সোমবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৫, ০৪:২৪ পূর্বাহ্ন

ই-পেপার

শিরোনাম :
শিরোনাম :
কক্সবাজার সদর উপজেলা জাসাস এর পরিচিতি সভা, জাসাস বিএনপি গোলাপ ফুল বললেন প্রধান অতিথি বাংলাদেশ বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারী ফোরামের নির্বাহী মহাসচিব নির্বাচিত হলেন আনোয়ার হোসেন মানিকগঞ্জ ১ আসনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীর মোটরসাইকেল শোডাউন নাটোর ইমার্জিং কাপ ক্রিকেট টুর্নামেন্টের ফাইনালে চ্যাম্পিয়ন নাটোর রেড টিম আটোয়ারীতে ‘মানিকপীর সোনালী কিন্ডার গার্টেন’-এর কৃতি শিক্ষার্থীদের মাঝে বৃত্তি ও সনদ বিতরণ আলীকদমে মাতামুুহুরী নদীতে পড়ে বৃদ্ধের মৃত্যু ভৈরব নদীতে নৌকা বাইচে উৎসবের জোয়ার, দর্শনার্থীর ঢল সাপাহারে ন্যাশনাল লাইফ ইনস্যুরেন্স জনবীমী’র পিঠা ও আনন্দ উৎসব 

ঢাকায় চিকিৎসক দম্পত্তির নির্যাতনের শিকার হয়ে হাসপাতালে ভর্তি শিশু নিপা উধাও, থানায় জিডি ; পুলিশী অভিযানে আগৈলঝাড়া থেকে আহত শিশু নিপা উদ্ধার

রুবিনা আজাদ, আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল:
আপডেট সময়: শনিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৫:১২ অপরাহ্ণ

উজিরপুর উপজেলা হাসপাতাল থেকে নিখোঁজ আহত গৃহকর্মী নিপা বাড়ৈকে আগৈলঝাড়া থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বরিশালের উজিরপুর উপজেলা হাসপাতাল থেকে নিখোঁজ আহত গৃহকর্মী নিপা বাড়ৈকে (১১) আগৈলঝাড়া থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।
শনিবার ভোরে উজিরপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী আগৈলঝাড়া উপজেলার আস্কর গ্রামের বিমল বাড়ৈর বাড়ি থেকে আহত শিশুটিকে উদ্ধার করে উজিরপুর থানায় পুলিশের হেফাজতে রাখা হয়েছে।

উদ্ধার হওয়া নিপা বাড়ৈ উজিরপুর উপজেলার জামবাড়ি এলাকার ননী বাড়ৈর মেয়ে। তার বাবা একজন মানসিক প্রতিবন্ধি। তার মা দুই বছর আগে অন্যত্র বিয়ে করেন। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে নিপা মেঝ। করোনা কালীন সময়ে অভাব অনটনের কারণে ৭ মাস আগে নিপাকে ঢাকার জাতীয় পঙ্গু হাসপাতালের অর্থপেডিক্স ও ট্রমা বিশেষজ্ঞ ডা. সিএইএস রবিনের শ্যামলীর বাসায় গৃহকর্মীর কাজে দেয়া হয়।
নিপার স্বজনেরা জানান, প্রায় সাত মাস আগে চিকিৎসক সিএইএস রবিনের বাসায় নিপাকে কাজে দেয়া হয়। তখন চিকিৎসক রবিন ও তার স্ত্রী রাখি দাস বলেছিলেন নিজের সন্তানের মতো করে নিপাকে দেখে রাখবেন তারা।

কিন্তু গত (২৩ ফেব্রুয়ারী) কাউকে কিছু না বলার শর্তে ভয়ভীতি দেখিয়ে নিপাকে গোপনে ডা. রবিনের চেম্বারের সহকারী বাসু হালদারকে দিয়ে মঙ্গলবার গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে দেন নির্যাতনকারী রাখি দাস। বাসুদেব দাস উজিরপুরের জামবাড়ি তার গ্রামের বাড়ির কাছে একটি দোকানের সামনে ফেলে রেখে যায়। এরপর নিপা বাড়িতে এসে জানায়, কাজে সামান্য ভুল করলে তার ওপর চালানো হতো অমানবিক নির্যাতন। গরম খুন্তি দিয়ে ছ্যাঁকা দেয়া হত তার শরীরে। ঠিকমতো খাবার দেয়া হত না তাকে। বাসার মধ্যে আটকে রেখে প্রতিদিনই তাকে মারধর করা হত। এমনকি তাকে গলাও টিপে ধরা হতো বলে বলে জানায়। চিকিৎসকের স্ত্রী রাখি দাসের নির্যাতনে মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে নিপার ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। নির্যাতনের কারনে কয়েক দিন আগে সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাকে কোন ওষুধও খেতে দেয়নি তারা। শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হলে চিকিৎসক রবিনের এক কর্মচারী দিয়ে তাকে উজিরপুরে পাঠিয়ে দেয়। খবর পেয়ে রাতেই পুলিশ নিপাকে উদ্ধার করে উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করে।
এদিকে শিশু নির্যাতরে বিষয়টি জানাজানি হলে গ্রামের লোকজন ওই চিকৎসক ও তার স্ত্রীর শাস্তির দাবি জানালে মামলার ভয়ে চিকিৎসক রবিন ও তার স্ত্রী রাখি দাস উজিরপুর উপজেলা হাসপাতাল থেকে থেকে অসুস্থ নিপাকে অন্যত্র নিয়ে যেতে প্রলোভন ও নানাভাবে চাপ দিতে থাকেন নিপার পরিবারের সদস্যদের। এমন অবস্থায় নিপার কাকা চাচা তপন বাড়ৈ শুক্রবার ভোরে স্থানীয় এক ইউপি সদস্যর সহায়তায় নিপাকে হাসপাতাল থেকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যান।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. শওকত আলী জানান, শিশুটিকে ভর্তির পর থেকেই নানা ধরনের লোকজন এসে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেস্টা করেন। তবে তিনি পুলিশের অনুমতি ছাড়া নিপাকে নিয়ে যেতে নিষেধ করেন। শুক্রবার ভোর ৫টার পর থেকে নিপাকে উপজেলা হাসপাতালে খুঁজে না পাওয়ায় হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. সামসুদ্দোহা তৌহিদ উজিরপুর মডেল থানায় সাধারন ডায়েরি করেন।
উজিরপুর মডেল থানার ওসি জিয়াউল আহসান জানান, নিপাকে উদ্ধারে শুক্রবার দিনভর অভিযান চালানো হয়। তবে তার সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না। শুক্রবার রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ জানতে পারে, নিপাকে তার কাকার মামা শ^শুর বিমল বাড়ৈর আগৈলঝাড়া উপজেলার আস্কর গ্রামের বাড়িতে রাখা হয়েছে। ভোরে ওই বাড়িতে অভিযান চালিয়ে অসুস্থ নিপাকে উদ্ধার করা হয়েছে। নিপা এখন থানায় পুলিশের হেফাজতে রয়েছে।

তিনি আরও বলেন ঘটনাটি অমানবিক। গত বুধবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৩টার দিকে খবর পেয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। একই সঙ্গে ঢাকায় ওই চিকিৎসকের বাড়ির ঠিকানা খোঁজা হচ্ছে। এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে।
উপজেলা হাসপাতালের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শওকত আলী জানান, ‘শিশুটির মাথায় কুপিয়ে জখম করার চিহ্ন রয়েছে তা প্রায় চার থেকে পাঁচ দিন আগের। এছাড়া শরীরের অন্যান্য আঘাতের ক্ষতগুলো অনেক পুরোনো। আর সেগুলো ধাতব দণ্ড এবং নক দিয়ে করা হয়েছে।’ তিনি আরও জানান, ‘ওই শিশুর শরীরের আঘাত দেখে ধারনা করা হচ্ছে অনেকদিন ধরেই সে নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছে। বর্তমানে শারিরিকভাবে শিশুটি অনেকটা সুস্থ। তবে তার মানসিক ক্ষত ঠিক হতে দীর্ঘ সময় লাগবে।’

আগৈলঝাড়া থানার ওসি (তদন্ত) মো. মাজহারুল ইসলাম জানান, উজিরপুর থানা পুলিশ আগৈলঝাড়া থানা পুলিশের সহায়তায় শনিবার সকালে আস্কর গ্রাম থেকে উদ্ধার করে উজিরপুর থানায় নিয়ে গেছে। সেখানে হাসপাতাল থেকে এই শিশু নিখোঁজের ঘটনায় জিডি রয়েছে।

 

CBALO/আপন ইসলাম


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর