শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ০৪:১৭ পূর্বাহ্ন

ই-পেপার

রামগড়ে আমের ভালো ফলনের সম্ভাবনা, করোনা সংকট হতেপারে চাষীদের দুশ্চিন্তার কারন

বেলাল হোসাইন,খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি:
আপডেট সময়: শুক্রবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২১, ৫:৩৮ অপরাহ্ণ

খাগড়াছড়ির রামগড়ের এক সময়ে বনজঙ্গলে পরিপূর্ণ অনাবাদি পাহাড়ি টিলায় এখন সারি সারি আম বাগান। আম্রপালি, রুপালি,মল্লিকা, লেংরা, গোপালভোগ, মোহনভোগ প্রভৃতি জাতের থোকায় থোকায় আম দোল খাচ্ছে গাছে গাছে। ফলের ভারে নুয়ে পড়েছে আম গাছের ডালপালা। চারিদিকে আমের মুহুর্মুহু সুগন্ধি আবহাওয়া ভালো থাকায় পাহাড়ে এবার আমের ভালো ফলন হওয়ার সম্ভাবনা । তবে শেষ পর্যন্ত এই আম বাজারে পৌঁছানো যায় কিনা তা নিয়ে উদ্বেগ উৎকন্ঠিত পাহাড়ের আম চাষীরা। আমবাগানের মালিকদের পাশাপাশি ছোটখাটো বাগানের চাষিদের মাঝেও এখন অনিশ্চয়তা। রামগড় তৈছালা পাড়ার আম ব্যবসায়ী এবং আম বাগানের মালিক নুরুন্নবী জানান, আগামী ১৫ জুনের মধ্যে আম পাকতে শুরু করবে। তবে করোনার অভিঘাতে বাজার ব্যবস্থাপনায় সংকট হলে কৃষক এবং ব্যবসায়ীদের কপালে দুঃখ আছে। কোটি কোটি টাকার ফলন নষ্ট হয়ে যাবে। তাই গাছের আম যথাযথভাবে বাজারে পৌঁছানোর উদ্যোগ নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। রামগড়ের তৈছালা,পাতাছড়া, নাকাপা এবং খাগড়াবিল এলাকার পাহাড়ে আমের প্রচুর ফলন হয়। একসময় সনাতন পদ্ধতিতে আম চাষে ফলন বেশি পাওয়া যেত না। পরবর্তীতে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে বৈজ্ঞানিক উপায়ে চাষাবাদ শুরু হয়। এতে ফলন বেড়ে যায়। কয়েক বছর ধরে পাহাড়ে বৈজ্ঞানিকভাবে আম চাষ হচ্ছে। শত শত হেক্টর পাহাড়ে চলছে আমের উৎপাদন। আমবাগানের পাশাপাশি আনারস, লেবু, লিচুসহ নানা ফলে মধুফলের ভান্ডার হয়ে উঠছে পাহাড়। কিন্তু এসব ফল বাজারজাতে এবার সংকট তৈরি হতে পারে। করোনা পরিস্থিতিতে আম বিক্রির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা কতটুকু করা যাবে তা নিয়ে সংশয়ে সংশ্লিষ্টরা। বড় বড় বাগান কিংবা প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা আছে এমন বাগান মালিক নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বিশেষ উদ্যোগ নিলেও ছোটখাটো মালিকরা আছেন শঙ্কায়। বর্তমানে তীব্র গরম পড়ছে। পাকার মৌসুম শুরু হলে এই ফল কিভাবে বিক্রি করবেন, ন্যায্য দাম পাওয়া যাবে কিনা তা নিয়ে উদ্বেগে তারা। পরিবেশ ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি মৌসুমে রামগড়ের নানা স্থানে আম্রপালি, রাংগোয়াই (মিয়ানমারের জাত), থাই এবং স্থানীয় জাতের আমের ভালো ফলন হয়েছে। এদিকে কয়েকজন বাগান মালিক বলেন, গতবারের চেয়ে ফলন অনেক ভালো হয়েছে। আম ঠিকভাবে বাজারে পৌঁছানোর ওপর তাদের ভাগ্য নির্ভর করছে। তারা বলেন, চট্টগ্রাম থেকে বেপারিরা রামগড় এসে আম কিনে নিয়ে যায়। তবে বিশ্বব্যাপী করোনার যে সংকট দেখা দিয়েছে তাতে তারা উদ্বিগ্ন।লকডাউন এভাবে চলতে থাকলে শহর থেকে ব্যাপারীরা কিভাবে আম পরিবহন এবং সংরক্ষণ করবেন তা নিয়ে চিন্তিত।এসব বিষয়ের ওপর পাহাড়ের হাজার হাজার মানুষের ভাগ্য নির্ভর করছে। রামগড় উপজেলার নাকাপা এলাকার আমবাগান মালিক আবুল কালাম বলেন, পাহাড়জুড়ে আমসহ নানা রকম ফলের সমাহার। অথচ বাজার ব্যবস্থাপনার কারণে চাষিরা প্রকৃত মূল্য থেকে বঞ্চিত হন। তিনি পাহাড়ে হিমাঘার নির্মাণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। আম পরিবহন এবং বাজারজাতকরণে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতাও কামনা করেন। রামগড় উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ শরীফুল ইসলাম বলেন, রামগড়ে এবার আমের ভালো ফলন হবে বলে আশা করছি ।তিনি আরো বলেন, আমচাষে অল্প সময়ে ফলন পাওয়া যায়। ২/৩ বছর বয়স থেকে আমের ফলন শুরু হয়। দীর্ঘসময় পর্যন্ত টানা ফলন পাওয়া যায়। এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামের মাটি আমচাষের জন্য উপযোগী। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে নানা জাতের আমের চাষ করায় প্রতিটি বাগান এখন অতীতের তুলনায় সমৃদ্ধ। বিষমুক্ত আমের চাষ হচ্ছে পাহাড়ে-পাহাড়ে।এখন প্রচুর কাঁচা আম বিক্রি হচ্ছে। চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা বেপারিরা কাঁচা আম কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। যেসব আম ঝড়ে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে সেসব আম কাঁচা বিক্রি করা হলেও গাছে গাছে থোকায় থোকায় আম ঝুলছে। যেগুলো পাকলে স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি দেশের নানা স্থানে বিক্রি হয়। দেশের আমের চাহিদার উল্লেখযোগ্য অংশ পার্বত্য চট্টগ্রাম যোগান দেয়।

 

#CBALO/আপন ইসলাম


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর