বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১১:৩৯ অপরাহ্ন

ই-পেপার

বাল্যবিয়ে নিরোধে প্রয়োজন সমন্বিত প্রচেষ্টা – এম এ মাসুদ

চলনবিলের আলো ডেস্ক:
আপডেট সময়: শনিবার, ৬ মে, ২০২৩, ৬:৩০ অপরাহ্ণ

বাংলাদেশে বিভিন্ন সামাজিক সমস্যার মধ্যে বাল্যবিয়ে অন্যতম। বাল্যবিয়ে একটি মেয়েকে সুরক্ষা তো দেয়ই না বরং ওই মেয়েটির শৈশব, কৈশোর ও জীবনের সকল আনন্দকে কেড়ে নেয়। যার নেতিবাচক প্রভাব গিয়ে পড়ছে- বিবাহিত কিশোরিদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর। বঞ্চিত হয় কিশোরীরা তাদের শিক্ষার আনন্দ থেকে। আঠারো বছরের আগে বিয়ে এবং কুড়ি বছরের আগে সন্তান জন্মদানের ফলে অপুষ্টিজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগতে হয় তাদের। গর্ভকালীন, প্রসবকালীন এবং প্রসব পরবর্তী জটিলতাসহ মা ও নবজাতকের থাকে মৃত্যু ঝুঁকি। শুধু তাই নয়, বালবিয়ের কারণে দেশে বাড়ছে জনসংখ্যা, দাম্পত্য জীবনে বাড়ছে অশান্তি আর ঘটছে পৃথক বসবাস ও বিচ্ছেদের মতো ঘটনা।
সাধারণত মেয়ের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা, স্কুলে যাওয়ার পথে বখাটেদের উৎপাত, বাবা মায়ের মৃত্যু, ভরণপোষণকে বোঝা মনে করা, বেশি লেখাপড়া করালে যৌতুকের অংকটা বেশ বড় হবে এমন ভাবনা, সর্বোপরি দারিদ্রতার মতো বিষয়গুলো দেশে বাড়িয়ে দিচ্ছে বাল্যবিয়ে। কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় আরো প্রকট করে তুলেছিল এ সমস্যাকে।
বিশ্বের বৃহত্তম বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের এক জরিপের তথ্যানুযায়ী মহামারির সময়ে ২০২০ সালে দেশে বাল্যবিয়ে ১৩% বৃদ্ধি পেয়েছে। জরিপের প্রমাণ মেলে দেশের গ্রামাঞ্চলে অবস্থিত মাধ্যমিক স্তরের স্কুল ও মাদ্রাসায় অধ্যয়নরত মেয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাওয়া।
গত ৩ মে জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা(ইউনিসেফ)-এর বাল্যবিয়ে নিয়ে করা এক প্রতিবেদন অনুযায়ী দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে ২৯ কোটি বাল্যবধূ আছে। বৈশ্বিক হিসাবে যা ৪৫ শতাংশ। আর দক্ষিণ এশিয়ায় বাল্যবিবাহে এখনো শীর্ষে বাংলাদেশ, যদিও বা গত বছরের তুলনায় একধাপ উন্নতি হয়ে এখন অবস্থান দাঁড়িয়েছে পঞ্চম এবং বিশ্বে অষ্টম। দেশে বাল্যবিয়ে কমা সত্ত্বেও ৫১ শতাংশ তরুণীরই বিয়ে হয় তাদের শৈশবে। দেশে ১৮ বছরের আগেই বিয়ে হয়েছে ৩ কোটি ৪৫ লাখ নারীর আর ১৫ বছরের আগেই বিয়ে হয়েছে ১ কোটি ৩ লাখ কিশোরীর। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সত্ত্বেও বাল্যবিয়ের এমন সংখ্যা সত্যিই বিস্ময়কর।
জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের দেওয়া নতুন তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ১৫ থেকে ১৯ বছরে প্রতি হাজার বালিকার মধ্যে ৭৪ জন কিশোরী গর্ভধারণ করেন এবং সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে প্রতি লাখে মারা যান ১২৩ জন মা।
জনবিজ্ঞানী আর এম ডিংকেল ‘এডুকেশন এন্ড ফার্টিলিটি ইন দ্য ইউএসএ’ নামক এক নিবন্ধে ষাট দশকে মার্কিন জনগণের মধ্যে শিক্ষা ও প্রজননের মধ্যে সম্পর্ক খুঁজতে গিয়ে লক্ষ্য করেছেন- পুরুষের তুলনায় নারীর শিক্ষা প্রজননের সাথে বেশি সম্পর্কযুক্ত।
শিক্ষা অর্জন না করেই বাল্যবিয়ে বাড়তে থাকলে তা দেশের জনসংখ্যাকে বাড়িয়ে তোলার পাশাপাশি জনসংখ্যার নির্ভরশীলতার অনুপাত বৃদ্ধি পাবে। নির্ভরশীল জনসংখ্যা আয়ের বিরাট অংশ খেয়ে ফেলবে। ফলে সঞ্চয় কম হবে, সঞ্চয় কম হলে মূলধন গঠন ও বিনিয়োগ কম হবে, বিনিয়োগ কম হলে উৎপাদন কম হবে, উৎপাদন কম হলে আয় কম হবে, আয় কম হলে সঞ্চয় কম হবে —–। এভাবে অর্থনীতি দারিদ্রের দুষ্টচক্রে ঘুরপাক খাবে।  জীবনযাত্রার মান নিম্নমুখী হবে, বেকারত্বের হার বৃদ্ধি পাবে, অর্থনৈতিক অগ্রগতি মন্থর হবে, প্রাকৃতিক সম্পদের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টিসহ খাদ্য, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, শিক্ষা এবং বিভিন্ন সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি করবে।
কিন্তু দুঃখজনক হলো, আইনানুযায়ী ছেলে-মেয়েদের বিয়ের বয়স যথাক্রমে ১৮ ও ২১ বছর হলেও তা মানছেন না অনেকেই। মা,বাবা কিংবা অভিভাবকরা তাদের সন্তানের বয়স লুকিয়ে কিংবা ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌরসভার জনপ্রতিনিধিদের চাপে ফেলে কিংবা জন্ম নিবন্ধন শাখায় কর্মরত কর্মচারীদের উৎকোচ দিয়ে নামের সামনে-পিছনে একটু এদিক-সেদিক করে নতুন জন্মনিবন্ধন অথবা আগের জন্মনিবন্ধনের জন্মতারিখ পরিবর্তন করে নিয়ে কিশোর, কিশোরিদের বিয়ের বয়স করে নিচ্ছেন। আইন রয়েছে এবং স্থানীয় প্রশাসন অভিযানও চালাচ্ছে। কিন্তু তারপরেও বন্ধ হচ্ছে না বাল্যবিয়ে।
তাই বাল্যবিয়ে নিরোধে অভিভাবকদের পাশাপাশি শিক্ষক, সমাজের ইমাম, পুরোহিত, বিবাহ রেজিষ্ট্রার, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, গণমাধ্যমকর্মী এবং প্রশাসনসহ এগিয়ে আসতে হবে সবাইকে। তবেই এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে বাল্যবিয়ে থেকে অভিশাপমুক্ত হবে সমাজ ও দেশ।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com