যশোরের অভয়নগরে অবৈধ দখলের কারণে নাব্য সংকটে ভুগছে ভৈরব নদ। ফলে লাখো মানুষের বেঁচে থাকার স্বপ্ন ধ্বংসের দারপ্রান্তে। এ অবস্থায় নদের চর পড়ে দেশের অন্যতম বৃহৎ নওয়াপাড়া নৌ বন্দর অচল হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। রেল, মহাসড়ক ও নৌ-পথের স্বমন্বয়ে গড়ে ওঠা শিল্প-বাণিজ্য ও বন্দর নগর নওয়াপাড়া এখন দেশের বৃহত্তম ও প্রথম শ্রেণির নৌ-বন্দর। নদী পথে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর থেকে প্রতিদিন শত-শত কার্গো, বলগেট, ট্রলার বোঝাই বিভিন্ন প্রকারের খাদ্য শস্য, পাথর, কয়লা, সারসহ নানা প্রকারের দ্রব্যসামগ্রী আসে ও আনলোড হয়। তারপর এখান থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পণ্য সরবরাহ করা হয়। নওয়াপাড়ার ওপর দিয়ে বয়ে চলেছে ভৈরব নদ। একশ্রেণির ক্ষমতাশালী ব্যবসায়ী ও ঘাটমালিক নদের নাব্য সংকটের অজুহাত দেখিয়ে দখলের প্রতিযোগিতা শুরু করেছে। নদের পাড়ে কৃত্রিম চর বানিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে অর্ধশত ঘাট। যার ফলে নদের কিছু কিছু স্থানে বাঁক পরিবর্তন হয়েছে। ভাঙনের কবলে পড়ে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে শত-শত বিঘা ফসলি জমি। নওয়াপাড়া বাজারের বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী ও ঘাটমালিকরা বলেছেন নদের নাব্য সংকটের কারণেই ঘাটে জাহাজ, বার্জ ও কার্গো ভিড়তে পারছে না। সেজন্য নদের তীরে মাটি ও বালু ফেলে নদের মধ্যে বাঁশ ও কাঠ দিয়ে পন্টুন তৈরি করতে হচ্ছে। অসাধু কিছু ব্যক্তি তাদের সম্পত্তি বাড়ানোর লোভে নদের মধ্যে বাঁশের খুঁটি গেড়ে বাঁধ তৈরি করে দখলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ভাঙনকবলিত উপজেলার দেয়াপাড়া গ্রামবাসীর অভিযোগ, পরশ এবং আক্তার মিল কর্তৃপক্ষের নদী দখলের কারণে তাদের শত-শত বিঘা জমি নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। তারা নদ দখলকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছে। অনুসন্ধানে দেখা যায়, রাঘববোয়ালদের কালো থাবায় নদীর দুই পাশে গড়ে উঠেছে অসংখ্য অবৈধ জেটি, যে জেটি তৈরির কারণে পানির স্রোতের ধীরগতি হওয়ায় নদীর নাব্যতা হারিয়ে মৃত্যুর মুখে আজ অভয়নগরবাসীর স্বপ্নের ভৈরব নদ। অন্যদিকে নদীবন্দর রক্ষার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা ওই সব অবৈধ দখলদারদের কাছ থেকে কৌশলে লুটে নেন লাখ-লাখ টাকা। যে কারনে দেধারছে ভৈরব নদ অবৈধ দখল হয়ে যাচ্ছে দেধারছে। এর কারণ অবৈধ দখল নিতে নদী রক্ষা দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের মোটা অংকের টাকা দিলেই মিলে যায় অলিখিত অনুমতি। যে কারনে টাকায় বিক্রি হয়ে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা নিরব থাকে। যার ফলে অবৈধ দখলকারীদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন কোন আইনী পদক্ষেপ নেওয়া হয়না। ফলে অবৈধ দখলসহ বিভিন্ন অনিয়মে ভৈরব নদ ধ্বংস হয়ে মৃত্যুর মুখে পড়েছে। সরেজমিন দেখা যায়, দখলদাররা প্রথমে নদীতে অস্থায়ী স্থাপনা তৈরি করে সেখানে বালু অথবা মাটি দিয়ে ভরাট করে, পরে সুযোগ বুঝে সেখানেই তৈরি করে স্থায়ী স্থাপনা। নদের নাব্য কমে ও গতিপথ ছোট হওয়ায় পণ্য নিয়ে আসা কার্গোগুলিকে আনলোডের জন্য জোয়ার আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। ফলে মারাত্মকভাবে ক্ষতি গ্রস্ত হচ্ছে এই বন্দরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা সকল ব্যবসা-বাণিজ্য। তথ্য সূত্রে জানা গেছে, নওয়াপাড়া নদীবন্দর কর্তৃপক্ষের তদারকির অভাবে সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব। জরুরি ভৈরব নদের নাব্যতা ফেরাতে অবৈধ দখল উচ্ছেদসহ সকল অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি করেছেন সচেতন মহল।
এবিষয়ে নওয়াপাড়া নদী বন্দরের উপ-পরিচালক মাসুদ পারভেজ বলেন, আমরা পর্যবেক্ষণ করে অবৈধ দখলদার দের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করব। নদের স্বাভাবিক প্রবাহ রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে।