কামরুজ্জামান কানু,জামালপুর:
জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি ভাঙচুর, গুলিবর্ষণ ও মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে। বুধবার (১৬ ডিসেম্বর) ৮টার দিকে তারাকান্দি যমুনা সার কারখানার গেইটপাড় এলাকায় বিজয় দিবসের প্রথম প্রহরে পুস্পস্তবক অর্পণের প্রস্তুতিকালে এই ঘটনা ঘটে। উভয় পক্ষের হামলা পাল্টা হামলায় উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন (২৬), ৩ পুলিশ সদস্য, স্থানীয় আওয়ামী-ছাত্রলীগ ও সাধারণ মানুষসহ প্রায় ৪৮ জন আহত হয়। গুরুতর আহতদের মধ্যে সরিষাবাড়ী হাসপাতাল এবং জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ সময় তিনটি মোটরসাইকেল আগুনে পোড়ানো হয়। ভাঙচুর করা হয় ৫টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
সরিষাবাড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, তারাকান্দি গেইটপাড় এলাকায় সরিষাবাড়ী উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুনের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিজয় দিবসে ফুল দেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এ সময় যুবলীগ নেতা সাখাওয়াত হোসেন মুকুলের নেতৃত্বে ৭০/৮০ জন নেতাকর্মী নিয়ে তাদের উপর হামলা চালিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে আহত করে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে দু’পক্ষের লোকজন সংঘটিত হলে তাদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষ চলাকালে মুকুল ও তার লোকজন আমাদের লোকজনকে উদ্দেশ্য করে কয়েকটি গুলি বর্ষণ করে। আমরা যাতে বিজয় দিবস পালন করতে না পারি এ জন্য পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
যুবলীগ নেতা সাখাওয়াত হোসেন মুকুল দাবি করেন, তারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরের প্রতিবাদের আওনা থেকে একটি মিছিল নিয়ে তারাকান্দি যমুনা সারকারখানার কলোনি গেটে আসেন। সেখানে ১৬ ডিসেম্বর পালন উপলক্ষে যুবলীগের তৌরী মে নেতাকর্মীরা জমায়েত হয়ে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান সফল করতে প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এ সময় রফিকুল ইসলামের লোকজন আমাদের উপর হামলা করে এবং বঙ্গবন্ধুর ছবি ও ম ভাংচুর করেছে। এখানে গুলিবর্ষণের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
আওয়ামী লীগের উভয় পক্ষের সংঘর্ষে এ সময় উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন (২৬), তারাকান্দি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পরির্দশক তরিকুল ইসলাম তালুকদার ও পুলিশ সদস্য আব্দুস সালাম, সাইফুল ইসলাম সহ উভয় পক্ষের অন্তত ৪৮ জন আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে ডুরিয়ার ভিটা গ্রামের সাইফুল (৩৩), আজমত আলী (৩৬), আনোয়ার (৫০), তারাকান্দি এলাকার ঠান্ডু (৩২), সাজিদ হাসান মানিক (২১), পাখিমারা গ্রামের উজ্জল (৩৩), চরপাড়া গ্রামের লাল চান (২৪), কান্দারপাড়া গ্রামের লিটন (৩৫), পলিশা গ্রামের জাহিদুল ইসলাম রনি (২৫), আজমত (২২), কামরাবাদ গ্রামের বেলাল (৪০), শিমলা পল্লী গ্রামের মিন্টু (৩৫) এবং ফাহিম (১৮), মিজানুর রহমান (২৫), হেলাল উদ্দিন (২৫), হাফিজুর রহমান (৩৫), সাগর মিয়া (১৮), আঃ আজিজ (৪২), গাজিউর রহমান (৫৫), অন্তর (১৬), স্বপন, আবুল, আঃ সালাম, কাদেরসহ অনেকে আহত হয়। গুরুতর আহতদেরকে সরিষাবাড়ি হাসপাতাল ও জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গুরুতর আহত উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আল-মামুনকে ঢাকা চক্ষু হাসপাতালে নেয়া হয়েছে বলে জানাগেছে। হামলা পাল্টা হামলায় তারাকান্দি এলাকা রনক্ষেত্রে পরিনত হয়। আতঙ্কে দোকান পাট বন্ধ হয়ে যায়। সাধারণ মানুষ আতঙ্কে নিরাপদ আশ্রয়োর জন্য ছোটাছুটি করে। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কয়েকটি ফাঁকা গুলি ছুঁড়েছে বলে জানাগেছে। এ ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।
তারাকান্দি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পরিদর্শক তরিকুল ইসলাম তালুকদার বলেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগের দু’পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশও ফাঁকা গুলি করেনি বা গুলি বর্ষনের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
এ ব্যাপারে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব ছানোয়ার হোসেন বাদশা জানান, আওয়ামী লীগে’র দু-পক্ষের সর্মথকদের মধ্যে এ সংর্ঘষ হয়েছে।
সরিষাবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ আবু মোঃ ফজলুল করীম জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনা হয়েছে। সংর্ঘষ নিয়ন্ত্রনে আনতে তারাকান্দি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পরির্দশক তরিকুল ইসলাম তালুকদার ও পুলিশ সদস্য আব্দুস সালাম, সাইফুল ইসলাম সহ ৩ জন আহত হয়েছে। এ ঘটনায় কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। আভিযোগ পেলে তদন্ত করে দোষীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে।
এ ব্যাপারে তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডাঃ মুরাদ হাসান এর নিকট মোবাইল ফোন করলে তিনি বলেন, এটি একটি অনাকাংখিত ঘটনা। দলের মধ্যে বিশৃংখলা আমি কোন ভাবেই মেনে নেব না। আমি বিশৃংখলা চাই না। ঘটনাটি কিভাবে কেন ঘটেছে আমি তাও জানি না।
এ প্রসঙ্গে সরিষাবাড়ীর তারাকান্দি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পরিদর্শক তরিকুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের কর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। গুলি বর্ষণ ও হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশও ফাঁকা গুলি করেনি বলে তিনি জানান।
এ ঘটনায় তারাকান্দি এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
CBALO/আপন ইসলাম