মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫, ০১:০৪ অপরাহ্ন

ই-পেপার

চৌহালীতে অসময়ে যমুনার ভাঙনে ১০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হুমকির মুখে  

মাহমুদুল হাসান, চৌহালী (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি:
আপডেট সময়: সোমবার, ৪ এপ্রিল, ২০২২, ৫:২০ অপরাহ্ণ

সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলায় যমুনা নদীতে আকস্মিকভাবে ভাঙন শুরু হয়েছে। ফাগুন ও চৈত্র মাসে শান্ত-স্নিগ্ধ যমুনা নদী হঠাৎ বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। গত দুই সপ্তাহে ভাঙনে সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার দক্ষিণ অঞ্চলে অর্ধশতাধিক ফসলী জমি ও বসতি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে গেছে মিটুয়ানী নৌঘাট সহ বিনানই বাজার। কিন্তু ভাঙন রোধে কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিকভাবে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ভাঙনের মুখে পড়েছে মিটুয়ানী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চর সলিমাবাদ সপ্রাবি, মাদরাসা,মিটুয়ানি  মাধ্যমিক,চর সলিমাবাদ বাজার,সুম্ভুদিয়া হাইস্কুল, ভুতের মোর ও আজিজিয়া ফাজিল মাদ্রাসা । ইতোমধ্যে বাঘুটিয়া ইউনিয়নের যমুনার তীরবর্তী গ্রামে ব্যাপক আকারে ভাঙন শুরু হয়েছে।
গত সোমবার থেকে ওই ইউনিয়নে যমুনা নদীর তীরে সরেজমিন দেখা গেছে, নিজের জমিতে লকলকিয়ে বেড়ে ওঠা বাড়ন্ত ধানসহ অন্যন্ন ক্ষেতের অপ্রাপ্ত গাছগুলো কাটছেন ঘুশুরিয়া গ্রামের কৃষক ফজলুল হক ও ছামাদ আলী ।  ফাল্গুন ও চৈত্র গরমে ঘামে নয়, তার চোখ দুটো ছলছল করছিল ভাঙন চিত্র দেখে। এই চিত্র এখন এই অঞ্চলের চারটি গ্রামের তিন-চার বছর আগে ঘুশুরিয়া গ্রামের কৃষক ফজলুল হক ও ছামাদ সিকদার এসে আশ্রয় নিয়েছেন বিনানই ও চরসলিমাবাদ গ্রামে। এ নিয়ে পাঁচবার নদী ভাঙনের কবলে পড়েছেন তারা। এক সময় পৈতৃক বসতবাড়ী আর কিছু জমি থাকলেও এখন তিনি উদ্বাস্তু। তাদের ভাগ্যকে যেন গ্রাস করেছে যমুনায়।
বাঘুটিয়া ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের আহবায় নজরুল ইসলাম বাবু জানান, শুষ্ক মওসুমে যমুনা নদীর এমন তাণ্ডব এলাকাবাসী আগে কখনো দেখেনি। দুর্গত মানুষের আহাজারি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা এবং সরকারি দফতরে পৌঁছাচ্ছে না।
কর্তৃপক্ষ ধরেই নিয়েছে, বর্ষা মওসুম ছাড়া অন্য সময় নদী ভাঙে না। তিনি আরো বলেন, এই অঞ্চলের পশ্চিম দিকে যমুনার মাঝখানে বিশাল চর জেগে ওঠায় ভাঙনের তীব্রতা এত ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
 মিটুয়ানী ও চর  সলিমাবাদের আব্দুর রহমান , ইয়াছিন মণ্ডল ও চাষী রফিক ইসলাম জানান, ভাঙন রোধে ব্যবস্থা না নেয়ায় আমরা কৃষকরা দিন দিন আরো নিঃস্ব হবো।
তারা আক্ষেপ করে জানান, এই চরে আশ্রিত এমন অনেক পরিবার রয়েছে, যারা এক সময় বিঘা বিঘা জমির মালিক ছিল। অথচ এখন তারা অন্যের জমিতে মজুরি খেটে সংসার চালাচ্ছে। টাকার অভাবে সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে পারছে না। নদীভাঙন রোধে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের সংস্কার কাজে শত কোটি টাকা খরচ করা হলেও যমুনা নদীর চৌহালীর দক্ষিণাঞ্চলের আগ্রাসন বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। প্রতিবছর পূর্বপাড়ের ফসলি জমি, বসতি, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা,  হাট বাজার আর জনপদ গ্রাস করছে যমুনায়।   তবে আমাদের মতো ভাঙন কবলিত নিঃস্ব মানুষগুলোর হাহাকার থেকেই যাবে।
এলাকার অনেকেই জানান, যমুনা নদী শুকিয়ে ছোট-বড় চরের সৃষ্টি হয়েছে। নদীটি এখন ছোট খালে পরিণত হয়েছে। ভাঙা-গড়ার খেলায় মেতে নদী আজ যেন ক্লান্ত তবু বন্ধ হচ্ছে না ভাঙন। জেগে ওঠা চরে এখন চাষ হচ্ছে বিভিন্ন ফসলের। ড্রেজিং করে স্রোতধারা চালু করলে নদীটি রক্ষার সাথে সাথে দুই পাড়ের বাসিন্দাদের ভাঙন থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে।
এ ব্যাপারে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম জানান, যমুনা নদীর ভাঙন রক্ষায় অর্থ বরাদ্দ হলে কাজ শুরু করা হবে।

 

 

#চলনবিলের আলো / আপন


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর