সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:২৭ অপরাহ্ন

ই-পেপার

চলনবিলে পানি সংকট, হুমকির মুখে মাছ ও জীববৈচিত্র্য

মোঃ মুন্না হুসাইন, ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি:
আপডেট সময়: মঙ্গলবার, ২৬ জুলাই, ২০২২, ৪:৪৩ অপরাহ্ণ

দেশের সর্ববৃহৎ বিলাঞ্চল সিরাজগঞ্জের তাড়াশের চলন বিল। যার নাম শুনলেই এক সময় ভয়ে গা শিউরে উঠত। উত্তর জনপদের এই বিলের উত্তাল ঢেউয়ের গর্জনে ঘুম ভাঙত বিলপারের বাসিন্দাদের। কিন্তু এখন আর আগের মতো সেই উত্তাল ঢেউ নেই। কারণ প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ ঘনমিটার পলি পড়ে ও প্রভাবশালীদের দখলদারিত্বে দেশের মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে এই চলন বিল। দেখা দিয়েছে পানি সংকট। হুমকির মুখে পড়েছে চলন বিলের মাছ ও জীববৈচিত্র্য।
স্থানীয় মৎস্য অফিস ও মৎস্যজীবীদের সাথে কথা বলে জানা যায়,সিরাজগঞ্জ নাটোর ও পাবনা জেলাজুড়ে বিস্তৃত এই চলন বিল। বিশেষ করে সিরাজগঞ্জ উপজেলার অধিকাংশ স্থানজুড়ে এর অবস্থান। এক সময় এই বিলের ঐতিহ্য ও দেশীয় মাছ সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করত। চোখ-মন ছুঁয়ে যেত অতিথি পাখির কল কাকলিতে। আবার প্রশান্ত বুকের প্রাকৃতিক নৈসর্গকতায় দুচোখ ভোরে যেত। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন ও বিলের মাঝে যত্রতত্রভাবে পুকুর খননের কারণে সংকুচিত হয়ে ঐতিহ্যবাহী চলন বিল তার যৌবনকে হারিয়ে ফেলেছে। আর এবছর সময়মতো অধিক বৃষ্টিপাত না হওয়ায় বিলে দেখা দিয়েছে পানি সংকট। হুমকির মুখে পড়েছে চলন বিলের মাছ ও জীববৈচিত্র্য।
মহেশরৌহালী গ্রামের কৃষক তোফায়েল  ইসলাম ও দুলাল হোসেন জানান, তারা প্রতি বছর বন্যায় সময় বিলে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু এবছর বিলে পানি কম থাকায় মাছের দেখা মিলছে বললেই চলে। এতে বিল পাড়ের বাসিন্দাদের সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে।
বিরল হালী গ্রামের রসুলদী ও ছানা বাকী বলেন, বর্ষার সময় চলন বিলের অধিকাংশ লোক মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। আর বর্ষা পরবর্তী সেই বিলে হয় ধান চাষাবাদ। কিন্তু এবছর বিলে পানি সংকট থাকায় দেখা দিয়েছে মাছের অভাব। তাই মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতে না পেরে অনেককেই সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সেই সাথে বাড়ছে বেকারত্ব। তাছাড়া বন্যা না হলে জমির উর্বরতা অনেকাংশে কমে যাবে। চলন বিলের কৃষিতে বিপ্লব ও উন্নয়ন হ্রাস পাবে। চাষাবাদে দেখা দিবে মন্দাভাব।
 আগে চলন বিলে আষাঢ়-শ্রাবণ মাসেই চলন বিলে পানির উত্তাল ঢেউয়ের শব্দ শোনা যেত। কিন্তু এবছর চলন বিলে পানি কম থাকায় বিলের মুক্ত জলে অতিরিক্ত তাপদাহে মাছের ডিম নষ্ট হয়ে গেছে। এতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ, কাঁকড়া, শামুকসহ ছোট পোকামাকড় বিলুপ্তির পথে। হুমকির মুখে পড়েছে জীববৈচিত্র্য। তিনি চলন বিলের মা মাছ রক্ষায় নদী-নালা খনন ও প্রভাবশালীদের হাত থেকে বিলকে রক্ষার পরামর্শ দিয়েছেন।
সত্তর দশকেও এই বিলে পর্যাপ্ত পরিমাণে মাছ পাওয়া যেত। হাত দিয়েই মাছ ধরা যেত। এক সময় চলন বিলে একশ ত্রিশ প্রজাতির মাছ পাওয়া যেত। পরিবেশ বিষয়ক এক গবেষণায় বলা হয়েছে- একান্ন প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হতে চলেছে। বিলুপ্ত হওয়া মাছের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ভেদা, শংক, ফাঁদা, চার প্রকারের পুটি, পানি রুই, বাচা, গজার প্রভৃতি।
তাড়াশ উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মশগুল  হোসেন  বলেন, চলন বিল নিয়ে এখন আর গর্ব করার কিছু নেই। কারণ দখলদারদের দৌরাত্ম্য আর যত্রতত্রভাবে বিলের মাঝে পুকুর খননে এই ঐতিহ্যবাহী বিল তার যৌবন হারাতে বসেছে।
তিনি আরো বলেন, এবছর সময়মতো বৃষ্টিপাত কম হয়েছে। তাই মাছের ডিমগুলো রেণুতে আসেনি। এছাড়া আষাঢ় মাসজুড়ে অতিরিক্ত তাপদাহে চলন বিলের মাছ ও ডিম নষ্ট হয়ে গেছে। আর চলন বিলের পানির উৎস অধিক বৃষ্টিপাত ও উজানে ঢলের পানি। যেহেতু বৃষ্টিপাত কম সেহেতু চলন বিলে প্রয়োজনের তুলনায় এখন পর্যন্ত পানির সংকট রয়েছে। তবে এখনও সময় রয়েছে, যদি পানি বৃদ্ধি পায় তবে মাছের সাময়িক যে সমস্যা রয়েছে তা সমাধান হবে বলে তিনি আশা করেন।
তিনি আরো বলেন, এবছর চলন বিলে মাছের উৎপাদন বাড়াতে শুরুতেই উপজেলা প্রশাসন ও মৎস্য অফিসের যৌথ অভিযানে তাড়াশ পৌর থেকে ১০ নম্বর ব্রিজ পর্যন্ত ১০ টি
সুঁতি জালের অবকাঠামো ধ্বংস করা হয়েছে। অল্প পানিতেই চলন বিলজুড়ে দেয়া খণ্ড খণ্ড বানার বাঁধ অপসারণ অভিযান অব্যাহত আছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর