সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলায় দুধের চেয়ে গোখাদ্যের দাম বেশি। ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে প্রায় ১৯১৬টি গোখামার গড়ে উঠেছে। খামারগুলোতে গাভীর পাশাপাশি ষাঁড়ও লালনপালন করছেন খামারীরা। উল্লাপাড়ায় দুধ উৎপাদনে সম্ভাবনাময় হলেও গোখাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় দুধ উৎপাদনে গাভীর খামার বাড়ছে না। খামারিরা জানান, খাদ্যের খরচের তুলনায় দুধের মূল্য পাওয়া যাচ্ছে না। তবে গোখাদ্যের দাম বেশি হলেও আগের চেয়ে গরু লালন-পালনকারীর সংখ্যা বেড়েছে। অনেকে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে গোখামার করেছেন।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকে জানা যায়, একটি পরিবারে তিনটি গরু থাকলেই সেটি খামার হিসেবে গণ্য। ১৯১৬টি খামারের মধ্যে সরকারিভাবে নিবন্ধিত আছে ৮০টি। গরু আছে ১ লাখ ৩১ হাজার ৫০০। ব্যাংক থেকে ঋণ সহায়তা পেতে ১৫৫ জনকে প্রত্যয়নপত্র দেওয়া হয়েছে। তবে প্রত্যয়নপত্র ছাড়াও অনেক গোখামারি ব্যাংক থেকে ঋণ পেয়েছেন। গোখাদ্যের সংকট কাটিয়ে উঠতে খামারিরা উন্নত জাতের ঘাসের চাষ করছেন। এছাড়া বিকল্প হিসেবে ঘাস আর ভুট্টা মিশিয়ে ‘সাইলেছ’ তৈরি করে গরুকে খাওয়ানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ১ কিজি সাইলেছ তৈরিতে খরচ হয় ১০ টাকা, যা ১ কিজি ভুষি বা খড়ের চেয়েও বেশি উপকার, দামেও কম। অন্যদিকে ইউনিয়নগুলোতে স্বেচ্ছাসেবীদের দিয়ে গবাদি পশুদের ভ্যাকসিন ও কৃত্রিম প্রজনন বীজ দেওয়া হয়ে থাকে। উল্লাপাড়া ইউনিয়নের পংরৌহা গ্রামের মো. রেজাউল করিম গাভী ও ষাঁড় মিলে ১১টি গরু লালন-পালন করছেন। আমিরুল ইসলাম পাঁচটি ও খোরশেদ আলম ষাঁড় ও গাভী মিলে ১৫টি গরু লালন-পালন করছেন। তারা জানান, সব ধরনের গোখাদ্যের দাম আগের চেয়ে অনেক বেশি। রাখালদের মজুরিও বেড়েছে। সব মিলিয়ে গরু লালনপালনে খরচ বেড়েছে প্রায় তিন গুণ। এখন গোখামারে লোকসান গুনতে হচ্ছে। বাঙ্গলা ইউনিয়নের মাঝিপাড়া গ্রামের মো.পরান আলী জানান, সব দুধ ৪৪ টাকা কেজি হিসেবে গ্রামের দুগ্ধ সমিতিতে বিক্রি করা হয়। এতে খামারিরা লাভবান হচ্ছেন না। দুধের চেয়ে গোখাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় গোখামারিদের লোকসান হচ্ছে। মোহনপুর ইউনিয়নের সুজা গ্রামের আবদুল মান্নান জানান, নিজ বাড়িতে উন্নত জাতের ৯টি গাভী পালন করছেন। প্রায় এক মণ দুধ পাচ্ছেন। তার নেতৃত্বে ২২ জন মিলে গাভী পালনকারী একটি সমিতি গঠন করেছেন। খাদ্যের তুলনায় দুধের দাম কম।
উল্লাপাড়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকতা ডা.স্বপন চন্দ্র দেবনাথ বলেন, গোখাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় খামারিরা তেমন লাভবান হচ্ছেন না। এখানকার গরু এবং দুধ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি হয়। খামারিদের প্রশিক্ষণ নেওয়াসহ নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত হতে হবে। এছাড়াও গরুর রোগব্যাধির বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।