়তো এ কবির ভেতরের সুপ্ত আগুনকে পুষে রেখেছিলো খুব যত্ন করে। যেই ভেতরের পোষ্য আগুনকেই সঙ্গী করে ১৯৯০ সালে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ দেওয়াল পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
তার সম্পাদিত সাহিত্য পত্রিকার মধ্যে রয়েছে ‘কলার ভুড়া’ ‘চলনবিলের জন্ম ’ ‘আমার গাঁও’ (প্রকাশকাল, মার্চ ২০১২-১৩) সহ প্রায় ৭৪ কবিতা বিভিন্ন সময় প্রকাশিত হয়।
#চলনবিলের আলো / আপন