নিজস্ব প্রতিবেদক:
করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রাদুর্ভাবের মধ্যেও অনুমোদন পেয়েছে ‘প্রাথমিক উপবৃত্তি’ প্রকল্পের সংশোধনী প্রস্তাব। এর ফলে গত বছরের অক্টোবর শেষ হয়ে যাওয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়র শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি প্রকল্পটির মেয়াদ ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত বাড়লো। আর শুরুতেই গত বছরের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত সময়ের ছয় মাসের উপবৃত্তি পাবে প্রাথমিকের ১ কোটি ৪০ লাখ শিক্ষার্থী। উপবৃত্তির টাকার অঙ্কও বেড়েছে সংশোধনী প্রস্তাবে। তাছাড়া মুজিববর্ষ উপলক্ষে শিক্ষার্থীদের এককালীন এক হাজার কোটি টাকা করে দেওয়া হবে।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব রেখে সংশোধনী চূড়ান্ত করা হয়েছিল আগেই। তবে সাধারণ ছুটির কারণে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠক স্থগিত থাকায় প্রকল্পটির অনুমোদন প্রক্রিয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল। এ অবস্থায় সোমবার (৪ মে) বিশেষ বিবেচনায় প্রকল্পটিতে অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার (৫ মে) এ সংক্রান্ত গভর্নমেন্ট অর্ডার (জিও) জারি করেছে পরিকল্পনা কমিশন। সংশোধনী প্রস্তাব অনুযায়ী বর্ধিত মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে খরচ হবে প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা
জানা গেছে, গত অক্টোবর থেকেই প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা উপবৃত্তির টাকা পাচ্ছে না। সংশোধনী অনুমোদন পাওয়ায় তারা গত ছয় মাসের টাকা একসঙ্গে পাবে। এবার উপবৃত্তির টাকার পরিমাণ যেমন বেড়েছে, তেমনি এবারই প্রথম এককালীন এক হাজার টাকা করে পাচ্ছে প্রতিটি শিক্ষার্থী।
এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) আবুল কালাম আজাদ সারাবাংলাকে বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবাষির্কী উপলক্ষে প্রাথমিক উপবৃত্তিপ্রাপ্ত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীদের জন্য এককালীন এক হাজার টাকা করে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়। বছরের শুরুতেই যেন শিক্ষার্থীরা স্কুল ব্যাগ ও নতুন পোশাক কিনতে পারে, সেটা ভেবেই এই টাকা দেওয়ার কথা ছিল। করোনাভাইরাসে কারণে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর সব অনুষ্ঠান স্থগিত হলেও করোনা পরিস্থিতি বিবেচনা করেই প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ প্রণোদনা হিসেবে এই প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে আবুল কালাম আজাদ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দ্রুত প্রকল্পটি প্রক্রিয়াকরণ করা হয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে এই অর্থ পেলে শিক্ষার্থীদের উপকার হবে— এ বিবেচনায় সবকিছুই জরুরিভিত্তিতে করা হয়েছে। সাধারণ ছুটির কারণে অফিস বন্ধ থাকলেও জরুরি প্রয়োজনে ডিজিটাল প্রযুক্তির সুবিধা নিয়ে কাজ করা হয়েছে। তাছাড়া প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অফিসে ডেকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কাজ করা হয়।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত উপবৃত্তির টাকা পাঠিয়ে দেওয়া হবে শিওরক্যাশের মাধ্যমে। প্রকল্পের সংশোধনী প্রস্তাবে সব শ্রেণিতে উপবৃত্তির টাকার পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। এক্ষেত্রে আগে এক শিক্ষার্থীর পরিবারকে মাসে ১০০ টাকা দেওয়া হলেও নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী দেওয়া হবে ১৫০ টাকা। দুই শিক্ষার্থীর পরিবারকে ২০০ টাকার জায়গায় ৩০০ টাকা, তিন শিক্ষার্থীর পরিবারকে ২৫০ টাকার জায়গায় ৪০০ টাকা এবং চার শিক্ষার্থীর মাসে তিনশ টাকার জায়গায় এখন উপবৃত্তি দেওয়া হবে ৫০০ টাকা করে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) রতন চন্দ্র পণ্ডিত সারাবাংলাকে বলেন, যত দ্রুতসম্ভব গত বছরের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন মাসের টাকা শিক্ষার্থীদের মায়ের কাছে পাঠাব। এরপর এক সপ্তাহের মধ্যেই বাকি তিন মাসের টাকাও পাঠানোর চেষ্টা করা হবে।
রতন চন্দ্র বলেন, অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে প্রকল্পটির সংশোধনী প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, পরিকল্পনা কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট সবার ব্যাপক সহযোগিতা ছিল।
এক প্রশ্নের জবাবে সরকারের এই অতিরিক্ত সচিব বলেন, আমাদের লক্ষ্য ১ কোটি ৪০ লাখ শিক্ষার্থীর কাছে টাকা পৌঁছানো। তবে সংখ্যা কিছু কমও হতে পারে। কেননা নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার ফল এবং ৮০ শতাংশ বিদ্যালয়ের উপস্থিতির বিষয়টিও পর্যালোচনা করা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে হয়তো অল্প কিছু শিক্ষার্থী বাদ পড়বে উপবৃত্তির তালিকা থেকে।
সূত্র জানায়, গত ডিসেম্বর মাসে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় উপবৃত্তির অর্থপ্রাপ্তিতে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। অবশেষে দ্রুত প্রকল্প সংশোধন করার উদ্যোগ নেয় প্রথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এর আগে, ১৯৯৯ সালে প্রাথমিক শিক্ষার জন্য উপবৃত্তি প্রকল্প চালু করা হয়। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলে ২০০৮ সালে ‘প্রাথমিক শিক্ষার জন্য উপবৃত্তি প্রকল্প (দ্বিতীয় পর্যায়)’ গ্রহণ করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। দ্বিতীয় পর্যায়ের মেয়াদ ২০১৫ সালের ৩০ জুন শেষ হয়। পরবর্তী সময়ে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত তৃতীয় পর্যায় প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এ পর্যায় প্রথমে এক কোটি ৩০ লাখ শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি দেওয়া হয়। পরবর্তীতে এর সঙ্গে আরও ১০ লাখ শিক্ষার্থী যুক্ত করা হয়। প্রকল্পের নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হলে আরও দুই বছর সময় বাড়ানো হয়েছিল। সবশেষ সংশোধনীতে আরও দেড় বছর বাড়ানো হলো এর মেয়াদ।