মোঃ আমজাদ হোসেন রতন, নাগরপুর(টাঙ্গাইল)প্রতিনিধিঃ
টাঙ্গাইলের নাগরপুরে গয়হাটা ইউনিয়ন ১ নং ওয়ার্ডের কলিয়া গ্রামের বিশু মিয়ার সাথে এমন ঘটনাটি ঘটেছে। মোঃ বিশু মিয়া (৫০) পিতা-মৃত সোনা উল্লাহ, গ্রাম -কলিয়া, উপজেলা- নাগরপুর, জেলা -টাঙ্গাইল, এমন অভিযোগ করেছেন।
বিশু মিয়া জানান, আমি একজন সহজ, সরল, শান্তিপ্রিয়, আইন মান্যকারী লোক। আমি পূর্বে দিনমজুর ও হতদরিদ্র ছিলাম বটে, অতি কষ্টে ধার-দেনা ও আমার জীবিকা নির্বাহ করার একমাত্র অবলম্বন ঘোড়ার গাড়ি, ঘোড়া সহ বিক্রি করে আমার একমাত্র ছেলে কামরুলকে ২০০৮ সনে বিদেশ পাঠাই। আমাদের সংসার কষ্টে-সৃষ্টে ভালোই চলছিল, আমার ছেলের কষ্টার্জিত টাকা তার বউয়ের নামে, একাউন্টে ১১ লক্ষ টাকার উপরে পাঠায়(যাহার মানি রিসিট রয়েছ)। উক্ত টাকা আমার বউমা কোথায়, কিভাবে খরচ করে তাহা আমার জানা নেই। আমি একজন হার্ড ও শ্বাসকষ্টের রোগী, আমার চিকিৎসা বাবদ ছেলে টাকা পাঠালে সে টাকাও আমাকে দেয়নি। বিধায় বিভিন্ন সময়ে কথা কাটাকাটি হয়েছে বটে, ইতিপূর্বে ছেলে বিদেশ হতে ছুটিতে আসলে তাহাকে উক্ত বিষয়ে অবগত করলে, ছেলের নিকট টাকার হিসাব দিতে না পারায়, তাদের মধ্যে মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়। উক্ত সুযোগে সুযোগ সন্ধানী, স্বার্থান্বেষী, প্রভাবশালী, শেখ শামসুল হক, পিতা মৃত তাজ মাস্টার তার সঙ্গীয় ও অনুসারী লোকজন নিয়ে, গত ৩/৪ মাস পূর্বে আমার বাড়িতে অনধিকার প্রবেশ করে। হুমকি-ধামকি দিয়ে আমার একমাত্র ছেলের বউকে বাড়ি হতে নিয়ে, তাহার বাড়িতে উঠায়। এবং আমাকে গ্রামছাড়া করে, আমাকে প্রাণে মারার হুমকি দেয়।
বিশু মিয়া আরও জানান, আমি এ ব্যাপারে গ্রামের মাতাব্বরদের নিকটে সুষ্ঠু বিচারের প্রার্থনা করলে কোন লোক সাহস না করায়, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালত টাঙ্গাইল, মোকাদ্দমা নং ১৪৭/২০২০, তাং ০৪-০২-২০২০, একটি মোকাদ্দমা করি। মোকদ্দমা আদালতে চলমান রয়েছে। এখানে উল্লেখ্য, আমার ছেলেকে গত প্রায় ১৭ বছর পূর্বে হরগোজ, সাটুরিয়া নিবাসী মোঃ আজাহার আলীর কন্যা মোসাম্মৎ মালা বেগম এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। মালা বেগম শেখ শামসুলের বড় ভাই মোঃ আহাদ মিয়া (অঃ প্রাপ্ত যুগ্ম সচিব) এর বাসায় গৃহকর্মী হিসাবে কাজ করিতো। সেই সুবাদে শামসুল তার প্রভাব খাটিয়ে আমার বাড়িতে অনধিকারচর্চা করে, আমার ছেলের বউকে নিয়ে যায়।
পর মুহূর্তে আমাকে বিভিন্ন শর্ত ও ভয় ভীতির কারণে আমি নিরুপায় হয়ে আমার নিজ বসতবাড়ি ত্যাগ করতে বাধ্য হই। এবং গত বোরো মৌসুমে আমার নিজস্ব. ৭৬ শতাংশ ভূমি ও বন্ধকি ১০৫ শতাংশ ভূমি এবং আমার একটি স্যালো মেশিন (ডিজেল চালিত) আবাদ করতে পারিনি, অনাবাদি রয়েছে। আমি একজন সাধারণ কৃষক মানুষ, কৃষিকাজ ও আবাদ না করায় ও বিভিন্ন কারণে এবারে প্রায় চার থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। সকল আবাদি জমি রয়েছে অনাবাদি। ঘরে খাবার মত ধান উঠাতে পারিনি।
মোঃ বিশু মিয়া আরো জানান, আমার অবস্থান বর্তমান ভালো ও পারিবারিক উন্নতি দেখে ঈর্ষান্বিত হয়ে, কতিপয় লোকজন আমাকে আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত ও সমাজে হেয় করার জন্য এরকম ঘৃণ্য-জঘণ্য ও অমানবিক কার্যক্রমে লিপ্ত রয়েছে। যা ইতিপূর্বে উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি, সহ-সভাপতিসহ ইউনিয়নের বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ বিষয়টি অবগত। আমি আমার ছেলের কষ্টার্জিত টাকা উদ্ধার, জমি চাষ না করতে পারায় ক্ষতি সাধিত হওয়া ও প্রভাবশালীর সঠিক বিচার দাবি করছি।
এ ব্যাপারে বিশু মিয়ার ছেলে কামরুলের স্ত্রী মালা বেগম জানান, আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা, আমি নিজেও একজন স্ব শিক্ষিত লোক। যখন যেভাবে টাকা এসেছে আমি উত্তোলন পূর্বক সংসারে দিয়েছি। টাকার হিসেব আমি রাখিনি, আমি প্রায় দীর্ঘ ১৭ বছর যাবৎ স্বামীর সংসার করে আসছি। আমাদের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে, যার বয়স ১৩ বছর। গত ৩/৪ মাস পূর্বে আমার স্বামী ছুটিতে বাড়িতে আসলে, কিছুদিন পর তার দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিজ বাড়িতে নিয়ে আসে। এরপর হতেই সংসারে ঝামেলার সৃষ্টি হয়। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মালা আরো জানান, স্বামী একাধিক বিয়ে করতেই পারে। তবে আমি প্রথম স্ত্রী হিসেবে আমার অধিকার আমি চাই, আমি স্বামীর সংসার করতে চাই।
এ ব্যাপারে মোঃ বিশু মিয়ার ছেলে কামরুল ইসলাম মোবাইল ফোনে প্রতিবেদককে জানান ও একটি লিখিত পত্রে অভিযোগ করেন, আমি আমার প্রথম স্ত্রীকে নিয়ে আমাদের সংসার ঠিকঠাক মতোই চলছিল। গত ৫/৬ বছর পূর্ব হতে আমার কষ্টার্জিত টাকা আমার প্রথম স্ত্রীর নামে পাঠালে সেই টাকাগুলো আমার বাবা-মা বা সংসারে ঠিকমতো না দেওয়ার কারণে আমি ছুটিতে এসে টাকা গুলোর হিসাব চাইলে সে জানায়, আমি যখন যেভাবে টাকা পেয়েছি টাকা উত্তোলন করে আপনার সংসারে দিয়েছি। আমার পুঁজি বলতে কিছুই নেই। এই সকল বিষয়ে আমার স্ত্রীকে চাপ দিলে সে, টাকার হিসাব দিতে ব্যর্থ হয়। আমার বিশ্বাস, আমার কষ্টার্জিত টাকা, প্রভাবশালী শেখ শামসুল সহ তার অনুসারী লোকজন টাকাগুলো হস্তগত করেছে। আমার পাঠানো টাকাগুলো আমার বাবা-মা বা সংসারের কোন কাজে ব্যবহার না হওয়া, টাকাগুলোর হিসাব চাইতে আমার সাথে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। আমি তাকে তালাক বা কোন শারীরিক নির্যাতন করিনি, আমার কষ্টার্জিত টাকা গুলো ফেরত পাইলে তাকে নিয়ে সংসার করতে বাধা নেই। আমি আমার টাকাগুলো ফেরত চাই।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত শেখ শামসুল হক জানান, আমার বড় ভাইয়ের বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করতো মালা, সে আমাদের আশ্রিতা। তার ভালো-মন্দ দেখার দায়িত্ব আমাদের, আমি নিজে ও আমার ভাইয়েরা মিলে আমার গ্রামের ছেলে কামরুলের সাথে বিবাহ দিয়ে থাকি। মালার বাবা-মা গরীব ও হতদরিদ্র, তারা এখানে আসে না। আমাদের দায়িত্ববোধ থেকেই, মেয়েটা যাহাতে সুখ শান্তিতে স্বামী সংসার করতে পারে সেই পদক্ষেপ নিতে চেষ্টা করছি মাত্র। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, মালা বেগম আমাদের সন্তান বা আত্মীয় না হলেও আমাদের বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করতো। সে কারণে তাহার ভালো-মন্দ দেখার দায়িত্ব আমাদের রয়েছে, সেই অধিকারে তাকে আমার বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছি, মালা যাতে স্বামীর সংসার করতে পারে, সুখে থাকতে পারে সে ব্যাপারে আমাদের পদক্ষেপ নিতে হবে।