সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৩৮ পূর্বাহ্ন

ই-পেপার

যশোরে ছাত্রী অপহরনের ১২ দিন পেরিয়ে গেলেও উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ

প্রতিনিধির নাম:
আপডেট সময়: সোমবার, ২২ জুন, ২০২০, ১০:৪৮ অপরাহ্ণ

এম এস শবনম শাহীন(ক্রাইম রিপোর্টার):

যশোরের মনিরামপুরে শ্যামকুড় ইউনিয়নের একটি স্কুলের নবম শ্রেণীর এক ছাত্রী অপহরনের ১২ দিন পেরিয়ে গেলেও পুলিশ তাকে উদ্ধার করতে পারেনি। ওই ইউনিয়নের আমিনপুর গ্রামের আহাদ আলী খাঁর ছেলে বখাটে বুরহান উদ্দীন ১০ জুন বুধবার দুপুরে বাড়ির পাশের রাস্তার উপর থেকে ওই স্কুল ছাত্রীকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। বৃহস্পতিবার ছাত্রীর মা বাদী হয়ে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। অপহরণের শিকার স্কুল ছাত্রী খনপুর ইউনিয়নের বালিয়াডাঙ্গা খানপুর গ্রামের এক মালেশিয়া প্রবাসীর মেয়ে। সে আমিনপুর গ্রামে নানার বাড়িতে থেকে পড়ালেখা করতো। অভিযোগ উঠেছে অপহৃত স্কুল ছাত্রীকে উদ্ধার না করে মনিরামপুর থানার এসআই আশরাফুল আলম উল্টো অপহৃত স্কুল ছাত্রীর মা ও চাচাকে হুমকি ধামকি দিয়ে আপোশ-মিমাংসার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন। বাধ্য হয়ে গত বৃহস্পতিবার আমিনপুর গ্রামের স্থানীয় ইউপি সদস্য সিরাজুল ইসলামের বাড়িতে বসে এসআই আশরাফুলের উপস্থিতে আপোশ-মিমাংসা হয়। এঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

 

অপহৃত স্কুল ছাত্রীর মা জানান, প্রায় এক বছর পূর্ব থেকে স্কুলে যাওয়ার পথে বিভিন্ন সময় মেয়েটিকে কু-প্রস্তাব দিয়ে আসছিল শ্যামকুড় ইউনিয়নের আমিনপুর গ্রামের আহাদ আলীর বখাটে ছেলে বুরহান উদ্দীন। এতে রাজি না হওয়ায় সে প্রায়ই মেয়েটিকে তুলে নেয়ার হুমকিসহ বিভিন্ন প্রকার ভয়ভীতি দেখাতো। গত ১০ জুন বুধবার দুপুরে বাড়ির পাশের রাস্তার উপর থেকে অভিযুক্ত বুরহানসহ তার লোকজন মেয়েটিকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। ঘটনার পরদিন বৃহস্পতিবার অপহরণকারীদের বিরুদ্ধে মেয়েটির মা বাদী হয়ে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগটি তদন্তের দায়িত্ব পান মনিরামপুর থানার এসআই আশরাফুল আলম। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে ঘটনার ১২ দিন পার হলেও এসআই আশরাফুল মেয়েটিকে উদ্ধার না করে উল্টো অপহরণকারীদের পক্ষ নিয়ে স্কুল ছাত্রীর মা ও বড় চাচাকে আপোশ মিমাংসার জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। অপহৃত ছাত্রীর বড় চাচা জানান, দারোগার চাপে পড়ে আমরা মিমাংসার জন্য সিরাজ মেম্বরের বাড়িতে বসি। সেখানে সিদ্ধান্ত হয় ছেলে-মেয়ের বয়স কম থাকায় আপাতত রেজিষ্ট্রি বিয়ে পড়ানো সম্ভব না।

 

আর এ কারনে স্টাম্পে কাবিননামা হিসেবে দুই লাখ টাকা উল্লেখ করে কলেমা পড়িয়ে(গ্রাম্যভাবে) বিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। বিষয়টি নিয়ে সরেজমিনে রবিবার বুরহানের গ্রামের বাড়ি আমিনপুরে গেলে সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে অপহরণের শিকার স্কুল ছাত্রীকে বাড়ি থেকে অন্যাত্র সরিয়ে রাখা হয়। ছাত্রীর মা আরও জানান, এসআই আশরাফুলের উপস্থিতে এক প্রকার বাধ্য হয়ে আমরা আপোশ-মিমাংসা করি। আমি বার বার মেয়েটিকে আমার বাড়িতে নিয়ে আসতে চাইলে দারোগা আর মেম্বরের চাপে পড়ে আনতে পারিনি। তাছাড়া ওইদিন মিটিংয়ে একবারও ছেলে মেয়েকে হাজির করা হয়নি। তিনি আরও বলেন, মিটিং শেষে দারাগো একটি সাদা কাগোজে সহি নিয়ে বলেন এটি আপোশনামা। অপহৃত ছাত্রীর স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন, মেয়েটি নবম শ্রেণীতে পড়ে এবং তার রোল নং-১। সে বরাবরই মেধাবী। জানতে চাইলে শ্যামকুড় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও অপহরণকারী বুরহানের মামা সিরাজুল ইসলাম আপোশ-মিমাংসার কথা স্বীকার করে বলেন, মেয়ে আমাদের হাতে, ওরা মামলা করে কি করবে। শ্যামকুড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান (মনি) বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই।

 

এসআই আশরাফুল আলম তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, মেয়েটির মা অভিযোগ দিয়ে কয়েকদিন পরে এসে তা প্রত্যাহারের আবেদন জানায়। অপহরনকারী বুরহানকে খুঁজা এবং ওই স্কুল ছাত্রীকে উদ্ধার করার চেষ্টা করেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, পুলিশের আইনে এতো কভার করেনা। ওসব নিয়ে আমার কোন মাথা ব্যাথা নেই। মনিরামপুর থানার ওসি(তদন্ত) শিকদার মতিয়ার রহমান জানান, পুলিশ কোন আপোশে যেতে পারেনা। এবিষয়ে স্কুল ছাত্রীর মা যদি মামলা করে তবে আমরা মামলা নিবো।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর