“শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড”। তাই কোন জাতিকে উন্নতির শিখরে পৌঁছাতে হলে সেই জাতিকে শিক্ষিত করে তুলতে হবে। তাই বলা হয়ে থাকে ‘যদি কোন জাতিকে ধ্বংস করতে চাও, সর্বপ্রথম সে জাতির প্রাথমিক শিক্ষাকে ধ্বংস করে দাও। যদি কোন জাতিকে পিছিয়ে রাখতে চাও, সর্বপ্রথম সে জাতির প্রাথমিক শিক্ষকদের অবমূল্যায়ন করো। আর তাই আমাদের দেশের সরকারের কাছে এই প্রাথমিক শিক্ষার বিষয়টিতে আলাদা গুরুত্ব থাকলেও পাবনার ভাঙ্গুড়ায় বিদ্যালয়ের ঝুঁকিপূর্ণ কক্ষে চলছে পাঠদান। বিদ্যালয়টির ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ছে। দেয়ালের ইট বের হয়ে গেছে। শিক্ষার্থীরা ভয়ে ক্লাসে বসছে না। এমন করুণ দশা উপজেলার খানমরিচ ইউনিয়নের গবিন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের।
জানা গেছে, ১৯৪৭ সালে স্থানীয়দের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় বিদ্যালয়টি। পরে ১৯৭১ সালে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ হয় এবং ১৯৯২ সালে বিদ্যালয় ভবনটি তৈরি হয়। স্থানীয় শতাধিক শিক্ষার্থী বিদ্যালয়টিতে পড়াশোনা করছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ভবনের ছাদের পলেস্তারা খসে পড়েছে। বেরিয়ে গেছে ভেতরের ইট। পিলারে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। এ ভবনের ৩টি শ্রেণিকক্ষ ঝুঁকিপূর্ণ। এখানেই প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির পাঠদান করা হচ্ছে। বিদ্যালয়টিতে ছোট ছোট অপর দুটি টিনশেড ঘর থাকলেও সেগুলোও বয়সের ভারে জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। ফলে সবসময় দুর্ঘটনার আতঙ্কে থাকেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। অবস্থা দিন দিন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন জেনেও সেখানে ক্লাস নেয়া হচ্ছে।
বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস চলাকালে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা হলে জুলকার নাইম ও তাহিয়া খাতুন জানায়, ভবনে ফাটল। ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ে। যেকোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে তারা ভয়ে ভয়ে ক্লাস করছে। ফলে পাঠদানের সময় শিক্ষকদের আলোচনায় তারা মনোযোগ দিতে পারছে না। শ্রেণিকক্ষের ছাদের পলেস্তারা খসে প্রায়ই নিচে পড়ে। ক্লাস শেষ করে স্যার চলে গেলেই আমরা ক্লাস থেকে বের হয়ে যাই। কেননা আমরা সব সময় ভয়ে থাকি, কখন ছাদের পলেস্তারা ভেঙে মাথায় পড়ে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বারবার তারা শিক্ষকদের অনুরোধ করেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ এ ভবনে ক্লাস নেওয়া উচিত নয়। তারপরও ৯ বছর ধরে ঝুঁকি নিয়ে পড়াতে হচ্ছে। যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। একাধিকবার সংশ্লিষ্ট বিভাগে অভিযোগ করেও কোনোও ব্যবস্থা না নেয়ায় ঝুঁকির মধ্যেই মূলভবনে পরিচালিত হচ্ছে পাঠদান কার্যক্রম। পিলার ও গ্রেটবিম গুলোতে বিস্তৃত ফাটল দেখা দেয়ায় ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। শিক্ষার্থীরা ভয়ে ভয়ে ক্লাস করে থাকে। ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় অনেক অভিভাবক তাদের ছেলেমেয়েকে বিদ্যালয়ে পাঠিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকেন।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মোজাহীদ আলম সৈয়দ প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, আমাদের বিদ্যালয়টির ভবন বেশ পুরনো। এর অবস্থা জরাজীর্ণ। শ্রেণিকক্ষ পাঠদানের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। শিক্ষকদের বসার রুম ও ভবনটির বাইরের প্রায় সব স্থানের পলেস্তারা খসে পড়েছে। কর্তৃপক্ষের কাছে এ বিষয়ে আবেদন করেও কোনো ফল পাচ্ছি না। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে রাখা সম্ভব নয়। যে কোনো সময় বড় কোনো দুঘর্টনা ঘটতে পারে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো: আবুল কালাম জানান, বিদ্যালয় ভবনের সব কক্ষ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করছে। শিক্ষার্থীরা সব সময় আতঙ্কিত থাকে। উপজেলা প্রকৌশলীকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। হয়তো শিগগিরই পাকা ভবন বরাদ্দ হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মাদ নাহিদ হাসান খান প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত নয়। তবে খোঁজ নিচ্ছি। প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে সঙ্গে নিয়ে আমি দূরত্বই সরোজমিনে দেখে পরবর্তী ব্যবস্থা প্রহণ করব।
#CBALO / আপন ইসলাম