শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ০৩:১৯ পূর্বাহ্ন

ই-পেপার

ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুরে সরকারি নির্দেশনা না মেনেই বসছে গবাদিপশুর হাট-প্রশাসন নীরব

প্রতিনিধির নাম:
আপডেট সময়: বুধবার, ৩ জুন, ২০২০, ৬:১৪ অপরাহ্ণ

জহরুল ইসলাম( জীবন) হরিপুর (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধিঃ

ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুরে সরকারি নির্দেশনা ও সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইনকে অম্যান্য করে প্রশাসনের নাকের ডোগায় বসছে গবাদিপশুর হাটটি। কেউ মানছে না সামাজিক দূরুত্ব। হাটে আসা অধিকাংশ লোকের মুখে নেই কোন মাস্ক। এমনকি হাট ইজাদার কর্তৃক বিভিন্ন কাজে নিয়োগকৃত ব্যক্তিরাও মানছে না সামাজিক দূরুত্ব ও মাস্ক পড়ছে না। অনেকে আবার সাংবাদিকদের ক্যামেরা দেখে পকেট থেকে মাস্ক বের করে পড়তে দেখা যায়। সপ্তাহে প্রতি মঙ্গলবার হরিপুর উপজেলার যাদুরানী হাটে সকাল থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে হাজার হাজার ক্রেতা-বিক্রেতা তাদের গবাদিপশুসহ বিভিন্ন পণ্যা সামগ্রী সরকারি নির্দেশনা ও সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে বেচা-কেনা করতে দেখা গেছে।

 

দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে হাজার হাজার ক্রেতা-বিক্রেতা যাদুরানী হাটে সমাগম করে স্বাস্থ্য বিধি অমান্য করে বেচা-কেনার কারণে হরিপুর উপজেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবুও অজ্ঞাত কারণে প্রশাসন রয়েছে নীরব। আর সচেতনমহল মনে করছে প্রশাসনের এমন নীরবতার কারণেই হরিপুর উপজেলায় করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে । এ পর্যন্ত হরিপুর উপজেলায় ২৪ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার ২নং আমগাঁও ইউয়িনে অবস্থিত যাদুরানী হাটে সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে হাজার হাজার ক্রেতা-বিক্রেতা তাদের গবাদিপশুসহ বিভিন্ন পণ্যা সামগ্রী বেচা-কেনার জন্য আসে। তারা কোন প্রকার সরকারি নির্দেশনা বা স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই গাদাগাদি করেই গবাদিপশুসহ বিভিন্ন পণ্যা সামগ্রী বেচা-কেনা করতে থাকে হাটের মধ্যে। সেই সাথে অধিকাংশ ক্রেতা-বিক্রেতার মুখে নেই মাস্ক।

 

করোনা ভাইরাসের কেউ মাস্ক না পরলে জেল জরিমানার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। (৩০ মে) রাতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানার স্বারিত বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাইরে চলাচলের েেত্র সবসময় মাস্ক পরিধানসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। তা নাহলে সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন, ২০১৮ এর ধারা ২৪ (১), (২) ও ধারা ২৫ (১) ও (২) অনুয়ায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর এই আইন বাস্তবায়ন করবে জেলা প্রশাসন ও যথাযথ কর্তৃপ। এদিকে, আইনের ধারা অনুযায়ী কেউ মাস্ক না পড়ে বের হলে ৬ মাস জেল অথবা এক লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। এছাড়া কেউ যদি এই নির্দেশনা বাস্তবায়নে বাধা প্রদান বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন তাহলে তিন মাসের জেল এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। এদিকে বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, রাত ৮টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত অতীব জরুরী প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হওয়া যাবে না।

 

অতি জরুরী প্রয়োজনের মধ্যে রয়েছে, প্র্রয়োজনীয় ক্রয়-বিক্রয়, কর্মস্থলে যাতায়াত, ওষধ ক্রয়, চিকিৎসা সেবা, মৃতদেহ দাফন বা সৎকার ইত্যাদি। যাদুরানী হাটে গাভী গরু কিনতে আসা নুর মোহাম্মদ নামের এক ক্রেতা জানান, দুপুরের দিকে এসেছি একটি গাভী গরু কিনবো বলে। কিন্তু এখানে এসে দেখি হাজার হাজার লোকের সমাগম। সেই সাথে এখানে নেই কোন সামাজিক দূরত্ব, অধিকাংশ লোকরে মুখে নেই কোন মাস্ক। একদম গাদাগাদি করেই চলছে গবাদিপশু বেচা-কেনা । তাই গাভী গরু না কিনেই অবশেষে বাড়ি ফিরে আসি। যদি এভাবে স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করে হাট-বাজারগুলো চলতে থাকে তাহলে আমাদের ঠাকুরগাঁও জেলাসহ হরিপুর উপজেলার জনসাধারণ বিরাট স্বাস্থ্যঝুকিঁতে পড়ে যাবে। জহরুল ইসলাম নামের আরেক ক্রেতা জানান,হাটের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে আমাদের ঠাকুরগাঁও জেলার হরিপুর উপজেলায় করোনা বলতে কিছু নেই। আমি মাস্ক পড়ে থাকলেও হাটের বেশির ভাগ মানুষ মাক্স তো দূরের কথা কোন প্রকার স্বাস্থ্যবিধি মানছেনা। আমার মতে এভাবে যদি এই হাট চলে তাহলে আমাদের ঠাকুরগাঁও জেলাসহ হরিপুর উপজেলায় প্রচুর হারে বেড়ে যাবে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা।

 

হরিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল করিমকে এবিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, এবিষয়ে আমি কিছুই বলবো না, বিষয়টি আপনি ডিসি স্যারকে বলেন। হরিপুর উপজেলায় সরকারি নির্দেশনা ও সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন অমান্য করে গবাদিপশুর যাদুরানী হাটসহ উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার অবাধে চলার বিষয়ে জেলা প্রশাসক ড. কেএম কামরুজ্জামান সেলিম এর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আমি এতদুর থেকে কি ব্যবস্থা নিব, আপনারা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে কথা বলেন, তিনিই ব্যবস্থা নিবেন।

 

এদিকে হাট ইজাদার আব্দুল হামিদকে সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন-২০১৮ ও সরকারি নির্দেশনা অমান্য করার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আমরা হাটে আসা ক্রেতা ও বিক্রেতাগণকে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলাচল করতে এবং গবাদিপশুসহ পণ্য বেচা-কেনার কথা বলছি কিন্তু বাস্তবে অধিকাংশ মানুষ মানছে না। তিনি আরো বলেন হাটে আসতে হলে সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন-২০১৮ ও সরকারি নির্দেশনা মেনে আসতে হবে, এবিষয়ে দু-একদিনের মধ্যে মাইকিং করা হবে


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর