রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:২২ অপরাহ্ন

ই-পেপার

পহেলা বৈশাখ পালনে ইসলাম কি বলে? – মাওলানা: শামীম আহমেদ 

চলনবিলের আলো ডেস্ক:
আপডেট সময়: রবিবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১:৫৫ অপরাহ্ণ

বর্তমান  বাংলা নববর্ষ তথা পহেলা বৈশাখ পালনের আধুনিক সংস্করণের কিছুটা নমুনা এই রকম, রবীন্দ্রসংগীতের মাধ্যমে বর্ষবরণ, বৈশাখী মেলা, রমনার বটমূলে পান্তা-ইলিশের ভোজ, জীবজন্তু ও রাক্ষস-খোক্কসের প্রতিকৃতি নিয়ে গণমিছিল, নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা, হাসি-ঠাট্টা ও আনন্দ উপভোগ, সাজগোজ করে নারীদের অবাধ বিচরণ ও সৌন্দর্যের প্রদর্শনী, সহপাঠী সহপাঠিনীদের একে অপরের দেহে চিত্রাংকন।
সেই সাথে মঙ্গল প্রদীপ ও আনন্দ শোভাযাত্রা মিছিল।
পহেলা বৈশাখ
উদ্দেশ্য কি,,,? এগুলো সারা মঙ্গল বয়ে আনবে। এই দিন ভালো খেলে সারা বছর ভালো খাওয়া যাবে। কেউ যদি এই ধারণা পোষণ করে, নববর্ষ পালনের সঙ্গে কল্যাণের কোনো সম্পর্ক রয়েছে, তবে সে শিরকে লিপ্ত হল, অর্থাৎ আল্লাহর সঙ্গে অংশীদার স্থির করল।
যদি সে মনে করে যে, আল্লাহ এই উপলক্ষ দ্বারা মানবজীবনে কল্যাণ বর্ষণ করেন, তবে সে ছোট শিরকে লিপ্ত হল।
আর কেউ যদি মনে করে যে নববর্ষের আগমনের এই ক্ষণটি নিজে থেকেই কোনো কল্যাণের অধিকারী, তবে সে বড় শিরকে লিপ্ত হল, যা তাকে ইসলামের সীমার বাইরে নিয়ে যাবার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে।
আর এই শিরক এমন অপরাধ যে, শিরকের ওপর কোনো ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করলে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতকে চিরতরে হারাম করে দেবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন, ‘নিশ্চয়ই যে কেউই আল্লাহর অংশীদার স্থির করবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতকে হারাম করে দিয়েছেন, আর তার বাসস্থান হবে অগ্নি।
এবং যালিমদের জন্য কোনো সাহায্যকারী নেই।’ (সুরা আল-মায়িদাহ, আয়াত :৭২  মনে রাখতে হবে, পহেলা বৈশাখ পালন করা মুসলমানদের জন্য হারাম! “পহেলা বৈশাখ” নামক বিধর্মীয় সংস্কৃতি জীবন থেকে ঝেড়ে ফেলুন।
এটি বাঙালি সংস্কৃতিরঅবিচ্ছেদ্য অংশ নয় এটি হিন্দু সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। হিন্দু ধর্মালম্বীরা তা পালন করতে চায় করুক, সেটা করার পূর্ণ স্বাধীনতা তাদের আছে।
নাচ, গানের অনুষ্ঠান করে আর “এসো হে বৈশাখ এসো এসো” গান করে ঋতুর পুজো করা হিন্দুদের সাজে, একজন মুসলিমের না।
পহেলা বৈশাখ বাঙালির জীবনে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে এইকথা বলে বিধর্মীদের একটি চক্র এই প্রথাটিকে এতদিন ধরে টিকিয়ে রেখেছে।
পহেলা বৈশাখে হিন্দুরা ঘটপূজা করে থাকে, শরীরে উল্কি অঙ্কন করে থাকে, নওরোজ বা নববর্ষ পালন করে থাকে এবং নওরোজ বা নববর্ষ পালন উপলক্ষে পান্তা-গান্ধা খাওয়া, গানবাজনা করা, র্যালী করা, জীব-জানোয়ারের মুখোশ পরা, নববর্ষের সম্মানার্থে মিছিল করা, কদুর খোলের তৈরি একতারা ডুগডুগি বাজিয়ে নেচে নেচে হৈহুল্লো করা, কপালে চন্দন গুঁড়ার ত্রিশালী ছাপ দেয়া, পুরুষরা ধুতি ও কোণাকাটা হিন্দুদের জাতীয় পোশাক পরা, মেয়েরা লাল পেড়ে সাদা শাড়িসহ হাতে রাখি বাঁধা, শাঁখা পরা, কপালে লাল টিপ, সিথিতে সিঁদুর দেয়া, বেপর্দা, বেহায়া হওয়াসহ হাজারো হারাম কাজে মশগুল হয়।
মূলত, উল্লিখিত আমলগুলোর কোনোটাই শরীয়তসম্মত বা দলীলভিত্তিক নয়। বরং প্রত্যেকটাই মনগড়া, বানানো, দলীলবিহীন অর্থাৎ শরীয়তবিরোধী।
বিশেষ করে ইসলামে নববর্ষ বলতে কিছু নেই।
আর নববর্ষ উপলক্ষে টাকা-পয়সা খরচ করাও ইসলামী শরীয়তে জায়িয নেই; বরং কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।
 সুতরাং ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলা নববর্ষ সংক্রান্ত যাবতীয় অনুষ্ঠান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এজন্য যে এতে নিম্নোলিখিত চারটিশ্রেণীর ইসলাম বিরোধী বিষয় রয়েছে: ১. শিরকপূর্ণ অনুষ্ঠানাদি, চিন্তাধারা ও সংগীত ২. নগ্নতা, অশ্লীলতা, ব্যভিচারপূর্ণ অনুষ্ঠান ৩. গান ও বাদ্যপূর্ণ অনুষ্ঠান ৪. সময় অপচয়কারী অনর্থক ও বাজে কথা এবং কাজ এ অবস্থায় প্রতিটি মুসলিমের দায়িত্ব হচ্ছে নিজে এগুলো থেকে সম্পূর্ণরূপে দূরে থাকা এবং বাঙালি মুসলিম সমাজ থেকে এই প্রথা উচ্ছেদের সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো নিজ নিজ সাধ্য ও অবস্থান অনুযায়ী। ‘সূরা আলে ইমরান’-এর ৮৫ নম্বর আয়াত শরীফে মহান আল্লাহ পাক বলেন,  ﻭَﻣَﻦ ﻳَﺒْﺘَﻎِ ﻏَﻴْﺮَ ﺍﻟْﺈِﺳْﻠَﺎﻡِ ﺩِﻳﻨًﺎ ﻓَﻠَﻦ ﻳُﻘْﺒَﻞَ ﻣِﻨْﻪُ ﻭَﻫُﻮَ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺂﺧِﺮَﺓِ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﺨَﺎﺳِﺮِﻳﻦَ অর্থ: যে ব্যক্তি ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন নিয়ম নীতি গ্রহন করলো, তা কখনো গ্রহন যোগ্য হবে না এবং সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভূক্ত হবে।
(সুরা আল ইমরান- আয়াত শরীফ নং-৮৫) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখে, সে তাদের দলভুক্ত এবং তার হাশর-নশর তাদের সাথেই হবে।”
(সুনানে আহমদ, সুনানে আবূ দাউদ) এবার চিন্তা করে দেখুন ইহা পালন করলে কি পরিনতি হবে ? কোন এলাকা ব ১। ইমাম হাফস কবীর রহমতুল্লাহি বলেন: ক) “নওরোজ বা বছরের প্রথম দিন উপলক্ষে যদি কেউ একটা ডিমও দান করে, তবে তার ৫০ বৎসরের আমল থাকলে তা বরবাদ হয়ে যাবে” খ) “যে ব্যক্তি নওরোজের দিন এমন কিছু খরিদ করল যা সে পূর্বে খরিদ করত না, এর মাধ্যমে সে যদি ঐ দিনকে সম্মান করতে চায় তাহলে সে কাফের হয়ে যাবে।”
 হাম্বলি মাযহাবের ফিকাহর গ্রন্থ ‘আল-ইকনা’ তে বলা হয়েছে- “কাফিরদের উৎসবে যোগদান করা, সেই দিন উপলক্ষে বেচাবিক্রি করা ও উপহার বিনিময় করা হারাম”।
উপরক্ত দলিল দেখলে এটা সহজেই বুঝা সম্ভব, থার্টি ফাস্ট নাইট, পহেলা নববর্ষ, পহেলা মুহররম শুধু পালন করা হারাম নয়, বরং ঐ দিবস উপলক্ষে কাউকে শুভেচ্ছা জানানো, কিংবা ঐ দিবসগুলো উপলক্ষে কোন অফার দিলে সেটা গ্রহণ করা, ঐ দিবস উপলক্ষে কেনাবেচা করা, খাদ্যগ্রহণ করা হারাম ও ক্ষেত্র বিশেষে কুফরী।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে এমন গর্হীত কাজ থেকে হেফাজত করুন। তথ্যসূত্রঃ (সূরা মায়িদা ৭২) (সুরা আলে ইমরান ৮৫) (সুরা জ্বীন ১৮) (সুরা ক্বছাছ ৮৮) (সুরা শু ‘আর ২১৩) (বুখারী ১/ ৩৭১,) (মুসলীম ২/৭৭) (ফাতওয়া রশীদিয়া ২৪০)


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর