নাটোরের বড়াইগ্রামে চালকের অসতর্কতা এবং ভুল অভারটেকিংয়ের কারনে দুই বাসের মুখোমুখী সংঘর্ষে ৫ পুরুষ ও ২ নারী যাত্রী নিহত ও অন্তত ৩০ যাত্রী আহত হয়েছেন। শনিবার সকাল ১১টার দিকে বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কে মহিষভাঙ্গা এলাকায় গাজী অটো রাইস মিলের সামনে এ দূর্ঘটনা ঘটে।
আহতদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সরেজমিন ঘটনাস্থলে গিয়ে জানা যায়, ঢাকা থেকে ন্যাশনাল পরিবহনের একটি বাস রাজশাহী বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কের মহিষভাঙ্গা এলাকার গাজী অটোরাইস মিলের সামনে থাকা একতা পরিবহনের একটি বাসকে অতিক্রম করার সময় বিপরীত দিক থেকে আসা সিয়াম পরিবহন নামের অপর একটি বাসের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এ সময় সিয়াম পরিবহন ছিটকে গিয়ে গাজী অটোরাইস মিলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ট্রাকের সাথে ধাক্কা লাগে। ন্যাশনাল পরিবহনও মহাসড়কের পাশের গাছের সাথে ধাক্কা লেগে কিছুটা নেমে যায়। এতে ন্যাশনালের ৪ যাত্রী ও সিয়ামের ২ যাত্রী ঘটনাস্থলেই মারা যান। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরো একজনের মৃত্যু হয়। উভয় বাসের সামনের অংশ দুমড়ে মুচড়ে যায়। এতে উভয় বাসের অন্তত ৩০ জন যাত্রী আহত হন। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে বনপাড়া হাইওয়ে থানা, বড়াইগ্রাম থানা ও বনপাড়া ফায়ারসার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে উদ্ধার অভিযান শুরু করে। আহত যাত্রীদের বনপাড়া,নাটোর ও রাজশাহীর বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়।
ন্যাশনাল পরিবহনের যাত্রী এনামুল হক বলেন, বনপাড়ার গাজী অটোরাইসমিল ও পাটোয়ারী ফিলিং ষ্টেশনে সামনের বাকে একতা পরিবহনের একটি বাসকে অতিক্রম করার সময় বিপরীত দিক থেকে আসা সিয়াম পরিবহনের একটি বাসের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। মুহুর্তেই যাত্রীরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে যান। এ সময় একটি বাস গাজী অটোরাইস মিলের একটি ট্রাকের সঙ্গেও ধাক্কা খায়। ঘটনাস্থলে তিনি ছয় জনের মৃতদেহ দেখতে পান বলে জানান। তিনিসহ বহু যাত্রীকে তিনি আহত অবস্থায় দেখেছেন।
ন্যাশনাল পরিবহনের যাত্রী রাজন (৩২) ও আক্তারী খানম (৪১) বলেন, গাড়ীটি অযথাই বেপরোয়া গতিতে চালাচ্ছিলেন চালক। অনেক যাত্রীর অনুরোধেও গতি কমান নাই । অবশেষে দুর্ঘটনায় পড়তে হলো। কেরে নিল ৭টি তাজা প্রাণ।
নিহতরা হলেন সিয়াম পরিবহনের যাত্রী নাটোর সদর থানার পাইকোরদল এলাকার প্রবাসী শাহজাহান মিয়ার ছেলে কাউছার রহমান (১৮) এবং মেয়ে সাদিয়া আক্তার (১২) ও শ্যালক নাটোর সদর থানার পাইকোরদল এলাকার মুক্তার হোসেনের ছেলে আলমগীর হোসেন (৪৮) এবং ন্যাশনাল পরিবহনের যাত্রী নাটোরের লালপুর থানার ওয়ালিয়া এলাকার মোহনা আক্তার মিলি (২৬), মাগুড়া সদর থানার মিজানুর রহমান (৩০), চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানার ও নাটোর নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা কলেজের সহকারী অধ্যাপক মশিউর রহমান (৫০) ও টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার থানার বেঙ্গুনিয়া গ্রামের আব্দুল জলিল (২৬)।
হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান বলেন, প্রাথমিক ভাবে ধারনা করা হচ্ছে ভুল ওভারটেকিং করার সময় এ ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ ও ফায়ারসার্ভিস কর্মীরা আহত যাত্রীদের উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসাপাতালে পাঠিয়েছেন। সড়কে যাতায়াত নির্বিঘ্নে করতে তাঁরা কাজ করছেন।
খবর পেয়ে নাটোরের জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ, পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা, বনপাড়া পৌর মেয়র কেএম জাকির হোসেন, উপজেলা চেয়ারম্যান ডা. সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী, বড়াইগ্রাম থানার ওসি আবু সিদ্দিক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
এসময় জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ নিহতদের পরিবারকে ২৫ হাজার করে টাকা এবং আহতদের চিকিৎসায় সহযোগিতার ঘোষনা দেন।