সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া পৌরসভায় মডেল মসজিদ ভবন নির্মাণে ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে প্রায় ১১ কোটি ৬৯ লাখ ৩৪ হাজার ৮০০ টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। সেই নির্মাণাধীন মডেল মসজিদ ও ইসলামিক শিক্ষা কেন্দ্র ভবনের ভিত্তি (বেজ) ও মূল কলাম নির্মাণে অনিয়ম ও ত্রুটির অভিযোগ আনা হয়েছে। ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের এ ব্যাপারে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। মূল কলাম ঢালাই যথাযথ না হওয়ায় বেশ কয়েকটি আঁকা-বাঁকা ও ত্রুটিপূর্ণ রয়ে গেছে। এলাকার সাধারণ জনগনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক মীর মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে নির্মাণাধীন মসজিদ ভবনটি পরিদর্শন করেন। এ সময় কলাম তৈরির ত্রুটি ধরা পড়ায় তিনি সিরাজগঞ্জ স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেনকে আহ্বায়ক করে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন।
মডেল মসজিদ নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করছে সিরাজগঞ্জ জেলা গণপূর্ত বিভাগ। ভবনটি নির্মাণের দায়িত্ব পেয়েছে ঢাকার মোহাম্মদপুরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ফার্সট এসএস কনস্ট্রাকশন প্রাইভেট লিমিটেড। ২০১৯ সালের ১৩ জুন এই প্রতিষ্ঠান উল্লাপাড়া পৌরসভার বাসটার্মিনাল এর নিটকতম পাবনা-বগুড়া মহাসড়কের পাশে এই মসজিদ ও ইসলামিক শিক্ষা কেন্দ্রের ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়েছে।
এলাকার সাধারণ জনগণ অভিযোগ করেন, ভবনের বেজ ঢালাই ও কলাম নির্মাণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শুরু থেকেই অনিয়ম করছে। এ কারণে এর ভিত্তি (বেজ) ঢালাই ও মূল কলামগুলো নির্মাণে যথেষ্ট ত্রুটি রয়ে গেছে। এতে ভবিষ্যতে ভবনটি যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়বে। অভিযোগে আরও বলা হয়, সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের লোকজন বিষয়টি ধামাচাপা দিতে দ্রুত নিচের বেজ ও আঁকা-বাঁকা কলামের নিচু অংশ বালু ফেলে দ্রুত ভরাট করে ফেলেছে। কিন্তু সাম্প্রতিক বৃষ্টির কারণে কলামের পাশে বালুর অনেক অংশ ধুয়ে গেলে ত্রুটিপূর্ণ আঁকা-বাঁকা কলামগুলো লোকজনের নজরে আসে। বিষয়টি তারা উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. উজ্জ্বল হোসেনকে অবহিত করেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. উজ্জ্বল হোসেন জানান, বিষয়টি তিনি সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক মীর মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমানকে অবহিত করেন। জেলা গণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়ে জেলা প্রশাসক ভবন নির্মাণকাজ পরিদর্শন করেন। এসময় ইউএনও ও উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার মো. আবু সায়েম তার সঙ্গে ছিলেন। জেলা প্রশাসক ত্রুটিপূর্ণ কলামগুলো দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং সিরাজগঞ্জ স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক (ডিডিএলজি) মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেনকে আহ্বায়ক করে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে সিরাজগঞ্জ জেলা গণপূর্ত বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. জাহিদ হাসান জানান, সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার মো. শাহিনুর ইসলাম তার কার্যালয়ের লোকজনকে না জানিয়ে কলাম ও বেজ ঢালাই দিয়ে বালু ভরাট করেন। ফলে প্রাথমিকভাবে বিষয়টি তাদের নজরে আসেনি।
এ ব্যাপারে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক মীর মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান জানান, তিনি স্থানীয়দের অভিযোগের প্রেক্ষিতে নির্মাণাধীন ভবনটি পরিদর্শন করে এর ঢালাইকৃত কলামগুলো ত্রুটিপূর্ণ দেখতে পেয়েছেন। বিষয়টি তদন্তের জন্য ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করে দিয়েছেন। কমিটির প্রতিবেদনের প্রে¶িতে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে ডিডিএলজি মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন জানান, এখনও তিনি চিঠি পাননি। চিঠি পেলে দ্রুত তদন্ত করে প্রতিবেদন দেবেন। এ বিষয়ে ফার্সট এসএস কনস্ট্রাকশন প্রাইভেট লিমিটেডের ঠিকাদার মো. শাহিনুর ইসলামের সঙ্গে মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন ধরেননি।