চলনবিলের আলো বার্তাকক্ষ:
পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার অষ্টমনিষায় মহামারী করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে মানুষ যখন জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষনে তখন এনজিও ঋণের কিস্তি আদায় ও হালখাতার আর্থিক সঙ্কটে সাধারন মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। সীমিত পরিসরে কর্মসংস্থান চলতে না চলতেই (ব্রাক,ওসাকা,আশা,টিএমএসএস,আরবান,গ্রামীন ব্যাংক) এনজিও’র কর্মীরা বাড়ীতে যেয়ে কিস্তি আদায় করছেন এবং কিস্তির টাকা দিতে না পারলে চাপ দিচ্ছে। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন কর্মহীন খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ গুলো ।
খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, করোনার প্রাদুর্ভাবে ও লকডাউনের কারণে মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ে। তারপরও জুন মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু করেছে এনজিও গুলোর কিস্তি আদায় কার্যক্রম। ব্যবসায়ীরা শুরু করেছে হালখাতার প্রতিযোগিতা। ঘরে ঘরে চলছে হালখাতা। এদিগে কর্মহীন হয়ে পড়েছে গ্রাামাঞ্চলের মানুষ গুলো। এরপর বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের জন্য রয়েছে ব্যাপক চাপ। জুনের মধ্যেই বিলম্ব মাশুল ছাড়া বিদ্যুৎ বিল দিতে বাধ্য করছেন সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ অফিস।
এ বিষয়ে উপজেলার একাধিক কর্মহীন মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে এই মহামারী করোনা পরিস্থিতিতে তাদের কোন ব্যবসা-বাণিজ্য নাই কিন্তু প্রতিনিয়ত হালখাতা এবং কিস্তির টাকার জন্য বাড়ীতে আসে এনজিও ও হালখাতার মহাজনরা। করোনা মহামারী শুরুর পর এমনিতেই উপার্জন কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। তার ওপর এনজিও’র কিস্তি এ যেন মরার উপর খাঁড়ার ঘা।
অনেকের অভিযোগ কখনও মোবাইল ফোনে, কখনও বাড়িতে গিয়ে কিস্তি পরিশোধের জন্য গ্রাহককে বিভিন্নভাবে হয়রানি ও হুমকী দিচ্ছেন এনজিও গুলোর মাঠকর্মীরা। সুদের হার বৃদ্ধি পাবে এবং ভবিষ্যতে ঋণ দেওয়া হবেনা এই মর্মে ঋণ গ্রহীতাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করছেন এনজিও গুলো। ফলে নিরুপায় হয়েই ধার দেনা করে অতিকষ্টে এনজিও’র কিস্তি দিতে হচ্ছে ঋণ গ্রহীদের। এরপরও কিছু সংখ্যক এনজিও সদস্য সাপ্তাহিক কিস্তি দিতে না পারলেও দু-একদিন পরই কিস্তি আদায় করা হচ্ছে তাদের কাছ থেকে। ইজিবাইক চালক, ভ্যান চালক, ভাড়ায় মোটর সাইকেল চালকরা ঠিকমত যাত্রী পাচ্ছেন না।লক ডাউনে বাজারেও জনসমাগম কম। ছোট খাট দোকানীদের বিক্রয় সীমিত ভাবে চলছে। অনেকে দিন ধরে দিনমজুরদের ঠিক মত কাজ হচ্ছে না।
কিন্তু এ অঞ্চলে করোনা আতংকিত হয়ে মানুষের পিছু ছাড়ছে না বিভিন্ন এনজিও’র কর্মীরা। কর্মীদের নেই কোন করোনা প্রতিরোধক সরঞ্জম। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এনজিও’র কর্মীরা বাড়িতে গিয়ে কিস্তি আদায় করছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যক্তি বলেন করোনার কারণে কাজ কাম নাই বল্লেই চলে। এদিকে এখন কিস্তির চাপ আবার চলছে হালখাতা। সংসার চালাতে হিমসীম খেতে হচ্ছে তারপরও এ সব চাপে দিশেহারা হয়ে পড়েছি। কি করবো এ অবস্থায় ভেবে ভেবে রোগাগ্রস্থ হয়ে পড়তেছি। তাই উপজেলা প্রশাসনের কাছে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখার জন্য অনুরোধ করছি।
ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো: সৈয়দ আশরাফুজ্জামান বলেন, মহামারী করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে মানুষ যখন জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষনে তখন এনজিও ঋণের কিস্তি আদায় ও হালখাতার চাপ বিষয়টা খুবই দুঃখজনক।সরকারি নিয়ম অনুসারে জুন মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে স্বল্প পরিসরে কিস্তি নেওয়ার অনুমতি আছে কিন্তু চাপ প্রয়োগ করে কারো কাছ থেকে কিস্তি আদায় করলে সে সকল এনজিও কর্মী সহ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।