চাটমোহর উপজেলায় বিভিন্ন বিলে ফাঁদ পেতে বক শিকার করছে অসাধু চক্র। কিছু অসাধু চক্রের জন্য ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের চিরচেনা বক পাখী ।
রবিবার (২১ আগস্ট) ভোরে সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নে গোপালপুর বিলে অভিনব কৌশলে ধান খেতের মধ্যে বেতের পাতা আর কলা পাতা দিয়ে বানানো হয়েছে ছাউনি। সে ছাউনির নিচে রয়েছেন শিকারিরা। আর বাঁশের কঞ্চিতে তাঁরা বেঁধে রেখেছেন বক। ছাউনির ভেতর থেকে শিকারিরা বাঁধা বকগুলোকে নাড়াচ্ছেন। সে ডানা ঝাপটানো দেখে আশপাশ থেকে ছুটে আসছে বকের ঝাঁক। ছুটে আসা বকগুলো ছাউনির ওপর বসার পর নিচে থাকা শিকারিরা সেসব বক ধরে খাঁচায় ভরছেন। এছাড়াও বিলের পানিতে কারেন্ট জাল পেতেও পাখি শিকার করা হচ্ছে মর্মে খবর পাওয়া যাচ্ছে। পাখিরা বিলে নেমে সাঁতার কাটার সময় শিকারিরা তাড়া করেন। তাড়া খেয়ে পাখিরা জালে আটকা পড়ে।
ভাদ্র, আশ্বিন ও কার্তিক মাসে সকাল ৬ টা থেকে ৮ টা পর্যন্ত আমন ধানে জমে থাকা পানিতে ছোট মাছসহ পোকাগমাকড় খেতে আসে বিভিন্ন প্রজাতির দেশি পাখি। এসব পাখি শিকারে মেতে উঠেছে অসাধু কিছু স্থানীয় শিকারীরা। প্রতিদিন তারা ফাঁদ পেতে পাখি ধরছে। বিশেষ করে বকের প্রজনন কাল হওয়ায় বেশিরভাগ ধরা পড়ছে ছানা বকগুলো। এলাকাবাসীর অভিযোগ, সঠিক নজরদারি ও জনসচেতনতার অভাবে পাখি শিকার বেড়েছে।
গ্রামের কিছু মানুষের ধারনা, বকের মাংস খেলে শরীরের বিভিন্ন প্রকারের বাত রোগ নির্মূল হয়। তাছাড়া অনেকেই বকের মাংস খেতে ভালবাসেন। এ কারনে এলাকায় বকের মাংসের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
বক শিকারি সোহেল রানা বলেন, প্রতিদিন আমরা ১০ থেকে ১২ জন বক শিকার করি। আমি প্রতিদিন ৭-৮ টি বক স্বীকার করি। এক জোড়া বক আকার ভেদে ১৫০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হয়। পাখি শিকার নিষিদ্ধ সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা বলেন, বক শিকার করা যে অপরাধ, এ বিষয়ে আমাদের জানা ছিল না।
বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ অনুযায়ী পাখি শিকারের জন্য এক বছর পর্যন্ত কারাদন্ড অথবা সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় দন্ডের বিধান রয়েছে। তা ছাড়া একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটালে সর্বোচ্চ তিন বছর পর্যন্ত কারাদন্ড অথবা সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হওয়ার বিধান রয়েছে।
চাটমোহর উপজেলার উদ্ভিদ ও প্রাণী সম্পদ, উপ-সহকারী কর্মকর্তা মোঃ মনিরুল ইসলাম বলেন, পাখি শিকার করা দন্ডনীয় অপরাধ। পাখির আবাসস্থল ও বিচরণ ক্ষেত্র সংকুচিত হয়ে আসছে। কীটনাশকের ব্যবহার এবং অবাধে পাখি শিকারের কারনে দিন দিন পাখির সংখ্যা ও প্রজাতি কমছে।
এ বিষয়ে চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছাঃ মমতাজ মহল বলেন, এটা দন্ডনীয় অপরাধ। এ ধরনের শিকারিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিষয়টি প্রাণিসম্পদ দপ্তরকে নজর রাখতে বলা হবে, পাশাপাশি জনসাধারণকে সচেতন হতে হবে।