পাবনার ভাঙ্গুড়া পৌরসভায় ইউ ড্রেন নির্মাণে নানা অনিয়মসহ নিম্নমানের পাথর ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে দুই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। ৩৪ লক্ষ টাকা ব্যায়ে পৌরসভার কালিবাড়ি বাজারে ইউ ড্রেন নির্মাণ করছেন সামিয়া এন্টারপ্রাইজের মালিক সাজেদুর ও বিশ্বাস লিমিটেডের মালিক মুনজুরুল ইসলাম। ভাঙ্গুড়া পৌরসভা এই নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করছে। এসব নিম্মামানের সামগ্রী দিয়ে পৌরসভার দায়িক্তরত ইঞ্জিয়ার হাবিবুর রহমানের সামনে প্রকাশ্যে চলছে নির্মাণ কাজ। অদৃশ্য কারণে পৌরসভার কর্মকর্তারা এসব অনিয়ম দেখেও নিরব থাকায় বাড়ছে জনমনে ক্ষোভ।
ভাঙ্গুড়া পৌরসভার প্রকৌশলী সূত্রে জানা গেছে, ২ কোটি ৯৮ লক্ষ ২৫ হাজার ৮ শত ৪৫ টাকা ব্যায়ে পৌরসভার বিভিন্ন স্থানে কার্প্রেটিং রাস্তা ও আরসিসি রাস্তাসহ একটি আর সিসি ইউ ড্রেন ও ৪টি ইউ ড্রেন নির্মানের জন্য ফেব্রুয়ারি মাসে দরপত্র আহবান করেন ভাঙ্গুড়া পৌরসভা। তার মধ্যে একটি আর সিসি ইউ ড্রেন নির্মাণে ব্যায় ধরা হয়েছে ৩৬ লক্ষ ৬ হাজার ১২১ টাকা। এ ড্রেন নির্মাণের কাজ পান সামিয়া এন্টারপ্রাইজ ও বিশ্বাস লিমিটেড। সামিয়া এন্টারপ্রাইজের মালিক ঠিকাদার সাজেদুল ও বিশ্বাস লিমিটেড এর মালিক মুনজুরুল ইসলাম যৌথভাবে এ কাজ বাস্তবায়ন করবেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ভাঙ্গুড়া কালিবাড়ি বাজার মুক্তিযোদ্ধা ভবন হইতে কালীবাড়ি বাজার মোয় পর্যন্ত ২০০ মিটার নির্মাণ কাজের ঢালাই চলছে। সেখানে ব্যবহার করা হচ্ছে নিম্মানের পাথর ও বালি। ইসটিমেটে ধরা আছে বোল্ডার ভাঙ্গা কালো পাথর কিন্তু তারা ব্যবহার করেছে সিংগেজ ভাঙ্গা পাথর ও মরা পাথর ভাঙ্গা। ইউ রড ১২মিলি ১০ইঞ্চি পরপর ধরা হয়েছে কিন্তু ব্যাবহার হচ্ছে ১২ ইঞ্চি থেকে ১৫ ইঞ্চি পরপর। চিলাপে ব্যাবহার করার কথা ১০ ইঞ্চি রড ৯ ইঞ্চি পর পর কিন্তু তারা ব্যবহার হচ্ছে ১২ থেকে ১৪ ইঞ্চি পর পর। রাস্তার পাশেই স্তুুপ করে রাখা হয়েছে বালি, পাথর ও বিভিন্ন নির্মাণ সামগ্রী। সেই নিম্নমানের সিংগেজ ভাঙা, মরা পাথর ভাঙা এবং কিছু পাথর পরিমানের চেয়ে ছোট আবার কিছু পাথর পরিমানের চেয়ে বড়। এই নিম্নমানের পাথর ও বালি দিয়েই প্রায় ৯০% কাজ শেষ হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যক্তি বলেন, এই ইউ ড্রেন নির্মাণের প্রায় ৯০% কাজ শেষ হয়েছে নিম্নমানের পাথর ও রড ব্যবহার করে। এক ঠিকাদার স্থানীয় প্রভাবশালি আওয়ামীলীগ নেতা আর এক ঠিকাদার সাবেক এমপি পুত্র। তাই কাজ খারাপ হচ্ছে দেখেও আমরা কাউকে কিছু বলতে পারছি না।
সামিয়া এন্টারপ্রাইজের মালিক ঠিকাদার মো: সাজেদুর রহমান বলেন, এমপির পুত্র ইবনুল হাসান শাকিল ও ভাঙ্গুড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইমরান হাসান আরিফ কাজ করেছে এই বিষয়ে আমার জানা নেই।
এ বিষয়ে ঠিকাদার এমপির পুত্র ইবনুল হাসান শাকিল পলাতোক থাকায় ও ভাঙ্গুড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইমরান হাসান আরিফ দেশের বাইরে থাকায় তাদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
নিম্নমানের কাজের বিষয়টি স্বীকার করে দায়িত্বরত পৌর ইঞ্জিনিয়ার হাবিবুর রহমান বলেন, যারা কাজ করছিলেন তারা খুব শক্তিশালী হওয়ায় আমি কিছু বলতে পারেনি। তবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে নিম্নমানের কাজের বিষয়ে অবগত করেছিলাম।
বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত পৌর ইঞ্জিনিয়ার খোরশেদ আলম বলেন, নিম্নমানের পাথর ও এস্টিমেট অনুযায়ী রড ব্যাবহার না করায় কাজ বন্ধ করে দিয়ে ছিলাম। বর্তমানে নতুন পাথর ও এস্টিমেট অনুযায়ী রড ব্যাবহার করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও পৌরসভার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাসমীয়া আক্তার রোজী বলেন, সরোজমিনে তদন্ত করে কার্জকরি ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে।