নাটোরের বড়াইগ্রামে ৩১ শতাংশের একটি জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে কাকা এবং ভাতিজার মধ্যে। উপজেলার জোনাইল ইউনিয়নে কাকা সুনিল গমেজ ও ভাতিজা লিটন গমেজের মধ্যে চলমান এই বিরোধ সমাধানের লক্ষ্যে একাধিকবার বৈঠক হলেও বারবার ব্যর্থ হয়েছে প্রধানেরা। সুষ্ঠু সমাধানের জন্য আইনের দারস্থ হলেও দীর্ঘদিন ধরে চলছে মামলা। এতে করে উভয়পক্ষের মধ্যে শান্তিভঙ্গের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
জানা যায় ২০১৮ সালের ১৪ই জানুয়ারী জমি নিয়ে গোলযোগের সৃষ্টি হয়েছে এবং সঠিকভাবে সীমানা মাপ জরিপ করার জন্য জোনাইল ইউপি চেয়ারম্যান বরাবর দরখাস্থ দেন লিটন গমেজ। যার প্রেক্ষিতে ৪ই ফেব্রুয়ারী চেয়ারম্যানের নির্দেশে আব্দুস সালাম(আমিন) উক্ত জমি মাপ জরিপের উদ্দেশ্যে একটি হাত নকশা করেন এবং ১ মাস সময় নেন । ২২শে ফেব্রুয়ারী সন্ধ্যা ৬ টার সময় জোনাইল বাজারে উক্ত জমিজমা নিয়ে বিরোধের জের ধরে আচমকা লিটন গমেজের পথরোধ করে স্থানীয় ইউপি সদস্যের নির্দেশে পরিকল্পিত ভাবে তাকে মারধোর এবং নগদ অর্থ ছিনতাই করা হয়েছে মর্মে লিটন গমেজের স্ত্রী মনিকা বিশ্বাস থানায় বাদী হয়ে একটি অভিযোগ করেন। তদন্ত সাপেক্ষে ইউপি সদস্য সহ কয়েকজনের জেল হয়। একই বছরের ২০ই ডিসেম্বর জোনাইল ইউনিয়ন পরিষদে শর্ত সাপেক্ষে একটি আপোষ-মিমাংশা করেন জোনাইল ইউপি চেয়ারম্যান। যার প্রেক্ষিতে অভিযোগ প্রত্যাহার করেন লিটন গমেজের স্ত্রী মনিকা বিশ্বাস।
করোনা এবং বিভিন্ন অযুহাতে ঐ জমি এখনও মাপ জরিপ না হওয়ায় কাকা সুনিল গমেজ এবং ভাতিজা লিটন গমেজের মধ্যে বিরোধ চলতে থাকে। মাঝেমধ্যেই তাদের মধ্যে শান্তি ভঙ্গের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
রের্কডে আর.এস খতিয়ান নং ১৭৪,দাগ নং ৪৫৭১ এর ৩১ শতাংশ জমির ৯ শতাংশ সুনিল গমেজ খারিজ করলেও পুরো ৩১ শতাংশ জমি ভোগ দখল করে আছেন । এ দিকে লিটন গমেজ এই দাগের ২২ শতাংশ জমির দাবি করছেন যা নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে চলমান দন্দের জের ধরে সুনিল গমেজ বাদী হয়ে সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে একটি মামলা( বড়াইগ্রাম ১৬৫/২০১৮ অঃপ্রঃ মোকদ্দমা) দায়ের করেন। মামলা চলমান অবস্থায় বিজ্ঞ আদালত শান্তিরক্ষার্থে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। নিষেধাজ্ঞায় উল্লেখ করা হয় মামলা মিমাংসা না হওয়া পর্যন্ত ঐ জমিতে শান্তিভঙ্গ হয় এমন কোনো কাজ করা যাবে না।
গত ১৫ ই অক্টোবর লিটন গমেজ ঐ জমিতে ২০০ সুপারি চারা এবং ৮০ টি কলা গাছ রোপন করেন। ১৬ ই অক্টোবর সুনিল গমেজ জমিতে গিয়ে গাছ উপড়ে ফেলে দেন। একইদিন লিটন গমেজ তার কাজের মানুষকে দিয়ে পুনরায় গাছ রোপন করলে পরের দিন ১৭ই অক্টোবর সকালে রোপনকৃত সকল গাছের চারা কেটে ফেলে সুনিল গমেজ ও তার সহযোগীরা।
২১ অক্টোবর উক্ত গাছ কাটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে লিটন গমেজ বাদী হয়ে দেড় লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে মর্মে থানায় অভিযোগ করে। যেখানে সে উল্লেখ করে আপোষ-মিমাংসার স্তোপ থাকার কারণে অভিযোগ করতে বিলম্ব হয়।
অপর দিকে অনাধিকার প্রবেশ করে অবৈধভাবে জমি দখল করার চেষ্টা করছে মর্মে সুনিল গমেজ ও বাদী হয়ে লিটন গমেজের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেন।
লিটন গমেজ বলেন,এই দাগে উনার জমি রয়েছে ৯ শতাংশ আর দখল করে আছে পুরো ৩১ শতাংশ। এটা অনেক চেষ্টা করেও সমাধান করতে পারছি না। দ্রুত সমাধান হলে উভয়পক্ষের জন্য ভালো হয়। তিনি আরও বলেন, কাগজে যদি আমার জমি না থাকে তাহলে আমি কখনও এটা নিয়ে বিরোধ করবো না।
স্থানীয় প্রধান আলিমুদ্দিন মোল্লা বলেন, এই জমি মাপ জরিপের জন্য একাধিকবার বৈঠকের আয়োজন করা হলে সুনিল গমেজ বার বার সময় নেয় এবং উপস্থিত না হওয়ার কারণে আমরা লিটন গমেজের দলিল মোতাবেক লিটনের জমি মেপে বের দিয়ে দিই।
সুনিল গমেজ বলেন,ঐ জমি আমি দীর্ঘদিন ধরে দখল করে আসছি। পুরো জমি আমার নামেই আছে। আমি সমাধানে বসতে চাইলে লিটন উপস্থিত হয় না।
#চলনবিলের আলো / আপন