সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:২০ পূর্বাহ্ন

ই-পেপার

মরার উপর খরার ঘা বরিশালের অজ্ঞাতরোগ মারা গেছে ১৬ হাজার মুরগী

প্রতিনিধির নাম:
আপডেট সময়: মঙ্গলবার, ১৯ মে, ২০২০, ৫:২৯ অপরাহ্ণ

রুবিনা আজাদ, আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল:
করোনার প্রভাবে সর্বস্ত্র হারিয়ে পথে বসার উপক্রম হয়ে দাঁড়িয়েছে জেলার অধিকাংশ উপজেলার মুরগীর ব্যবসার সাথে জড়িত খামারীদের। এরইমধ্যে আবার মরার উপর খরার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে গৌরনদী উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের তিনটি গ্রামের ২০টি খামারে। ওইসব খামারে অজ্ঞাতরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রায় ১৬ হাজার সোনালী মুরগী মারা গেছে।

সোমবার সকালে সরেজমিনে জানা গেছে, গত তিনদিনে গৌরনদীর ইল্লা, ডুমুরিয়া ও কমলাপুর গ্রামের ২০টি খামারে এসব মুরগী মারা গেছে। খবর পেয়ে উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থর পরিদর্শন করে প্রতি খামার থেকে মরা মুরগীর নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষার জন্য বরিশাল গবেষণাগারে প্রেরন করেছেন।

সূত্রমতে, খাঞ্জাপুর ইউনিয়নে ছোট বড় শতাধিক পোল্ট্রি মুরগির খামার রয়েছে। এরমধ্যে প্রায় ৭০টি সোনালী লেয়ার মুরগির খামার রয়েছে। যার অধিকাংশ খামার ইল্লা, ডুমুরিয়া ও কমলাপুর গ্রামে। ইল্লা গ্রামের খামারী ভূমিহীন লিপি বেগম (৩৫) জানান, তার অসুস্থ্য স্বামী ফরিদ হাওলাদারসহ তিন সন্তান নিয়ে তিনি সাইদুল সরদারের বাড়িতে ভাড়া থাকেন। স্থানীয় ডিলার শংকর তফাদারের কাছ থেকে বাকিতে ৪ হাজার সোনালী মুরগীর বাচ্চা ও খাবার এনে তিনি দুটি খামারে পালন করেন। করোনাভাইরাসের কারণে মুরগি বিক্রির সময় হলেও তা বিক্রি করতে পারেননি। বর্তমানে প্রতিটি মুরগি এক কেজির উপরে ওজন রয়েছে। শনিবার সকালে মুরগির খাবার দিতে গিয়ে তিনি দেখতে পান খামারের অধিকাংশ মুরগি মরে পরে রয়েছে। বাকি মুরগির শরীর কাঁপছে এবং মুখ দিয়ে পানি ঝড়ছে। এভাবে কিছু সময় পর পর আক্রান্ত মুরগি কাঁপতে কাঁপতে মারা যায়।

একই গ্রামের খামারি শহীদ হাওলাদার (৪৫) কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, ‘ধার দেনা ও ডিলারের কাছ থেকে বাকিতে ঈদে বিক্রির লক্ষ্য নিয়ে পাঁচটি মুরগির খামারে সাত হাজার মুরগি পালন করি। গত দুই দিনে আমার ছয় হাজার মুরগি মারা গেছে। বাকি এক হাজার মুরগি নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করে দিয়েছি। শেষ সম্বল হারিয়ে আমি এখন পুরোপুরি নিঃস্ব হয়ে গেছি।

একইভাবে জানিয়েছেন, ডুমুরিয়া গ্রামের জসিম সরদার (৪৮), কমলাপুর গ্রামের জহুর আলী (৫০), ইল্লা গ্রামের লিটন ফকির (৪২), সোহরাব মৃধা (৩৮), সোহেল হাওলাদার (৪৫)সহ অসংখ্য খামারিরা।

ইল্লা গ্রামের খামারি নাজমুল ঘরামী অভিযোগ করে বলেন, আমার খামারের মুরগি মরা শুরু করলে উপজেলা প্রাণী সম্পদ কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের ফোন দিয়ে বিষয়টি জানানো সত্বেও কোন চিকিৎসক খামারে আসেননি।

স্থানীয় ডিলার ও খামারি শংকর তফাদার বলেন, আমার বাড়িতে ব্যক্তিগত তিনটি খামারে প্রায় ছয় হাজার এক কেজি ওজনের সোনালী মুরগি ছিলো। এরমধ্যে পাঁচ হাজারেরও অধিক মুরগি অজ্ঞাত রোগে মারা গেছে। এছাড়া অধিকাংশ খামারে আমি ৩০ লাথ টাকার উপরে বাকিতে বাচ্চা ও খাবার সরবরাহ করেছি। নিজের ও খামারিদের মুরগি মারা যাওয়ায় এখন আমার মরার উপর খরার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া গত তিনদিনে মুরগি মারা যাওয়ার খবর শুনে কোম্পানীর পাওনা টাকা পরিশোধের জন্য প্রতিনিয়ত মোবাইল ফোনে চাঁপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। এ অবস্থায় সরকার সহযোগিতা না পেলে আমিসহ খামারীদের ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব হবেনা।

গৌরনদী উপজেলা প্রাণী সম্পদ কার্যালয়ের ভেটেরিনারী সার্জন ডাঃ মাছুম বিল্লাহ ডাক্তার না যাওয়া প্রসঙ্গে বলেন, খবর পেয়ে অজ্ঞাত রোগে মুরগি আক্রান্ত তিনটি গ্রামের খামারগুলো পরিদর্শন করা হয়েছে। খামারীদের যে ক্ষতি হয়েছে তা অপূরনীয়। প্রতি খামার থেকে মরা মুরগীর নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষার জন্য বরিশাল গবেষনাগারে প্রেরন করা হয়েছে। গবেষনাগারের রিপোর্ট পাওয়ার পর অসুস্থ্য মুরগির প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেয়া হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর