সিনহা চমৎকার পুল খেলতো। দীর্ঘ সময় ধরে ওর সাথে পুল খেলেছি। মাঝে মাঝে এস এস এফের মেসে বাজিতে ও পুল খেলতো অন্য অফিসারদের সাথে।
একবার ফোন দিয়েছি বৃহস্পতিবার রাতে, বললো, স্যার মেসে পুল খেলছি। আমি বললাম তোর পার্টনার কে? স্বভাব সুলভ হাসি দিয়ে বললো, স্যার “আমার বন্ধু, রাশেদ” এটা কিন্তু জাফর ইকবালের সিনেমা “আমার বন্ধু রাশেদ” না সত্যি সত্যি আমার বন্ধু রাশেদ।
ওর খুব কাছের বন্ধু রাশেদ, শাহীনবাগ এলাকায় বাসা, মাঝে মাঝেই ওর সাথে পুল খেলতে আসতো। বেশির ভাগ সময়ে সিনহাই জিততো। বাজিতেই হোক আর এমনিতেই হোক গভীর রাত পর্যন্ত পুল খেলার পর ক্ষুধা লেগে যেতো। তখন আমরা সিনহার গাড়ি করে ঢাকা শহরে ফুড হান্টে বের হতাম।
মাঝে মাঝে কোথাও কিছু না পেলে সিনহা বলতো চলেন স্যার, মহাখালী মোড়ে গিয়ে ডিম-পরোটা খেয়ে আসি। একবার আমরা রাতে ঘুরতে ঘুরতে কোনো খাবার হোটেল খোলা না পেয়ে হঠাৎ আবিষ্কার করলাম সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল এবং হৃদরোগ ইন্সটিটিউটের মাঝের রাস্তার পাশে আনোয়ার মামার ‘চাইনিজ রুটির’ দোকান।
চাইনিজ রুটি দোকানদার আনোয়ার মামার দেয়া নাম, এটা হলো প্রথমে একটি তাওয়াই ডিম ভাজি করার সময়ে আগে থেকে বানানো রুটি ঐ ডিম ভাজির উপর দিয়ে সেকতে হয়। কিছুক্ষণের মধ্যে ডিমের উপরিভাগের সাথে রুটি আটকে যায় এবং রুটি ফুলতে থাকে, এরপরে আগে থেকে রান্না করে রাখা এক ধরনের সবজি কুচি কুচি করে কাটা মুরগীর মাংস সহকারে রুটির উপরে দিয়ে রোল বানিয়ে দিলেই হয়ে গেল আনোয়ার মামার ‘চাইনিজ রুটি’। অসম্ভব টেস্টি এই রুটি সিনহার অনেক পছন্দের ছিল। (Military Mavens)
একরাতে মেসে এসে দেখি সিনহা একা একা পুল খেলছে। বললাম, কিরে? একাই খেলছিস? বললো, স্যার একটু হাত নিশপিশ করছিলো, তাই একটু ঝালাই করে নিচ্ছি। আর তাছাড়া একা একা খেলে অনেক ট্রীকি শট রপ্ত করছি। আমি বললাম, দুইজন খেললে আরও ভালো হতো না। হো হো করে হেসে বললো, স্যার ‘কিছু খেলা একা খেলেই কনফিডেন্স বাড়াতে হয়’

এরপর দুজন বেরিয়ে গেলাম এয়ারপোর্ট রোডে। আমার মনে হয় সিনহার সাথে এই রোডে কতবার গিয়েছি তার ইয়ত্তা নেই। মহাখালী থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত যাওয়া এবং আসার রাস্তায় কোথায় ভাঙ্গা, কোথায় গর্ত, কোথায় ঢিবি, কোথায় রাস্তার বাকঁ সব মুখস্থ হয়ে গিয়েছিল। যে কারণে রাতের রেস করতে আমাদের কোনো অসুবিধাই হতো না।
ঐ রাতে আমরা আব্দুল্লাহপুর হয়ে বেড়িবাধের রাস্তা দিয়ে আশুলিয়ার দিকে যাচ্ছিলাম। অনেক রাত, রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা ও কম। কামারপাড়া পার হওয়ার পরে হঠাৎ সিনহা গাড়ি দাঁড় করিয়ে ফেললো। বললাম, কি হলো? বললো, স্যার, একটা লোক মনে হচ্ছে ভ্যান গাড়ি তুলতে পারছে না। তাকিয়ে দেখি একজন ভ্যানগাড়ি চালক, পাশের নিচু রাস্তা থেকে মালামাল বোঝাই ভ্যান মেইন রাস্তা উচু হওয়ার কারণে টেনে তুলতে পারছে না।
সিনহা দৌড়ে গিয়ে ধাক্কা দেয়া শুরু করলো, আমিও দৌড়ে গিয়ে হাত লাগালাম। বয়স্ক ভ্যানচালক অনেক খুশী হয়েছিল। এরপর আবার আমরা যাওয়া শুরু করলাম। সিগারেট খেতে গিয়ে দেখি লাইটার খুজে পাচ্ছি না। সিনহার পুরাতন গাড়ীর হিটার ও কাজ করে না।এদিকে কোনো দোকানও নাই, অথচ দুজনেরই সিগারেট খাওয়ার জন্য মন আকুপাকু করতেছে।
আমরা বেড়িবাঁধের রাস্তা ধরে বোটানিক্যাল গার্ডেনের পিছন দিয়ে মাজার রোড হয়ে মীরপুর রোডে আসলাম। কিন্ত দোকানই খোলা পাইলাম না। পরে এসে দেখি সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পাশে এসে দেখি আনোয়ার মামার দোকান খোলা। সেখান ‘চাইনিজ রুটি’ খেলাম, চা সিগারেট খেয়ে রওনা দিলাম। সিনহা বললো, স্যার, গাড়িতে তেলের বাত্তি তো জলে উঠছে (লো ফিউল ওয়ার্নিং লাইট)।
আমরা তখন মহাখালী বাসস্ট্যান্ডের সামনে গিয়ে গাড়িতে তেল নিলাম। আমি তেলের দাম পরিশোধ করতে গেলে সিনহা না করলো। আমি বললাম, সিনিয়র হিসেবে এটাতো আমার কর্তব্যের মধ্যে পড়ে, আর টাকা না থাকলে তখন আলাদা কথা।
সিনহা হাসতে হাসতে বললো, স্যার,”অনেকেই আমার গাড়িতে চড়ে, Feel নেয়, Chill করে মাগার তেল দেয় না”।
আমাকে বাসায় নামিয়ে দেয়ার সময়ে বললো,স্যার, আগামী সপ্তাহে রেডিসনে ডিজে পার্টি আছে, ৩০০০ টাকা টিকিট যাবেন তো!!
লেখক : Rafiq Kamal 