যশোরের অভয়নগরে শীত নামতেই শুরু হয়েছে ঐতিহ্যবাহী কুমড়োবড়ি তৈরির উৎসব। ভোরের রোদ উঠলেই উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের গৃহবধূরা দল বেঁধে বড়ি বসাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। উঠান, বারান্দা, ছাদ, যেখানে খালি জায়গা পাওয়া যায় সেখানেই সারি করে সাজানো হয় বড়ি। গ্রামজুড়ে এখন কুমড়োর সুবাসে মুখরিত এক ভিন্ন উৎসবের আবহ।
প্রাচীনকাল থেকে চালকুমড়া ও মাসকলাই মিশিয়ে তৈরি এই বড়ি শীতকালীন খাবারের মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয়। এর সঙ্গে গৃহস্থালির প্রয়োজন, বাজারে বাড়তি আয় সব মিলিয়ে কুমড়োবড়ি এখন অভয়নগরের নারীদের একটি শক্তিশালী কুটিরশিল্পে পরিণত হয়েছে।
শ্রীধরপুর, প্রেমবাগ, শুভরাড়া, নওয়াপাড়া, পায়রা ও রাজঘাটসহ বিভিন্ন এলাকায় নারীদের ব্যস্ততা এখন চোখে পড়ার মতো। অনেকে পরিবারিক প্রয়োজন মিটিয়ে অতিরিক্ত বড়ি বিক্রি করে সঞ্চয় করছেন ভালো অঙ্কের টাকা। বাজারে বর্তমানে মাসকলাই বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১৫০–২০০ টাকা এবং চালকুমড়া ৭০–১০০ টাকায়। ৫ কেজি কুমড়া ও ২ কেজি মাসকলাই মিশিয়ে তৈরি হয় উন্নতমানের কুমড়োবড়ি। উৎপাদন খরচ যেখানে ১২০–১৭০ টাকা, সেখানে বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২০০–২৫০ টাকায়।
আগে বড়ি বানাতে শিল,পাটা বা ঢেঁকির ওপর নির্ভর করতে হতো, যা ছিল সময়সাপেক্ষ ও শ্রমসাধ্য। এখন গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় মেশিন চালু হওয়ায় ডাল বাটাইয়ের ঝামেলা কমে গেছে, বাড়ছে উৎপাদনও। শ্রীধরপুর দিঘীরপাড় গ্রামের নুরজাহান বেগম বলেন, আগে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ডাল বাটতে হতো। এখন মেশিন থাকায় অল্প সময়ে বেশি বড়ি বানাতে পারি। এতে আয়ও বাড়ছে।
বড়ি শুকানোর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ রোদ পাওয়া। সকালে বসানো বড়ি দুই থেকে তিন দিন টানা রোদে শুকালেই খাওয়ার উপযোগী হয়। রোদ কম থাকলে সময় বাড়ে। শুকানোর পর বড়িগুলো সংরক্ষণ করে রাখা হয় বছরের প্রায় পুরো সময়।
স্থানীয়রা মনে করেন, সরকারি সহায়তা, প্রশিক্ষণ এবং ব্র্যান্ডিং করা গেলে কুমড়োবড়ি অভয়নগরের অন্যতম পরিচিত কুটিরশিল্প হয়ে উঠতে পারে। এতে যেমন নারীদের আর্থিক স্বাবলম্বিতা বাড়বে, তেমনি স্থানীয় অর্থনীতিও হবে আরও শক্তিশালী।