খাগড়াছড়ির রামগড়ে ভালো নেই মৃৎশিল্পের দোকানীরা।করোনায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক না থাকায় বেঁচা কেনা অনেকটা ভাটা পড়েছে।পরিবার নিয়ে সংকটময় সময় পার করছেন।করোনায় সরকার থেকে ত্রাণ কিংবা প্রণোদনা পায়নি।বিক্রি না থাকায় দিনমজুরি করে সংসার চালাতে হচ্ছে বলে জানান তারা।পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকেই।
মৃৎশিল্প ব্যবসায়ীরা জানান,সাধারন মানুষের মাটির তৈরী জিনিসের উপর আগ্রহ কমে এসেছে।ব্যস্ততা তেমন নেই। মৃৎশিল্পের ব্যবসা একপ্রকার উৎসব কেন্দ্রিক হয়ে গেছে।কিন্তুু করোনায় সব ধরনের অনুষ্ঠান বন্ধ থাকায় তাদের ব্যবসা বাণিজ্যে ধ্বস নেমেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,রামগড় বাজারের মধ্যগলিতে পাশাপাশি ২টি মৃৎশিল্পের দোকান।কয়েকবছর পূর্বেও এই গলিতে ১০-১২টি মৃৎশিল্পের দোকান থাকলেও বর্তমানে রয়েছে মাত্র ২টি।আধুনিকাতার ছোঁয়া ও কালের পরিক্রমায় রামগড়ে বিলুপ্তির পথে এই মৃৎশিল্পের ব্যবসা।দোকানের ভেতর বেশির ভাগ অংশই ফাঁকা।দোকান গুলোর ছোট একটু অংশে হাঁড়ি, পাতিল, খোলা এবং মাটির ব্যাংক থাকলেও নেই মাটির তৈরী আধুনিক শিল্প কর্ম।এজন্য অর্থনৈতিক সংকটকে দায়ী করছেন তারা।
মৃৎশিল্পের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ জামাল উদ্দীন জানান,দীর্ঘ ২০বছর ধরে এই ব্যবসা করছেন।তার বাবাও এই ব্যবসার সাথে জড়িত ছিলেন।একধরনের মায়া কাজ করে বলে এই ব্যবসা ছাড়তে পারেন না। ২ছেলে এক মেয়ে সহ পরিবারে সদস্য সংখ্যা ৫জন।দোকানে বিক্রি নেই বললেই চলে।দোকান ভাড়া বাবদ প্রতিমাসে ১২০০টাকা দিতেই কষ্ট হয়ে যায়। তিনি আরো জানান,দৈনিক ৫০-৬০টাকাও বিক্রি হয়না।সংসার চালাতে দোকান বন্ধ রেখে ভাড়ায় রিকশা চালান। করোনায় বাজার পরিচালনা কমিটি কিংবা প্রশাসন থেকে কোন ধরনের ত্রাণ পাননি।
আরেক দোকানী মনা বড়ুয়া জানান,একসময় এই গলিতে ১০-১২টি মাটির তৈরী জিনিস পত্র বিক্রির দোকান ছিলো।বিক্রি কমে যাওয়ায় পেশা পরিবর্তনে বাধ্য হয়েছেন অনেকে।প্লাস্টিক এবং ম্যালামাইনের পণ্যের সহজলভ্যতা এবং টেকসই হওয়ায় মৃৎশিল্পের ওপর মানুষের আকর্ষণ কমে যায়।বর্তমানে শুধুমাত্র খোলা,মাটির ব্যাংক এবং দইয়ের পাত্র বিক্রি করে কোনো রকমে জীবিকা নির্বাহ করেন।
তিনি আরো জানান,পাশের জেলা ফেনীর ছাগলনাইয়া এলাকা থেকে তারা মাটির তৈরী জিনিসপত্র কিনে আনেন।বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব এবং পহেলা বৈশাখে তাদের বিক্রি কিছুটা জমজমাট থাকে।করোনায় বিক্রি একদম না থাকায় দোকানে কোন নতুন পণ্য তুলতে পারছেন না।এই ব্যবসা কে টিকিয়ে রাখতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
রামগড় বাজার পরিচালনা কমিটির সভাপতি হাশেম খাঁ মেম্বার বলেন,অভাবের তাড়নায় অনেকেই পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছেন।সরকার থেকে অনুদান না দিলে এই ব্যবসা টিকিয়ে রাখা অসম্ভব হয়ে যাবে।সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ফেলে এই ব্যবসা ঘুরে দাঁড়াবে বলে জানান তিনি।
রামগড় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিশ্ব ত্রিপুরা কে জানান,মৃৎশিল্প ব্যবসায়ীদের দু:খ দুর্দশার বিষয়ে তিনি অবগত ছিলেন না।ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা অনুদানের জন্য আবেদন করলে তিনি তাদের পাশে থাকবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন।
#চলনবিলের আলো / আপন