নাটোরের আলোচিত সেই একই পরিবারের ৩ বোন নারী ইউঃপিঃ সদস্যর মধ্যে দু’বোন এসএসসি পাস করেছেন। বড় বোন হালিমা বেগম (৪৮) ও ছোট বোন নাছিমা বেগম (৪০) একসাথে এসএসসি পাস করেছেন। একই মাদ্রাসা থেকে তারা একসঙ্গে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন। রবিবার ফল প্রকাশের পর দু-বোনের এ সাফল্যের বিষয়টি প্রকাশ পায়।
তারা দুজনেই পুঠিয়া উপজেলার ওমর গাড়ি ফাজিল মাদ্রাসার পরীক্ষার্থী ছিলেন। ২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে কারিগর শিক্ষা বোর্ডের অধীনে চলতি বছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় (এসএসসি) অংশ নেন। তারা নলডাঙ্গা উপজেলার কৃষ্ণপুর দিঘা ও মির্জাপুর দিঘা গ্রামের বাসিন্দা।
বড় বোন হালিমা বেগম নলডাঙ্গার বিপ্রবেলঘড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্য ও ছোট বোন নাছিমা বেগম একই ইউনিয়নের ৪,৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্য।
নাছিমা বেগম জানায়, ফলাফলে বড় বোন হালিমা বেগম জিপিএ- ৩.৮৯ এবং নাছিমা বেগম জিপিএ- ৩.৬৪ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন।
মাধ্যমিক পাস করা নাছিমা বেগম উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে জানান, লেখাপড়া করার ইচ্ছে ছিল প্রবল। অর্থাভাবে পিতার বাড়িতে সে ইচ্ছে পূরণ হয়নি। সংসারে তার দুই সন্তান রয়েছে। বিয়ের পর সন্তানের অনুপ্রেরণায় দুই বোন একই সাথে ওমর গাড়ি ফাজিল মাদ্রাসায় (বিএম) শাখায় ভর্তি হয়েছিলেন। অনেকে অনেক কথা বলেও তবুও হাল ছাড়েননি। সন্তানের সাথে পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন।
তিনি আরও বলেন, রবিবার দুপুর নাগাদ মাদ্রাসায় মাধ্যমিক পাসের খবর পান তিনি। খবর শুনে আনন্দে চোখের জল চলে আসে। ফল জানার পর আশপাশের মানুষ অভিনন্দন জানাচ্ছেন।
এছাড়াও নাছিমা বেগমের ছোট ছেলে সোহানুর রহমান সোহান (১৬) নাটোর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, বাসুদেবপুর থেকে ২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে চলতি বছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় (এসএসসি) অংশ নেন। ফলাফলে মায়ের চেয়ে ছেলে রেজাল্ট এ এগিয়ে রয়েছে। ছেলে জিপিএ- ৩.৯৬ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন।
ছেলে বলেন, একসাথে লেখাপড়া করতে গিয়ে মাকে তার বন্ধুর মতোই মনে হয়েছে। সুখ-দুঃখ একসাথে ভাগ করে নিয়েই লেখাপড়া করেছেন তারা। সাফল্যও এসেছে একসাথেই।
উল্লেখ যে, গত ২০২২ সালে ৫ জানুয়ারি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে একই পরিবার থেকে ৩ বোন ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্য নির্বাচিত হন। এছাড়াও একই ইউনিয়নে ওনাদের মা ২ বার-এর সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্য ছিলেন।
নাটোর জজ কোটের আইনজীবী এডভোকেট এম মোয়াজ্জেম হোসেন মজনু জানান, মা-ছেলে ও দুই বোনের এই সাফল্য সমাজের জন্য অনুপ্রেরণা। বয়স কোনো বিষয় না, চেষ্টা থাকলে মানুষ যে কোনো বয়সে সাফল্য অর্জন করতে পারে।