মোঃ কামাল হোসেন যশোর থেকে:
খুলনা মহানগরীর আটরা গিলাতলার ইস্টার্ণগেট এলাকায় প্রতিপক্ষের এলোপাতাড়ি গুলিতে ও বিক্ষুব্ধদের গণপিটুনিতে চারজন নিহতের ঘটনাটির নেপথ্যে দু’টি কারণ খুঁজে পেয়েছে পুলিশ। তবে অস্ত্রধারীদের বিরুদ্ধে সীমাহীন অভিযোগ এলাকাবাসীর। প্রথমত, স্থানীয়দের বিরোধীতায় মশিয়ালী দাখিল মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির নির্বাচনে সভাপতি হতে না পারায় ক্ষুব্ধ ছিলেন খানজাহান আলী থানা আ’লীগের সদ্য বহিস্কৃত নেতা শেখ মোঃ জাকারিয়া। দ্বিতীয়ত, বৃহস্পতিবার এলাকার নিরীহ ও সাদামনের মানুষ হিসেবে পরিচিত মোঃ মজিবুর রহমানকে অস্ত্র দিয়ে ফাঁসিয়ে পুলিশে সোর্পদ করে জাকারিয়ার ভাই নগর ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি জাফরীন হাসান|
এলাকাবাসীর অভিযোগ, বৃহস্পতিবার রাতে এঘটনার প্রতিবাদ করতে গেলে তাদরেকে লক্ষ্য করে বাড়ীর ভিতর থেকেই এলোপাতাড়ী গুলিবর্ষণ করেন শেখ জাকারিয়া, মিল্টন, জাফরীন হাসান ও কবির। সহোদরদের গ্রেফতার করতে পুলিশের অভিযান চলছে বলে কেএমপি’র উদ্ধর্তন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। পুলিশ ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলেন জানা গেছে, সম্প্রতি মশিয়ালী দাখিল মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির নির্বাচনে শেখ মোঃ জাকারিয়ার বিপক্ষে স্থানীয়রা সকলেই ঐক্যবদ্ধ ছিলেন। নানা অন্যায়-অকর্মে অতিষ্ঠ ছিলেন এলাকাবাসী। ক্ষমতাসীন দলের নেতা হওয়ায় প্রতিবাদের সাহস হতো না কারো। স্থানীয় আ’লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীরাও তঠস্থ থাকতো জাকারিয়া ও তার ভাইদের ভয়ে। মাদ্রাসা কমিটির সভাপতি পদাধিকার বলে মশিয়ালী ঈদগাহ, জামে মসজিদ, এতিমখানা ও দাখিল মাদ্রাসা এসব প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ন্ত্রণের সুযোগ হয়।
মর্যাদার এ আসনটিতে আসীন হতে না পাওয়ার মনোকষ্টে স্থানীয় কয়েকজন মুরব্বীকে প্রকাশ্যে হুমকিও দিয়েছিলেন শেখ জাকারিয়া। প্রায়ই মুরব্বীদের সাথে অসৌজন্যমূলক ব্যবহার করায় এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের দানা বাঁধে। এরমধ্যে বৃহস্পতিবার এলাকার নিরীহ সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত মোঃ মজিবুর রহমানকে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে ফাঁসিয়ে পুলিশে সোর্পদ করে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা জাফরীন হাসান। সন্ধ্যা থেকে এলাকাবাসী ঐক্যবদ্ধ হচ্ছিল এঘটনার প্রতিবাদ করতে। রাতে স্থানীয়রা সম্মিলিতভাবে জাকারিয়া-জাফরীনদের বাড়ীতে যায়, কে মজিবুরকে পুলিশে দিল সেটা জানতে এবং কিভাবে এই অভাবী মানুষটাকে ছাড়ানো যায় সে বিষয়ে আলোচনা করতে। কিন্তু জাকারিয়া ও তার ভাইরা ভেবে নেয় এলাকাবাসী হামলা চালাতে আসছে। বাড়ীর কাছাকাছি পৌঁছালে কিছু বুঝে উঠার আগেই নির্বিকারে গুলি বর্ষণ করতে থাকে ওরা। বাড়ীর ভিতর থেকে আচমকা কয়েকটি অস্ত্রের গুলিবর্ষণের ঘটনায় দিকশূণ্য এলাকাবাসী দিকবিদিক ছুটাছুটি করে।
ঘটনাস্থলেই ঢলে পড়েন ৮/১০জন। এরপর মসজিদের মাইকে ঘটনাটি কেউ একজন ঘোষণা দেয়; পরে এলাকা বিপুল সংখ্যক মানুষ একত্রে জাকারিয়াদের বাড়ীতে ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর করে অগ্নিসংযোগ করে। মুহুর্তেই ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়েন অস্ত্রধারীরা। সেই থেকে লাপাত্তা তারা। এদিকে, শুক্রবার সকালে যশোরের অভয়নগর এলাকা থেকে জাহাঙ্গীর নামের একজনকে আটক করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে প্রতিপক্ষের গুলিতে তিনজন ও অপরপক্ষের গণপিটুনিতে একজন মিলে মোট ৪জন নিহতের ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থলে কেএমপি’র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) এসএম বজলুর রহমান বলেন, ঘটনার পর থেকেই অভিযান চলছে।
ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত এখনো কাউকে আটক করা যায়নি; তবে সন্দিগ্ধ একজনকে অভয়নগর এলাকা থেকে আটক করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এলাকাবাসীর দাবিতে প্রেক্ষিতে মজিবুরকে ফাঁসানোর বিষয়টি আমলে নিয়ে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। খানজাহানআলী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেন, খুমেক হাসপাতালে ময়না তদন্ত শেষ হয়েছে, নিহতদের মরদেহ আজ সন্ধ্যার মধ্যেই পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। অন্যদিকে, অভিযান চলছে।