যতদিন রেল চলছে বাহাদুরাবাদ ঘাট _ততদিন এত জমজমাট ঘাট আর কোথাও ছিল কিনা সন্দেহ। গাইবান্ধার প্রান্তে যেমন ঘাটের স্থান পরিবর্তন হয়েছিল বেশ কয়েকবার নদীর নাব্যতার কারণে সেদিক থেকে বাহাদুরাবাদ ঘাটে এ সমস্যা ছিল না। নাব্যতার সংকট দেখা দিলে হয়তো পন্টূন সরানো হতো। কিন্তু রেললাইন এর কোন পরিবর্তন ছিলনা। অপরপ্রান্তে ভরতখালি কিংবা কঞ্চিপাড়া রেলওয়ে স্টেশন আজ হারিয়ে গেলেও পূর্বাঞ্চলের দেওয়ানগঞ্জ যাকে উত্তরের প্রবেশ দুয়ার বলা হয় সেই স্টেশন এখনও জমজমাট।
বাহাদুরাবাদ রেলওয়ে স্টিমার ঘাট রেল লাইনের দুইপাশ দিয়ে ছিল অসংখ্য দোকানপাট। ভাতের হোটেল থেকে শুরু করে, ফলমূলের দোকান, কনফেকশনারী, কি ছিলনা বাহাদুরাবাদ ঘাটে। তখনকার ভাতের হোটেলগুলি বেশ সমাদৃত ছিল। ফেরীর যাত্রীরা ফেরীর ভিতরে খাওয়ার চেয়ে বাহাদুরাবাদে দুপুরের খাবার খেয়ে নেয়াতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করতো বেশীরভাগ।
আন্তঃনগর ট্রেনের মধ্যে তিস্তা আর একতার ফেরী সংযোগ ছিল অর্থাৎ, ঢাকা থেকে সরাসরি গাইবান্ধা/লালমনিরহাট/রংপুর/ দিনাজপুর এর টিকেট দিতো একতা/ তিস্তা এর। ট্রেন বাহাদুরাবাদ পর্যন্ত যেত। সেখান থেকে ফেরীতে উঠে অপরপ্রান্তে বালাশি/ফুলছড়ি নেমে সেখানে আবার তিস্তা/একতা তে উঠতে হত। যদি কারো টিকেট প্রথম শ্রেণিতে কাটা থাকতো তাহলে ফেরীতেও তিনি প্রথম শ্রেণিতে যাতায়াত করতে পারতেন। ট্রেনের প্রথম শ্রেণি তখন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত না থাকলেও ফেরীর প্রথম শ্রেণী শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ছিল।
১৯৯৮ এ যমুনা বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হলে কালক্রমে এই রূটের চাহিদা কমতে শুরু করে। উত্তরাঞ্চলের মানুষ ট্রেন-ফেরী-ট্রেন এভাবে গন্তব্যে যাওয়ার চেয়ে সরাসরি গন্তব্যে যাওয়া স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করা শুরু করলো_এজন্য বাসের চাহিদা বাড়তে থাকে। পরবর্তীতে ২০০৩ এ সেতুর উপর দিয়ে পুরোপুরিভাবে ট্রেন চলাচল শুরু করলে কালপরিক্রমায় প্যাসেঞ্জার ফেরী সার্ভিস পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় একসময়। আন্তঃনগর ট্রেন দুটি যারা ফেরী কানেকটিং ছিল_তাদের মধ্যে সুন্দর একটি ডিস্ট্রিবিউশন হয়। তিস্তা নামটা থেকে যায় পূর্বাঞ্চলের জন্য যেটা এখন ৭০৭/৭০৮ নামেই চলছে। পশ্চিমপাড়ের তিস্তা এক্সপ্রেস প্রথমাবস্থায় তিস্তা নামে বেশ কিছুদিন চললেও পরে ৭৬৭/৭৬৮ দোলনচাপা নামে আত্মপ্রকাশ ঘটায়। একতা এক্সপ্রেস নামটা পশ্চিমের জন্য থেকে যায় , এদিকে পূর্বাঞ্চলের একতা এক্সপ্রেস ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস (৭৪৩/৭৪৪) নামে আত্মপ্রকাশ ঘটায়। ঐতিহাসিক উত্তরবঙ্গ মেইল বা ৭ আপ/৮ ডাউন এখনো পশ্চিমাঞ্চলে চলছে এই নামেই_রুট চেঞ্জ হয়ে পঞ্চগড় টু সান্তাহার চলছে। এই পাড়ের (ঢাকা-বাহাদুরাবাদ) ৭ আপ/৮ ডাউন হল এখন কার ভাওয়াল এক্সপ্রেস। আরেকটি ট্রেন ছিল ময়মনসিংহ থেকে বাহাদুরাবাদ চলতো যেটার নামছিল দেওয়ানগঞ্জ এক্সপ্রেস যেটা এখন দেওয়ানগঞ্জ কমিউটার নামে রুট চেঞ্জ করে চলছে ঢাকা অবধি।