হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির একজন নেতা এবং দলের অন্যতম মুখপাত্র নূপুর শর্মার বিতর্কিত মন্তব্য নিয়ে সেদেশের মুসলমান এবং বিরোধীরা গত কয়েকদিন ধরে হইচই করলেও সরকার তাতে বিন্দুমাত্র কান দেয়নি।
কিন্তু দুদিন আগে কাতার সরকার দোহাতে ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে ডেকে নিয়ে বিজেপি মুখপাত্রের বক্তব্য নিয়ে ক্ষমা চাওয়ার দাবি তোলার পর নরেন্দ্র মোদির সরকার নড়েচড়ে বসে।
এরপর কুয়েত, বাহরাইন, ওমান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব থেকে শুরু করে এক ডজনেরও বেশি মুসলিম দেশ একে একে ক্ষোভ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে। কারো কারো বিবৃতির ভাষা বেশ কড়া। আরব বিশ্বে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ্যে ভারতীয় পণ্য বয়কটের ডাক দেওয়া হয়েছে।
এরই মধ্যে কুয়েতে দোকানপাটে ভারতীয় পণ্য বিক্রি বন্ধ করা হয়েছে।
প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠান মিশরের আল আজহার আল-শরীফ তাদের বিবৃতিতে নবীকে নিয়ে বিজেপি নেতার বক্তব্যকে সন্ত্রাসী আচরণের সঙ্গে তুলনা করে বলেছে যে, এমন আচরণ পুরো বিশ্বে ভয়াবহ সংকট তৈরির উস্কানি।
আল আজহারের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কিছু কট্টর লোকজনের ভোটের জন্য ইসলামের এমন অবমাননা উগ্রবাদের সমার্থক। এর ফলে বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে পারস্পরিক ঘৃণা এবং অবিশ্বাস জন্ম নেবে।
ভারত নিয়ে এসব শক্ত বিবৃতি আরব বিশ্বের সোশ্যাল মিডিয়া ছাড়াও মূলধারার প্রায় সব মিডিয়াতে প্রকাশ পাচ্ছে।
ক্ষেপেছে আরব বিশ্ব : জ্বালানি, ব্যবসা এবং রেমিটেন্সের জন্য উপসাগরীয় এসব মুসলিম দেশের ওপর ভারত ভীষণভাবে নির্ভরশীল। এসব দেশের সাথে ভারতের কূটনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সম্পর্কও খুবই ঘনিষ্ঠ। তারপরও দেশগুলো প্রায় একযোগে ভারতকে প্রকাশ্যে এমনভাবে নিশানা করলো কেন?
এনডিটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ভারতের সাবেক কূটনীতিক কেসি সিং বলেন, এটি বছরের পর বছর ধরে বিজেপির মুসলিম এবং ইসলাম বিদ্বেষী রাজনীতির পাল্টা প্রতিক্রিয়া। এমন দুর্ঘটনা শুধু সময়ের অপেক্ষা ছিল মাত্র।
‘আপনি আপনার অভ্যন্তরীণ রাজনীতি একটি গুদামে সুরক্ষিত করে রাখবেন, বিভক্তির রাজনীতি, উদ্ধত সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রদর্শন করতে থাকবেন। তারপর অন্য দেশে গিয়ে জাতীয় নেতার মতো ভাব করবেন, তাদের নেতাদের সাথে কোলাকুলি করবেন এবং আশা করবেন বাস্তবতার খাতিরে তারা সবাই সব মেনে নেবে, সেটা বেশিদিন চলে না।’
সাবেক এই কূটনীতিক মনে করেন, ভারতে মুসলমানদের নিয়ে কী হচ্ছে, ইসলামি দেশগুলো তা উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছিল।
ঝাঁকি খেয়েছে বিজেপি : প্রশ্ন হলো, এখন আরব দেশগুলোর প্রতিক্রিয়াকে বিজেপি এবং নরেন্দ্র মোদির সরকার কতটা আমলে নিচ্ছে?
দিল্লির সিনিয়র সাংবাদিক এবং কলামিস্ট স্মিতা গুপ্তাও মনে করেন, সরকার খানিকটা ঝাঁকি খেয়েছে। কথাবার্তা এবং কার্যকলাপ দেখে মনে হচ্ছে, বিজেপি এবং সরকার কিছুটা হলেও উদ্বিগ্ন। গত আট বছরে যে বিজেপি কোনোরকম অনুশোচনা বা দুঃখ প্রকাশের ধার ধারেনি, তারাই নূপুর শর্মাকে সরিয়ে দিল।
‘প্রধানমন্ত্রী মোদির সমর্থকরা মনে করেন, তাদের নেতা বাইরের বিশ্বের ভীষণ জনপ্রিয়, বাইরে গিয়ে তিনি ঢেউ তোলেন। কিন্তু তারা দেখছেন ব্যাপারটি সবসময় তা নয়।’
বিশ্লেষকরা বলছেন, উপসাগরীয় মুসলিম দেশগুলোতে অর্থনৈতিক স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হওয়ার সম্ভাবনা নিয়েও ভারত উদ্বেগের মধ্যে পড়েছে। ভারতের তেল-গ্যাসের সিংহভাগই আসে এই অঞ্চল থেকে।
#CBALO / আপন ইসলাম