সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৮ অপরাহ্ন

ই-পেপার

করোনা যোদ্ধা হিসাবে স্বেচ্ছাসেবীদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি চাই – সাইদুর রহমান

প্রতিনিধির নাম:
আপডেট সময়: বুধবার, ১২ আগস্ট, ২০২০, ৮:৩৬ অপরাহ্ণ

প্রাণঘাতী বৈশ্বিক করোনা ভাইরাসের ভয়াল ছোবলে বিশ্ববাসী আজ অসাহায় ও নিরুপায়। বিশ্বের ২১৩ টি দেশ করোনা জ্বরের আতঙ্কে আতঙ্কিত। বিশ্বের সমস্ত প্রযুক্তি করোনার কাছে অবনত। জাতিভেদে এখন সবার সৃষ্টকর্তার উপর ভরসা। করোনার বিষাক্ত ছোবলে প্রতিমুহূর্তে লাশের মিছিলে যুক্ত হচ্ছে লাশ। করোনা আক্রান্ত হলে সন্তান পিতাকে স্বীকৃতি দেয় না আবার পিতা দেয় না পুত্রকে স্বীকৃতি। বিশ্ব মানবতাকে আজ অগ্নিপরীক্ষায় ফেলে দিয়েছে করোনায়। মানবতার বাণী নিরবে নিবৃতে কাঁদে। বাংলাদেশ তার ব্যতিক্রম নয়। মানুষ করোনার ভয়ে কর্মহীন ও ঘরমুখো।” ঘরে থাকুন ভালো থাকুন ” স্লোগান নিয়ে বাংলাদেশ সরকার জনগণের কাছে হাজির হয়েছেন। করোনা মোকাবেলায় সরকারের আগাম প্রস্তুতি যদিও সন্তোষজনক নয়। সরকারের উচ্চ মহলের নীতি নির্ধারকের ভূমিকা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। দেশের যে কোন মহামারীতে সরকারের অধিনস্ত কর্মকর্তা, কর্মচারীরা, সরকারী বাহিনী কাজ করবেন, তাদের রুটিন ওয়ার্ক হিসাবে। রাজনৈতিক দল গুলো কাজ করবে, তাদের দলের ভাবমূর্তি উজ্জল করার জন্য। স্বেচ্ছাসেবীরা কাজ করেন নিঃস্বার্থভাবে এবং স্ব – প্রণোদিত হয়ে।

 

একমাত্র স্বেচ্ছাসেবীরাই কোন দল বা গোষ্ঠীর ঊর্ধ্বে থেকে, দেশত্ববোধের তাগিদে কাজ করেন। তাঁদেরকে আহবানের প্রযোজন হয় না। দেশপ্রেমের অদম্য টানে দেশের যে কোন দুর্যোগে কাজ করেন নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। করোনা মহামারীতে তার ব্যত্যয় ঘটেনি। করোনা প্রাদুর্ভাবে তাঁরা সচেতনা মূলক কাজ করে যাচ্ছেন সাধ্যের সবটুকু দিয়ে। দেশের মানুষকে করোনা মহামারী থেকে রক্ষার জন্য সচেতনা মূলক স্লোগান নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন তাঁরা দিনরাত। স্বেচ্ছাসেবীরা স্বেচ্ছায় কাজ করতে গিয়ে অভিনব সমস্যার সন্মূখীন হচ্ছেন। তারপরও পিছপা হচ্ছে না। স্বেচ্ছাসেবীদের কাজে স্বচ্ছতার কোন অভাব নাই। আছে শুধু প্রতিবন্ধীকতা। স্বেচ্ছাসেবীরা কাজে বিশ্বাসী তাই তাঁরা প্রতিবন্ধীকতাকে সঙ্গী করে করোনা সচেতনা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। করোনা সচেতনা লিফলেট বিতরণ থেকে শুরু করে, পাড়ায় – মহল্লায় হাত ধোয়ার ব্যবস্হা করা, বিনাশ্রমে কৃষকের ধান কাটা , বিনামূল্যে রক্তদান, মাস্ক, এবং কর্মহীন এবং নিন্ম আয়ের মানুষের মাঝে খাবার পোঁছে দেওয়া, বস্তিবাসী, ফুটপাতের মানুষ জন্য রাতের আঁধারে খাবার নিয়ে হাজির হওয়া, করোনা মডেল বাজার তৈরী, দোকানের সামনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে দাগ কেটে দেওয়া, ত্রাণ বিতরণে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে জানাজার নামাজের ব্যবস্হা করা, টিসিবি র পণ্য বিতরণে সহায়তা, সমন্বয়ের মাধ্যমে ত্রাণের ব্যবস্হা করা, হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা রোগীকে ঔষধ এবং খাবার পৌঁছে দেওয়া, লকডাউন এলাকায় অতন্দ্র প্রহরী হিসাবে কাজ করেছেন স্বেচ্ছাসেবীরা। এই সব কাজে তাঁদের কোন প্রশিক্ষণ ছিল না। নিজের মেধা কাটিয়ে কাজগুলো করেছেন।

 

সমাজসেবা অধিদফতর ২০ জুলাই, ৬০ হাজার নিবন্ধিত স্বেচ্ছাসেবীককে চিঠি দিয়েই দায় সেরেছেন। তাঁদের কোন প্রশিক্ষণের ব্যবস্হা করা হয়নি। তাছাড়া অনিবন্ধিত স্বেচ্ছাসেবীকদের সংখ্যা অ -নে -ক বেশী। স্বেচ্ছাসেবীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব ।স্বেচ্ছাসেবীদের মধ্যে সংখ্যায় বেশী ছাত্র, তরুণ, যুবক। গণমাধ্যম কর্মীদের সুরক্ষার কোন ব্যবস্হা না থাকায় করোনায় কাজ করতে হচ্ছে জীবন বাজি রেখে। গণমাধ্যম কর্মীরা সংবাদের শিখর উদ্ঘাটনের জন্য জীবনের ঝুঁকি নিচ্ছেন। করোনা টেস্ট জালিয়াতির মুখোশ উন্মোচন করেছে মিডিয়া। গণমাধ্যম কর্মীরাও স্বেচ্ছাসেবক। অথচ এই স্বেচ্ছাসেবীদের কোন তালিকা তৈরী করার উদ্যেগ সরকার এখনও নেয়নি। কতজন স্বেচ্ছাসেবী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন? কতজন স্বেচ্ছাসেবী করোনা উপসর্গ নিয়ে বেঁচে আছেন তারও কোন তথ্য রাষ্ট্রের কাছে নেই! গণমাধ্যম কর্মীদের হালকা নির্ভরশীল তথ্য পাওয়া। এ পযর্ন্ত জানা গেছে ১০৪ জন গণমাধ্যম কর্মী করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন আর করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩৯৫জন গণমাধ্যম কর্মী। (তথ্য বাংলা নিউজ ২০ জুন পযর্ন্ত)। করোনা সুরক্ষার অভাবে বাংলাদেশের গণমাধ্যম কর্মীরা সবচেয়ে বেশী স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আছেন। ( সূত্র দ্য টেলিগ্রামের)। কিছুটা আশার বাণী শুনিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ; করোনা উপসর্গ নিয়ে কোন গণমাধ্যম কর্মী মারা গেলে সরকার ৩ লাখ টাকা করে দিবেন। মুক্তিযুদ্ধে নিরস্ত্র বাঙালী দেশত্ববোধ থেকে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। করোনা মহামারিতেও স্বেচ্ছাসেবীরা জাগ্রত দেশত্ববোধ থেকে নিজের জীবন বাজি রেখে সচেতনা মূলক কাজ করে যাচ্ছেন। স্বেচ্ছাসেবীরা যদি করোনা মহামারীতে অংশ গ্রহন না করতেন।

 

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অ-ব্যবস্হপনার জন্য হয়তো বা লাশের গন্ধে বাংলার বাতাস দূষিত হতো। করোনা সুযোগে সাহেদের মতো রাখব বোয়ালরা করোনা টেস্ট জালিয়াতি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। অন্যদিকে স্বেচ্ছাসেবীরা করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন তাঁদের পরিবারের খোঁজ-খবর কেউ নিচ্ছে না! ৪০০শ বছরের ইতিহাস বলে প্রতি ১০০ বছর পর পর পৃথিবীতে এ রকম মহামারী আসে। ” বৃষ্টি আসলে যেমন বুঝা যায় ছাতায় ছিদ্র আছে, তেমনি দেশে দুর্যোগ আসলে বুঝা যায় দেশপ্রেম কাদের ভিতরে আছে।” তাই সরকার করোনা সচেতনায় অংশগ্রহণকারী মৃত অথবা জীবিত স্বেচ্ছাসেবীদের সঠিক মূল্যায়ন করা উচিৎ।

 

অনেক স্বেচ্ছাসেবী কর্মহীন হয়ে পড়েছে, তাঁদের কর্মের ব্যবস্হার দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে। করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত স্বেচ্ছাসেবীদের পরিবারের দায়িদ্ব রাষ্ট্রকে নিতে হবে। করোনা সচেতনায় অংশগ্রহণকারী স্বেচ্ছাসেবীদের সঠিক একটা তালিকা প্রতি উপজেলা থেকে তৈরী করতে হবে। তারপর তাঁদেরকে রাষ্ট্রীয় ভাবে ” করোনা যোদ্ধা ” হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে সম্মানসূচক মর্যাদায় ভূষিত করা উচিৎ। মানবিক মানুষ তৈরীর লক্ষ্যে এবং স্বেচ্ছাসেবীদেরকে কাজে উৎসাহিত করতে , স্বেচ্ছাসেবীদেরকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়ার দাবী, ভবিষ্যৎ সময়ের দাবী। মানবিক মানুষ তৈরী করার জন্য, রাষ্ট্রের মানবিক দৃষ্টিকোণকে প্রসারিত করতে হবে।”


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর