বর্নিল সাজে নদীতে শত শত নৌকা। ঢাক-ঢোল আর সাউন্ড বক্স মাইকের সাউন্ডে মুখরিত চারেদিক। হিন্দু ধর্মাবলম্বীর বিভিন্ন বয়সের ছেলে-মেয়ে সহ নানান শ্রেণিপেশার মানুষের নাচানাচি। সে দৃশ্য উপভোগ করতে নদীর দু’পারে ভিড় করছে হাজারো মানুষ। এমন মনোমুগ্ধকর দৃশ্য ফুটে উঠেছে নওগাঁর রাণীনগরের ছোট যমুনা নদীতে। লক্ষ্মীপূজা উপলক্ষ্যে গত মঙ্গলবার উপজেলার কাশিমপুর ইউনিয়নের কুজাইল বাজারে বসেছে শত বছরের বিশাল ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ মেলা।
স্থানীয়রা শত বছরের পুরনো ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে প্রতিমা বিসর্জনের দিন থেকে লক্ষ্মীপূজা উপলক্ষে কুজাইল বাজারে দুই দিনব্যাপী গ্রামীণ মেলার আয়োজন করেছে। মেলায় বসে হরেক রকমের দোকানপাট। মেলার প্রথম দিন মঙ্গলবার মূল আর্কষণ নৌবহর। আর দ্বিতীয় দিন বুধবার হয় বউ মেলা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার কাশিমপুর রাজবাড়ির রাজবাহাদুর শ্রী. অন্নদা প্রসন্ন লাহিড়ীর রাজত্ব পরিচালনার আগে থেকে লক্ষ্মীপূজা উপলক্ষে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। প্রায় দুই’শ বছর থেকে লক্ষ্মী প্রতিমা বিসর্জনের দিন থেকে এ মেলা শুরু হয়। ঐতিহ্যবাহী এ মেলার বিশেষ আর্কষণ লক্ষ্মী প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষ্যে ছোট যমুনা নদীতে নৌবহর। দুপুরের পর থেকে রাণীনগর, আত্রাই, মান্দা, নওগাঁ সদর সহ কয়েকটি উপজেলার হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা নৌকায় চড়ে আসতে থাকে। পাশাপাশি মেলা ও নৌবহর উপভোগ করার জন্য নৌকায় ঘুরে বেড়ান অন্যান্য ধর্মের মানুষও। সাউন্ড বক্স, মাইক আর ঢাকের তালে তালে নৌকায় বিনোদনপ্রেমীদের নৃত্যে মুখরিত হয়ে উঠে ছোট যমুনা নদী। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মিলনমেলায় পরিণত হয় নদীর দু’পার। মঙ্গলবার প্রায় ৪ শতাধিক নৌকা নদীতে নৌবহরে মেতে উঠে। চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। পরে নদীতে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়।
কুজাইল হিন্দুপাড়া গ্রামের বিকাশ চন্দ্র প্রামানিক বলেন, পূর্ব পুরুষেরা এ মেলা শুরু করে গিয়েছেন। আমরা শুধু ধারাবাহিকতা রক্ষা করে যাচ্ছি। দুর্গাপূজা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব হলেও আমাদের এখানে লক্ষ্মীপূজার আনন্দটা বেশি হয়।
মেলা কমিটির সদস্য সচিব শামসুল রহমান বলেন, শত বছরের ঐতিহ্যবাহী এই মেলায় আমরা হিন্দু মুসলিম একে অপরকে সহযোগিতা করি। এ মেলায় অনেক দুর-দুরান্ত থেকে নৌকা নিয়ে এসে নৌবহরে যুক্ত হয়। যা হাজার হাজার নারী পুরুষ উপভোগ করে। এবারের মেলায় প্রায় দুইশত দোকান বসেছে।
কুজাইল বাজার জাগরণ সংসদ ক্লাবের সভাপতি শাহিদুর রহমান বলেন, দুই শত বছর আগে থেকে লক্ষ্মীপূজা উপলক্ষ্যে এখানে মেলা হয়ে থাকে। মেলার মূল আকর্ষন নৌবহর। যা নদীর দু’পারের হাজার হাজার মানুষ উপভোগ করে। মেলায় জামাইদের বড় বড় মাছ, মিষ্টিসহ হরেক রকমের খাবার কেনাকাটার ধুম পড়ে যায়। মেলার দ্বিতীয় দিন বউমেলা অনুষ্ঠিত হয়। আমরা হিন্দু মুসলিম উভয়ে মিলেমিশে এই আনন্দ উপভোগ করি। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় থাকে। এ এক সেতু বন্ধন।