শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৩:৫৪ অপরাহ্ন

ই-পেপার

ফলো আপ ; আগৈলঝাড়ায় আলোচিত শিশু নোহাকে বালিশ চাপায় হত্যা ! আদালতে মা’য়ের মামলা দায়ের

প্রতিনিধির নাম:
আপডেট সময়: মঙ্গলবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৭:৩১ অপরাহ্ণ

রুবিনা আজাদ, আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল:
বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার বাগধা ইউনিয়নের খাজুরিয়া গ্রামে নিজ ঘর থেকে তৃতীয় শ্রেনীর ছাত্রী নুশরাত জাহান নোহার মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় আদালতে হত্যা মামলার এজাহার জমা দেয়া হয়েছে। ১৪ সেপ্টেম্বর সোমবার দুপুরে নিহত শিশু নুশরাত জাহান নোহার গর্ভধারিনী মা তানিয়া বেগম তিন জনকে আসামী করে এজাহার জমা দিলে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিজ্ঞ বিচারক শাম্মী আক্তার ময়না তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর মামলাটি নথিভ‚ক্ত করা এবং ওই পর্যন্ত নথির কার্যক্রম স্থগিত রাখারও নির্দেশ দেন।

এজাহারে উল্লেখিত আসামীরা হচ্ছে- নিহতের বাবা ও বাদীর সাবেক স্বামী সুমন মিয়া (৩৫), সুমনের চতুর্থ স্ত্রী ঝুমুর জামান (২৬) ও সুমনের বোন লিপি বেগম (৩৮)।

বাদী তানিয়া বেগম তার এজাহারে উল্লেখ করেছেন, ২০১৭ সালের ৬ আগস্ট সুমন মিয়া তাকে তালাক দেন। এরপর থেকে সে ঢাকায় বসবাস করে আসছেন। নোহা তার বাবার কাছে বসবাস করতো। তার সন্তান নিহত নোহাকে সুমনের পিতা আব্দুর রহিম মিয়া খুব আদর করতেন। কিন্তু তা সহ্য করতে পারতেন না আসামী সুমন ও তার স্ত্রী ঝুমুর জামান।

ঘটনার দিন গত ৯ সেপ্টেম্বর নোহা উপজেলার দারুল ফালাহ প্রি ক্যাডেট একাডেমীর সাপ্তাহিক পরীক্ষার প্রকাশিত ফলাফলে ৩০ নম্বর পাওয়ায় শিক্ষক শফিকুল ইসমলাম সুমন নোহাকে বকাঝকা ও লাঠি দিয়ে পিটানোর কথা বাড়ি ফিরে নোহা পরিবারের সকলকে জানায়। এ জন্য ঘরে বসে সে কিছুক্ষন কান্নাকাটিও করে।

৯ বছরের শিশু আত্মহত্যা চিন্তাও করতে পারে না। সেখানে গামছা ও ওড়না যুক্ত করে আড়ার সাথে ফাঁস দেয়া কোনভাবেই সম্ভব নয়। এ কারণে তিনি আদালতে উল্লেখিত তিন জনকে আসামী করে হত্যা মামলার এজাহার জমা দিয়েছেন বলে জানান।

বাদী এজাহারে আরও অভিযোগ করেন যে, নোহার দাদা আব্দুর রহিম নোহাকে অত্যান্ত ভালবাসলেও আসামীরা নোহার প্রতি আক্রোশ পোষণ করতেন। ঘটনার দিন পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর নোহাকে শিক্ষকের গালমন্দ ও বেত্রাঘাতের ঘটনাকে পুঁজি করে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে আসামীরা তার মেয়ে নোহাকে বালিশ চাপা দিয়ে ম্বাষ রোধ করে হত্যা করে। তাদের অপকর্ম ঢাকতে এরপর তারা গামছায় ওড়না যুক্ত করে নোহাকে ঘরের দোতলার আড়ার সাথে ঝুলিয়ে দিয়ে ডাক চিৎকার করে আত্মহত্যার অপপ্রচার চালানো হয়। এমনকি বিষয়টিকে গ্রহণযোগ্য করতে সুমন মিয়া বাদী হয়ে ওই স্কুলের শিক্ষক সুমন পাইককে আসামী করে মামলা দায়ের করেন। যা ছিল সম্পূর্ণ সাজানো নাটক।

আদালতে দায়ের করা ৬৩নং মামলায় বাদী তানিয়া আরও অভিযোগ করেন যে, তিনি নোহার মৃত্যুর খবর পেয়ে ঢাকা থেকে আগৈলঝাড়া আসার আগেই হত্যাকারীরা তাদের অপরাধ ঢাকতে তরিঘরি করে থানায় আত্মহত্যার প্ররোচনায় ওই শিক্ষককে অভিযুক্ত করে একটি মামলা দায়ের করে।
তানিয়ার আদালতে দায়ের করা মামলায় শিশু নোহা আত্মহত্যা প্ররোচনায় অভিযুক্ত উজিরপুর উপজেরার সাতলা গ্রামের আব্দুল লতিফ পাইকের ছেলে শিক্ষক সফিকুল ইসলাম সুমন পাইকসহ স্থানীয় সাত জনকে স্বাক্ষী করা হয়েছে।

বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শাখাওয়াত হোসেন জানান, ১২ সেপ্টেম্বর পরিচালনা কমিটির জরুরী সভায় মামলায় অভিযুক্ত শিক্ষক সুমন পাইককে স্কুলের চাকুরী থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে।

এর আগে বরিশাল ১১ সেপ্টেম্বর রাতে জেলা পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম বিপিএম নোহার পিতা সুমন মিয়ার সাথে তার দায়ের করা মামলার বিষয়ে গৌরনদী বসে কথা বলেছেন।

তানিয়া বেগম সাংবাকিদদের কাছে অভিযোগে বলেন, নোহাকে তার দাদা আব্দুর রহিম নোহার ভবিষ্যত চিন্তা করে তার নামের সম্পত্তি থেকে কিছু সম্পত্তি লিখে দেয়ার কথা তাকে জানিয়েছিলেন। নোহাকে সম্পত্তি লিখে দেয়ার কথাই নোহার মৃত্যুর জন্য বড় কারণ হয়ে দাড়িয়েছিল।
প্রসঙ্গত, গত ৯ সেপ্টেম্বর দারুল ফালাহ প্রি-ক্যাডেট একাডেমীর তৃতীয় শ্রেনীর ছাত্রী নোহার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। অভিযোগ ওঠে মাদ্রাসায় অকৃতকার্য হওয়ায় শিক্ষক মারধর ও গালমন্ড করায় নোহা অভিমান করে আত্মহত্যা করে। এ ঘটনায় পরদিন ১০ সেপ্টেম্বর নিহত নোহার বাবা সুমন মিয়া বাদী হয়ে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এনে শিক্ষক সুমন পাইককে আসামী করে মামলা দায়ের করেন। এরপর থেকে পলাতক রয়েছে আসামী সুমন পাইক।

 

#CBALO/আপন ইসলাম


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর