বুধবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ১১:৫৫ অপরাহ্ন

ই-পেপার

ফরিদপুরে চেয়ারম্যানের ছত্রছায়ায় চায়না দুয়ারি জালের রমরমা ব্যবসার অভিযোগ, প্রশাসনের অভিযানও হচ্ছে ব্যর্থ

চলনবিলের আলো ডেস্ক:
আপডেট সময়: মঙ্গলবার, ৪ নভেম্বর, ২০২৫, ২:১৪ অপরাহ্ণ
ছবি: সম্প্রতি চেয়ারম্যান জুয়েলের বাড়িতে বিপুল পরিমাণ অবৈধ চায়না জাল জব্দ করে ধ্বংস করেছেন ফরিদপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সানাউল মোর্শেদ।
ছবি: সম্প্রতি চেয়ারম্যান জুয়েলের বাড়িতে বিপুল পরিমাণ অবৈধ চায়না জাল জব্দ করে ধ্বংস করেছেন ফরিদপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সানাউল মোর্শেদ।

পাবনার ফরিদপুর উপজেলায় সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে অবৈধ চায়না দুয়ারি জালের কারখানা গড়ে উঠেছে অগণিত। প্রশাসনের একাধিক অভিযান সত্ত্বেও বন্ধ হচ্ছে না এসব কারখানা। স্থানীয়দের অভিযোগ, এসব অবৈধ ব্যবসার পেছনে রয়েছেন ডেমরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জুয়েল রানা। তার প্রত্যক্ষ আশ্রয়েই ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রামে চলছে এই বিষাক্ত ব্যবসা।

জানা গেছে, চলতি বছরের ২২ অক্টোবর ফরিদপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সানাউল মোর্শেদের নেতৃত্বে প্রশাসনের একটি দল চেয়ারম্যান জুয়েল রানার বাড়িতে অভিযান চালায়। সেখান থেকে প্রায় ৭ লাখ টাকার নিষিদ্ধ চায়না দুয়ারি জাল জব্দ করা হয়। পরে জালগুলো আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয় এবং অবৈধভাবে মজুত রাখার দায়ে চেয়ারম্যানের স্ত্রী মোছা. মর্জিনা খাতুনকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এর আগেও ওই বাড়িতে প্রশাসনের অভিযান চালানো হয়েছিল। কিন্তু এরপরও জালের মজুত ও ব্যবসা বন্ধ হয়নি, বরং আরও বেড়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

স্থানীয়রা জানান, বর্তমানে ফরিদপুর উপজেলায় অন্তত তিন শতাধিক কারখানায় এই নিষিদ্ধ জাল উৎপাদন চলছে। ডেমরা ইউনিয়নেই রয়েছে ১০০ থেকে ১৫০টি কারখানা। প্রতিটি কারখানাই চেয়ারম্যান জুয়েলের ছত্রছায়ায় নিরাপদে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডেমরা গ্রামের এক ব্যবসায়ী বলেন, চেয়ারম্যানের অনুমতি ছাড়া এখানে কেউ জালের ব্যবসা করতে পারে না। তার নামেই চলছে এই অবৈধ কারখানাগুলো।

একই গ্রামের কৃষক রশিদ মিয়া বলেন, প্রশাসন আসে, অভিযান চালায়, জাল পুড়ায় তারপর আবার কয়েক দিনের মধ্যেই ব্যবসা শুরু হয়। মনে হয় কেউই ভয় পায় না।

নদীপাড়ের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, এই জাল পোনা মাছ পর্যন্ত ধ্বংস করে দিচ্ছে। নদীতে এখন আর আগের মতো দেশীয় মাছ নেই। প্রশাসন আসলেই একদিনের জন্য ভয় হয়, তারপর আবার আগের মতোই চলে।

ফরিদপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুজীত কুমার মুন্সি জানান, চায়না দুয়ারি জাল সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। এই জাল দিয়ে মাছ ধরলে নদী ও খালের পোনা ও ডিম ধ্বংস হয়, যা জলজ জীববৈচিত্র্যের জন্য মারাত্মক হুমকি। এই অবৈধ জালের উৎপাদন এবং বিক্রি বন্ধে আমরা নিয়মিত নজরদারি করছি।

ডেমরা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মো. জুয়েল রানা বলেন, “আমার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত। আমি কোনো অবৈধ ব্যবসাকে প্রশ্রয় দিই না। আমার ছোট ভাইয়ের কিছু জাল আমার বাসায় রাখা ছিল, সেটি নিয়েই এত বড় করে বলা হচ্ছে।”

তবে স্থানীয়রা চেয়ারম্যানের বক্তব্য হাস্যকর মন্তব্য করে বলেন, এলাকার সবাই এবং প্রশাসন ও জানে কারা এসব ব্যবসার পেছনে। প্রশাসন চাইলে সহজেই সব কারখানা বন্ধ করতে পারত, কিন্তু তারা শুধু অভিযান দেখিয়ে চলে যায়।

ফরিদপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সানাউল মোর্শেদ চেয়ারম্যানের বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ অবৈধ জাল জব্দ করে ধ্বংসের কথা স্বীকার করে বলেন, “আইন সবার জন্য সমান, সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কেউ অবৈধ জাল মজুত বা বিক্রি করতে পারবে না। করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আগামীতে এ ধরনের অভিযান আরও জোরদার করা হবে।”

এদিকে সচেতন মহলের দাবি, শুধু অভিযান নয় এখন প্রয়োজন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, যাতে কেউ আর নিষিদ্ধ জালের ব্যবসা করার সাহস না পায়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর