সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ০৩:২৮ অপরাহ্ন

ই-পেপার

ভাঙ্গুড়ায় নামজারি, মিসকেসের কাজ করেন ভূমি অফিসের ঝাড়ুদার

চলনবিলের আলো ডেস্ক:
আপডেট সময়: বুধবার, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, ১১:৩৫ অপরাহ্ণ

রাত ৯ঃ৪৫ মিনিট। ভূমি অফিসের কম্পিউটারে নামজারির কাজ করছেন ঝাড়ুদার রুবেল আহমেদ। টেবিলের ওপর রয়েছে বিভিন্ন মৌজার আরএস ও এসএ খতিয়ান বই। নামজারির জন্য অনলাইনে আবেদন করে তৈরি করেছেন ফাইলের হার্ডকপি। রেকর্ডরুম ও ভূমি সহকারি কর্মকর্তার কক্ষ থেকে বিভিন্ন তথ্য নিচ্ছেন। সম্প্রতি একাধিক রাতে ভূমি অফিসে গিয়ে রুবেল আহমেদের এমন কর্মকাণ্ড দেখা যায়।

অভিযোগ রয়েছে প্রায়ই গভীর রাত পর্যন্ত পাবনার ভাঙ্গুড়া পৌর ভূমি অফিসে নামজারি ও মিস কেসসহ বিভিন্ন ধরনের কাজ করেন অস্থায়ী ঝাড়ুদার রুবেল আহমেদ। ভূমি মালিকদের সঙ্গে আর্থিক চুক্তিতে বিভিন্ন কাজ করে দেন। অভিযোগ আছে এসব আর্থিক সুবিধার ভাগ নেন অফিসের অন্যান্য কর্মচারীরা। ভূমি অফিসের একজন অস্থায়ী ঝাড়ুদারের কাছে অফিসের দায়িত্ব প্রদান করায় ভূমি অফিসের গুরুত্বপূর্ণ নথি ও অফিসের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত স্থানীয় বাসিন্দারা। অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলায় পাঁচটি ইউনিয়ন ও একটি পৌর ভূমি অফিস রয়েছে।

এসব ভূমি অফিসের আওতায় ৭০টি মৌজা রয়েছে। মৌজার ভূমি সম্পর্কিত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও পুরাতন নথি রয়েছে ইউনিয়ন ও পৌর ভূমি অফিসে। প্রত্যেক অফিসে রয়েছে একজন করে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা ও একাধিক কর্মচারী। এসব অফিসে কর্মচারীরা শুধু অফিসিয়াল সময়ে নথিপত্রের কাজ করলেও ভূমি অফিসের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ করেনি। এতে প্রায় এক যুগ আগে উপজেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্তে প্রত্যেক ভূমি অফিসে একজন করে ঝাড়ুদার অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়। প্রত্যেক ঝাড়ুদারকে উপজেলা প্রশাসন থেকে মাসিক ৩ হাজার টাকা করে ভাতা দেওয়া হয়। সেসময় ভাঙ্গুড়া পৌর ভূমি অফিসে নিয়োগ দেওয়া হয় শরৎনগর বাজারের বাসিন্দা সাবেক গ্রাম পুলিশ মতিউর রহমানের ছেলে রুবেল আহমেদকে।

নিয়োগকালীন শর্তে এসব ঝাড়ুদার শুধুমাত্র অফিস চলাকালীন সময়ের শুরুতে এবং শেষে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ করবে। এদিকে ভূমি অফিসের কর্মকর্তারা এসব ঝাড়ুদারদের অফিস চলাকালীন সময়েও অফিসে বিভিন্ন কাজ করাতে শুরু করেন। পর্যায়ক্রমে ঝাড়ুদাররা অফিসের স্টাফ হিসেবে ভূমি মালিকদের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে বিভিন্ন আর্থিক সুবিধা নেন। ক্রমেই তারা জড়িয়ে পড়ে অনৈতিক লেনদেনে। এমনকি অফিসের কর্মকর্তারাও এসব ঝাড়ুদারদের দিয়ে ঘুষের টাকা আদায় করেন। প্রায় দেড় বছর আগে উপজেলার অষ্টমনীষা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারি ভূমি কর্মকর্তা মুরারী মোহন অস্থায়ী ঝাড়ুদার কোহিনুর খাতুনকে দিয়ে ভূমি মালিকদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা ঘুষ আদায় করেন বলে অভিযোগ ওঠে।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তদন্তে গেলে ইউনিয়নের অনেক ভুক্তভোগী লিখিতভাবে ঘুষ লেনদেনের বিষয়টি জানান। যদিও পরবর্তীতে এই অভিযোগে মুরারী মোহনকে বদলি করা ছাড়া অন্য কোন ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অফিসের পাশের কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, রাত নয়টার পরে ঝাড়ুদার রুবেল অফিসে আসেন। রাত এগারোটা, বারোটা, কখনো একটা পর্যন্ত কাজ করেন। একজন অস্থায়ী ঝাড়ুদারের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অফিসের সবকিছু নিয়ন্ত্রণে দেয়ায় হতবাক হয়েছি। এটা কোনভাবেই কাম্য নয়।

অভিযোগের বিষয়ে ঝাড়ুদার রুবেল আহমেদ বলেন, আমি এলাকার ছেলে। তাই সবাই পরিচিত হওয়ায় আমাকে দিয়ে কাজ করায়। কাজের চাপের কারণে রাতে একা এসে অফিসে কাজ করি। সবাই নিষেধ করলে অফিসে আর আসবো না রাত্রে। একজন ঝাড়ুদার হিসেবে আপনি অফিসিয়াল কাজ করতে পারেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, অফিসের সবাই আমাকে কাজ করতে বলেন। তাই করি। ঘুষ লেনদেনের বিষয় তিনি অস্বীকার করেন।

ভাঙ্গুড়া পৌর ভূমি অফিসের সহকারী কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন বলেন, রুবেল ঝাড়ুদার হলেও কাজ ভালো বোঝে। তাই অফিসিয়াল কাজে সহযোগিতা করে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য অফিসের সব কক্ষের চাবি থাকে তার কাছে। তবে রাতে তাকে একাকী অফিসে এসে কাজ করতে বলা হয়নি। এখন থেকে রুবেলের রাতে অফিসে প্রবেশ বন্ধ করে দেবো।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরাফাত হোসেন বলেন, অফিসের কর্মকর্তা ছাড়া কোন কর্মচারী অফিস খুলে একাকী কাজ করা যুক্তিসঙ্গত নয়। আর সেটা রাতে তো কোনভাবেই করা যাবে না। এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com