পাবনার ভাঙ্গুড়ায় জুয়ারিদের আটকের সময় উদ্ধার কৃত টাকায় পকেট ভারি করেছে ভাঙ্গুড়া থানা পুলিশ। সেই সাথে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে মধ্য রাতে মোবাইল কোর্ট বসিয়ে রাতের আধারে ছেড়ে দিলেন জুয়ারিদের । এমন অভিযোগ উঠেছে ভাঙ্গুড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. রাশিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও জুয়ারিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার (৫ এপ্রিল ) রাত সারে দশ টার দিকে উপজেলার খানমরিচ ইউনিয়নের চন্ডিপুর বাজারে মো. সামছুল হকের চায়ের দোকানে অভিযান চালায় ভাঙ্গুড়া থানা পুলিশ। এসময় দু’জন দোকানদারসহ উপস্থিত ৭ জনকে আটক করে থানা পুলিশ । আটককৃতরা হলো- হেলেঞ্চা গ্রাসের মৃত ছলিম ফকিরের ছেলে চা দোকানি মো. সামছুল (৪৫), বৃদ্ধমরিচ গ্রামের মৃত আব্দুল ছাত্তারের ছেরে মো. মকুল সরকার (৫০), আজাহার ফকিরের ছেলে ইদ্দিস আলী বাবলু (৪৫), ছলিম মণ্ডলের ছেলে আব্দুর রহিম (৪০), মৃত তাজেম এর ছেলে দোকানি মো. বিল্লাল হোসেন (৪২), খানমরিচ গ্রামের মাহাতাব সরকারের ছেলে নজরুল সরকান (৪৬) ও শ্বশুর বাড়িতে বেরাতে আসা উল্লাপাড়া থানার জামাল হোসেন (৪৩)।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, আটককৃতদের কাছে থাকা মোবাইল ফোন ও নগদ প্রায় ৪০ হাজার টাকা নিয়ে নেয় পুলিশ । এর পর সেখানে উপস্থিত হয় ইউপি চেয়ারম্যন ও এক ইউপি সদস্য। সেখানে ঘন্টা ব্যপি চলে আটককৃতদের ছাড়ানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হন চেয়ারম্যার মনোয়রর হোসেন খান মিঠু। রাত ১২ টায় ওসির নির্দেশে আটককৃতদের নিয়ে আসা হয় থানায়। থানা হাজতে আটকে রেখে ওসি ও চেয়ারম্যানের চলে প্রায় এক ঘন্টা খানেক গোপন আলাপ। আটককৃতদের অভিযোগ চেয়ারম্যানের কাছে ২ লক্ষ টাকা দাবি করে ওসি। শেষে ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকায় মিমাংসা হয়। আলাপ শেষে আটককৃতদের থানা থেকে বের করে পুলিশের গাড়িতে করে নিয়ে যায় উপজেলার সদর ইউনিয়নের নৌবাড়িয়া ব্রীজে। তখন বাজে প্রায় রাত ১ টা। কিছু সময় পর সেখানে উপস্থিত হয় ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নাহিদ হাসান খান। সেখানে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে জন প্রতি ২০০ টাকা হিসাবে ৭ জনকে মোট ১৪ শ টাকা জরিমানা করে ছেরে দেন। কিন্তু আটকের সময় উদ্ধার কৃত প্রায় ৪০ হাজার টাকা পুলিশের পকেটেই থেকে যায়। সে টাকা জব্দ দেখায়নি থানা পুলিশ।
আটককৃত আব্দুর রহিম বলেন, আটকের সময় পুলিশ আমার কাছে থাকা ৯ হাজার টাকা নিয়ে নেয় তা ফেরত চাইলে বলেন জব্দ করা হয়েছে।
আটককৃত বিল্লাল বলেন, আমার কাছে থাকা ১১ হাজার টাকা আটকের সময় পুলিশ নিয়ে নেয় তা ফেরত চাইলে বলেন জব্দ করা হয়েছে।
চা দোকানি সামছুল বলেন, আমার বউ অসুস্থ্য তাকে চিকিৎসার জন্য ৮ হাজার টাকা লোন করে পকেটে রেখে ছিলাম সে টাকা পুলিশ নিয়ে নেয় আর ফেরত দেয় নাই।
তারা আরো বলেন, চেয়ারম্যান তার পকেট থেকে ওসিকে টাকা দিয়েছে বর্তমান চেয়ারম্যান ১ লক্ষ্য ৩০ হাজার টাকার জন্য আমাদের খুব চাপ দিচ্ছে।
খানমরিচ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনোয়ার হোসেন খান মিঠু সকল বিষয় অম্বীকার করে বলেন, রাত সাড়ে ১০ টার দিকে নৌবাড়িয়া ব্রীজের উপর মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানা করে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয় সেখানে আমি উপস্থিত ছিলাম।
এ বিষয়ে ভাঙ্গুড়া থানার তদন্ত ওসি মো. মিজানুর রহমান বলেন, আটকের সময় তাদের কাছে কোন টাকা পয়সা পাওয়া যায় নাই।
ভাঙ্গুড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. রাশিদুল ইসলাম আটককৃতদের থানায় আনার বিষয় অস্বীকার করে বলেন, ঘটনার স্থান থেকে থানায় আনার পথে নৌবাড়িয়া ব্রীজের উপর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে তাদের জরিমানা করে ছেড়ে দেওয়া হয়। উদ্ধারকৃত টাকার বিষয়ে ও ঘুষের টাকার বিষয়ে তিনি কিছু জানেনা বলে জানান। গভির রাতে মোবাইল কোট করার বিষয়ে তিনি বলেন, আটককৃতদের মধ্যে একজন বয়স জ্যৈষ্ঠ অসুস্থ ছিল তাই এসপি সারের সাথে আলাপ করে করেছি।
ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নাহিদ হাসান খান মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে জরিমানা করার কথা স্বীকার করেন।