নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছে নি¤œ ও নি¤œ-মধ্যবিত্ত মানুষের ব্যতিক্রমী ‘গোশত সমিতি’। ঈদ, শবে বরাত, শবে কদর, ইসলামী জালসা এমনকি গ্রামীণ মেলাকে কেন্দ্র করে সমিতির মাধ্যমে গচ্ছিত টাকায় গরু কিনে মাংশ ভাগাভাগি করে নেয়ার প্রচলন শুরু হয়েছে। গোশত বিক্রেতাদের সিন্ডিকেট ভেঙ্গে কমদামে গোশত পেয়ে সদস্যদের চোখেমুখে খুশির ঝিলিক।
অনেকের কাছেই গোশত সমিতি বা মাংশ খাই সমিতি শব্দটি নতুন মনে হলেও লোকজনের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে এ সমিতি। লোকজন এ সমিতি থেকে উপকৃত হওয়ায় প্রত্যন্ত অঞ্চলের পাড়া-মহল্লায় এর প্রচলন ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে। স্থানীয়দের ভাষায় এই সমিতির নাম ‘গোশত বা মাংস সমিতি’। অনেকের কাছে ‘মাংশ খাই সমিতি’ অথবা খাই খাই সমিতি নামেও পরিচিত।
মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) সকালে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের মাংস সমিতির সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা সমিতিতে সাপ্তাহিক অথবা মাসিক হারে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ জমা রাখেন। এভাবে গচ্ছিত টাকায় কেনা হয় গরু। ঈদের দু-একদিন আগে ক্রয়কৃত পশু জবাই করে গোশত সমিতির প্রত্যেক সদস্য তা ভাগ করে নেন। এতে ঈদ উদ্যাপনে নি¤œ ও নি¤œ-মধ্যবিত্ত মানুষদের আর্থিক চাপ যেমন কমে, তেমনি ঈদের আগে সবার বাড়িতে বাড়তি আনন্দ যোগ হয়। সাধারণত প্রতিটি মাংস সমিতির সদস্যসংখ্যা ৩০ থেকে ৭০ জন হয়ে থাকে।
গুরুদাসপুর পৌরশহরের আনন্দ নগর মহল্লার ভ্যানচালক ষাটোর্ধ রেজাউল জানান, সংসারের তার নুন আনতে পান্তা ফুরোয় অবস্থায়। ঈদে মেয়ে-জামাই,নাতি-নাতনী এলে তার উপর অতিরিক্ত খরচের বোঝা যুক্ত হয়। ঈদে গরুর গোশতের চাহিদা থাকে সবার। কিন্তু ভ্যানচালিয়ে একসাথে অনেক টাকায় গোশত কেনা তার জন্য কষ্টসাধ্য। ইতিপূর্বে সন্তানদের বায়না পূরণ করতে না পেরে এ বছর সমিতির সদস্য হয়েছেন।
একই মহল্লার গোশত সমিতির উদ্যোক্তা সেলিম রেজা জানান, তিনি চার বছর ধরে গোশত সমিতি তত্বাবধান করছেন। এবছর তাঁর সমিতির সদস্য সংখ্যা ৭০ জন। সদস্যরা দৈনিক ১০ টাকা হিসাবে মাসে ৩০০ টাকা করে অর্থ জমা রাখেন। বছর শেষে ঈদের আগে সবার গচ্ছিত টাকায় গরু কিনে সমহারে বন্টন করা হয়। শুধু তার গ্রামেই এমন ১০টি সমিতি আছে।
এবছর তারা ২ লাখ ৮৭ হাজার টাকায় দুটি এঁড়ে গরু কিনে গোশত বন্টন করছেন। প্রতিকেজি গোশতের দাম পরেছে ৬৫০ টাকা। বাজার দরের চেয়ে কম দামে এবং এক সাথে বেশি পরিমাণ গোশত পেয়ে প্রত্যেকেই খুশি।
৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর শহিদুল ইসলাম সাহেদ বলেন, এলাকায় গোশত সমিতি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এ সমিতির সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বাজারে গরুর মাংসের উচ্চমূল্য থাকলেও সমিতির কল্যানে ঈদুল ফিতরে এখন ঘরে ঘরে গরুর গোশত রান্না হয়। এ ধরনের সমিতির কারণে সমাজে ভ্রাতৃত্ববোধ আরও জোরদার হচ্ছে।