সামনেই সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। শারদীয় দুর্গাপূজাকে ঘিরে প্রতিমা তৈরির ধুম পড়েছে। কারিগরদের দম ফেলার ফুসরত নেই। কয়েক দিন বাদেই প্রতিমার গায়ে পড়বে রঙের আঁচড়।
চাটমোহর বোথর ও মির্জাপুর পাল পাড়ার প্রতিমা তৈরির কারিগররা দিনরাত কঠর পরিশ্রম করে নিপুণ হাতে কাদামাটি, খড়, বাঁশ, সুতলি ও রং দিয়ে তৈরি করছেন প্রতিমা। মন্ডপে মন্ডপে কারিগররা ফুটিয়ে তুলছেন দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, গণেশ-কার্তিক ও অসুরের প্রতিমা। বেশির ভাগ মন্দিরের জন্য দুর্গার অর্ডার করে রেখেছেন মন্দির কর্তৃপক্ষ। তবে প্রতিমা তৈরির উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি পেলেও কাঙ্খিত মূল্য পাচ্ছে না বলে অভিযোগ কারিগরদের।
বুধবার (১১ অক্টোবর) চাটমোহর বোথর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিমা তৈরির কাজে ব্যস্ত মৃৎশিল্পী (কারিগর) ষাটোর্ধ্ব সতেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। তিনি শারদীয় দুর্গোৎসবকে কেন্দ্র করে রাতদিন কাদামাটি দিয়ে একটু একটু করে নিপুণ হাতে গড়ে তুলছেন দেবী দুর্গার প্রতিমা।
পূজা যতই ঘনিয়ে আসছে মৃৎশিল্পীদের ব্যস্ততা ততটাই বাড়ছে। কারিগররা শক্ত মাটি নরম করে দেবী দুর্গার সাথে গড়ে তুলছে কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী আর সরস্বতীর মূর্তি। কাজের চাপ বেশি থাকায় পুরুষদের পাশাপাশি কাজ করছেন নারীরাও। কেউ কেউ খড়, কাঠ, সুতা দিয়ে প্রতিমার কাঠামো তৈরি করছেন, কেউবা নিপুণ হাতে ফুটিয়ে তুলছেন দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী প্রতিমা। এখন চলছে খড় আর কাদামাটি দিয়ে প্রতিমা তৈরির প্রাথমিক কাজ। এরপর প্রতিমাতে দেয়া হবে রং তুলির আঁচড়। বাঁশ-কাঠ আর কাদা মাটি দিয়ে তৈরি প্রতিমাগুলো দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন এলাকার সনাতন ধর্মের লোকজন। কারিগর সতেন্দ্রনাথ জানান, জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে এসে লোকজন প্রতিমার দরদাম করছেন। কেউ অগ্রিম দিচ্ছেন। অর্ডার অনুযায়ী বিভিন্ন প্রতিমা তৈরি করে জেলার বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করি।
আগামী ১৩ অক্টোবর মহালয়ার মধ্যে দিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়বে। ১৯ অক্টোবর মহা পঞ্চমী, ২০ অক্টোবর ষষ্ঠী, ২১ অক্টোরর সপ্তমী, ২২ অক্টোবর অষ্টমী, ২৩ অক্টোবর নবমী ২৪ অক্টোবর বিজয়া দশমীর মধ্যে দিয়ে ৫ দিনব্যাপী হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গা পূজার পরিসমাপ্তি ঘটবে জানান উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদ।
বোথর গ্রামের প্রতিমা তৈরির কারিগর দুলাল চক্রবর্তী বলেন, আগের মতো মানুষ মাটির তৈরি জিনিসপত্র ব্যাবহার না করায় আমাদের প্রায় সারা বছরই অলস সময় কাটাতে হয়। তবে দুর্গাপূজা চলাকালীন প্রতিমা তৈরি করে যে টাকা আয় হয় তা দিয়ে কোনো মতে সারা বছর সংসার চালাই। আবার চলতি বছর প্রতিমা তৈরির উপকরণের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। কিন্তু ক্রেতারা প্রতিমার দাম বাড়াচ্ছে না। আর্থিকভাবে লাভবান না হলেও পৈত্রিক পেশা ধরে রাখতে এ কাজ করছি।
উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অশোক চক্রবর্তী জানালেন, আসন্ন দুর্গা পূজার সব ধরনের প্রস্তুতির কাজ ঠিকভাবেই এগিয়ে চলছে। এ বছর চাটমোরে ৫৩ পূজা মন্ডপে দুর্গাপুজার আয়োজন করা হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ রেদুয়ানুল হালিম জানান, দুর্গাপুজা উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ সেলিম রেজা জানান, ইতোমধ্যেই পুলিশি তদারকি শুরু হয়েছে। প্রতিটি পূজা মন্ডপে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হচ্ছে।