রবিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ১০:০৫ অপরাহ্ন

ই-পেপার

উল্লাপাড়ায় অবৈধ পুকুর খননে ইউএনও কর্তৃক সহযোগিতা, অনৈতিক সুবিধা নিচ্ছে পুলিশ ও জনপ্রতিনিধি

চলনবিলের আলো নিজস্ব প্রতিবেদক:
আপডেট সময়: বৃহস্পতিবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২২, ৮:৪৮ অপরাহ্ণ

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে উর্বর ফসলি জমিতে অসংখ্য পুকুর খননের কারণে জলাবদ্ধতায় অনাবাদি হয়ে পড়েছে হাজার বিঘা কৃষি জমি। চাষাবাদ করতে না পেরে নি:স্ব হয়ে পড়েছে শত শত পরিবার। উল্লাপাড়া কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্র জানায়, পুকুর খননের কারণে উপজেলার মোট আবাদি জমির এক শতাংশ সম্পূর্ণরুপে হারিয়ে গেছে। আগামী ফাল্গুন-চৈত্র মাস পর্যন্ত পানি জমে থাকায় অনাবাদি থাকছে কয়েক শ বিঘা কৃষি জমি। এ কারণে ফসলের গড় লক্ষ্যমাত্রা ঠিক রাখা কোনো ভাবেই সম্ভব হবেনা।

কিন্তু এতো কিছু ক্ষতির আশঙ্কা থাকার পরও থামছে না কৃষিজমিতে নির্বিচারে অপরিকল্পিত পুকুর খনন। এ বছর এলাকার কয়েকটি চক্র শতাধিক পুকুর খননের প্রস্তুতি নিয়েছে। রাতদিন চলছে খনন যন্ত্র (এস্কাভেটর) দিয়ে পুকুর খননের কাজ। এলাকাবাসী বারবার উপজেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েও পাচ্ছেন না কোনো প্রতিকার। আর এ প্রতিকার না পাওয়ার পেছনে উঠে এসেছে উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: উজ্জ্বল হোসেনের নাম। বাদ পড়েনি থানা পুলিশ ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের নাম। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইউএনও মো: উজ্জ্বল হোসেন কর্তৃক উত্তম সরকার নামে এক চিহ্ণিত ভূমিদস্যূর পকুরে মাছ ধরার দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় ওই এলাকায় নানা আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়েছে।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের কচিয়ার বিল এলাকায় প্রায় পাঁচ বছর আগে পুকুর খনন শুরু হয়। দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। ক্রমাš^য়ে এলাকায় চলতি বছর পর্যন্ত পায় ৪ শ পুকুর খনন হয়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে হাটিকুমরুল-বনপাড়া মহাসড়কের ২ নং ব্রিজ দিয়ে পানি প্রবাহের পথ। রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো: আকবর আলী জানান, জলাবদ্ধতার কারণে ফসলহানী হওয়ায় নিরুপায় কৃষক পুকুর খননের দিকে ঝুঁকে পরছে বাধ্য হয়েই। এ সুযোগ প্রভাবশালীরা উচ্চমূল্যে লীজ নিয়ে বড় বড় পুকুর খনন করেই চলেছেন। দক্ষিণ পূঁস্তিগাছা গ্রামের কৃষক নূরুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, প্রভাবশালীরা কচিয়ার বিলে ৫০ বিঘা আয়তনের দুটি পুকুর খনন করছেন। যা নিয়ে তিনি সহ এলাকাবাসী গণ স্বাক্ষর করে পুকুর বন্ধের আবেদন জানিয়ে, গত ২৫ সেপ্টেম্বর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। কিন্তু তাতে করে আজো কোনো প্রকার প্রতিকার মেলেনি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সলঙ্গা থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো: রফিকুল ইসলাম হিরো নিজেই বৃহৎ আকারের পুকুর খনন করছেন। এ প্রসঙ্গে রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: রফিকুল ইসলাম হিরোর কাছে জানতে চাওয়া হলে, তিনি বলেন,-আমার বাপের জমিতে আমি পুকুর কাটবো এতে কার কি!

রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের সংলগ্ন দক্ষিণ পাশের ইউনিয়ন বাঙ্গালা। এ ইউনিয়নের মোহনপুর, বয়রা হয়ে চেংটিয়ার শৈল ধূপরিয়া বিল। এ বিল দিয়েই মূল চলনবিলে প্রবাহিত হয় উপজেলার উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলের পানি। অথচ এ বিলের মাঝে পানি প্রবাহের পথেই ধরইল গ্রামের বাসিন্দা, চিহ্ণিত ভূমিদস্যূ উত্তম সরকার লীজ নিয়ে শত বিঘার ২টি পুকুর খনন করে। দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। এ সুযোগে উত্তম গং এলাকার আরো অন্যান্য কৃষকদের জমি লীজ নিয়ে, ওই বিলে আরো ১শ বিঘার পুকুর খনন চলমান রেখেছেন। এ বিষয়ে এলাকার কৃষক বারবার অভিযোগ করলেও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: উজ্জ্বল হোসেন তা আমলে নেননি। বরং অভিযোগ ছুটির দিনগুলোতে দেখা যায় তিনি উত্তম সরকারের পুকুরে হুইল দিয়ে মাছ ধরেন। বড় বড় রুই কাতলা মাছ গাড়িতে তুলে নিয়ে যান। অথচ ওই পুকুরের সংলগ্ন মাত্র ৫ ফুট দুরুত্বে কৃষি জমিতে উত্তম সরকার আরেকটি শত বিঘার নতুন পুকুর খনন করছে। তিনটি খননযন্ত্র দিয়ে চলছে এ কর্মযজ্ঞ।

চেংটিয়া গ্রামের কৃষক মো: আব্দুল জলিল অভিযোগ করে বলেন, এ মাঠে তার ৬ বিঘা আবাদি জমি রয়েছে। জলাবদ্ধতার কারণে শ্রমিক দিয়ে কচুরি পানা সাফ করছি। এ বছরে এসব জমিতে আর সরিষার আবাদ করা সম্ভব হবেনা। এসব পুকুর খনন করা হলে স্থায়ী জলাবদ্ধতায় আমার জমিতে আর কোনো প্রকার ফসলই হবেনা।

সরেজমিনে চেংটিয়া গ্রামের শৈল ধুকুরিয়া বিলে গিয়ে দেখা শত বিঘা আয়তনের একটি পুকুর খনন চলমান রয়েছে। এ সময় সাংবাদিদের দেখে এগিয়ে আসেন ওয়ার্ড আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি মো: ফজলুর রহমান। তিনি নিজেকে উত্তম সরকারের পার্টনার পরিচয় দিয়ে বলেন, ইউএনও তাদের পুকুরে মাছ ধরেন, এ কারণে তিনি কিছু বলবেন না। উল্লাপাড়া থানা পুলিশ কেও টাকা দেয়া আছে। বাঙ্গালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কেও ম্যানেজ করা আছে। এ কারণে কোনো সমস্যা নেই।
চেয়ারম্যান মো: সোহেল রানার কাছে, এ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে, তিনি তা অস্বীকার করে বলেন, আমার কাছে কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি। পুকুর খননের কোনো চিত্র চোখেও পরেনি।

পুকুর খননে ক্ষতির দিক নিয়ে উল্লাপাড়া কৃষি অফিসার সূবর্ণা ইয়াসমীন সুমি বলেন, এ উপজেলায় মোট আবাদি জমির পরিমান ৩২ হাজার ৫শ ৮৫ হেক্টর। এরমধ্যে গড়ে এক ভাগ কৃষিজমি পুকুর খননে হারিয়ে গেছে।যার পরিমাণ ৩শ ২৫ দশমিক ৮৫ হেক্টর।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: উজ্জ্বল হোসেন বলেন, উত্তম সরকার একজন সফল মৎস্য ব্যবসায়ী। তাকে ভূমিদস্যূ বলা সমীচিন নয়। তবে তার পুকুরে মাছ শিকার করে তাকে অবৈধ পুকুর খননে বৈধতা দিচ্ছেন কৃষকদের এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে, তিনি মুঠো ফোনটি কেটে দেন।

জেলা প্রশাসক ড: ফারুক আহম্মদ বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। জেনে ব্যবস্থা নেয়া হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর