সোমবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৫, ০২:৫৯ পূর্বাহ্ন

ই-পেপার

শিরোনাম :
শিরোনাম :
কক্সবাজার সদর উপজেলা জাসাস এর পরিচিতি সভা, জাসাস বিএনপি গোলাপ ফুল বললেন প্রধান অতিথি বাংলাদেশ বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারী ফোরামের নির্বাহী মহাসচিব নির্বাচিত হলেন আনোয়ার হোসেন মানিকগঞ্জ ১ আসনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীর মোটরসাইকেল শোডাউন নাটোর ইমার্জিং কাপ ক্রিকেট টুর্নামেন্টের ফাইনালে চ্যাম্পিয়ন নাটোর রেড টিম আটোয়ারীতে ‘মানিকপীর সোনালী কিন্ডার গার্টেন’-এর কৃতি শিক্ষার্থীদের মাঝে বৃত্তি ও সনদ বিতরণ আলীকদমে মাতামুুহুরী নদীতে পড়ে বৃদ্ধের মৃত্যু ভৈরব নদীতে নৌকা বাইচে উৎসবের জোয়ার, দর্শনার্থীর ঢল সাপাহারে ন্যাশনাল লাইফ ইনস্যুরেন্স জনবীমী’র পিঠা ও আনন্দ উৎসব 

টিকটক ভিডিও তৈরিতে বাধা দেওয়ায় স্বামীকে হত্যা

নিজস্ব প্রতিনিধি:
আপডেট সময়: বুধবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:৫১ অপরাহ্ণ

গত বছরের ২৩ মে রাতে মৃত্যুবরণ করেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নাসির উদ্দিন। তবে মৃত্যুর ৯ মাস পর জানা গেল স্বাভাবিক মৃত্যু নয়, বরং স্ত্রী ও তার পরকীয়া প্রেমিকের হাতে খুন হয়েছিলেন তিনি। একটি হারিয়ে যাওয়া ফোনের কল রেকর্ডের সূত্র ধরে সামনে এসেছে এই হত্যারহস্য।

১৩টি অডিও ক্লিপে মিতু ও রাজুর কথোপকথন শুনে জানা যায়, ইচ্ছামতো চলতে এবং টিকটক ও লাইকির ভিডিও তৈরিতে বাধা দেয়ায় স্বামীকে মারতে লোকও ভাড়া করেছিলেন মিতু। এজন্য ধার করেছিলেন প্রায় ৩০ হাজার টাকা। সেই টাকার পাওনাদারদের চাপে মিতু শঙ্কায় ছিলেন, তারা বাসায় এলে তো স্বামী নাসির সব জেনে যাবেন। মূলত এই শঙ্কা থেকেই প্রতিবেশী ও দূর সম্পর্কের আত্মীয় পরকীয়া প্রেমিক রাজু মিয়াকে নিয়ে হত্যার চক্রান্ত করেন মিতু।

তাদের ফোন আলাপ রেকর্ডে স্বামীকে নিরাপদে খুন করতে পরকীয়া প্রেমিক রাজুর সঙ্গে ফোন আলাপে ছাগল মানত করার কথা বলতে শোনা যায় নিহত শিক্ষকের স্ত্রী ফাতেমা মিতুকে। প্রেমিক রাজুকে মিতু বলেন, ‘দরগায় মানত করছি, আল্লাহ্‌ কামডা যদি সফল হয়, কোনো সাক্ষী-প্রমাণ কিছু না থাকে, তাহলে হের লগে দরগাই যাইয়া এক সপ্তাহের মধ্যে একটা ছাগল কুরবানি দিমু, আল্লাহ্‌ কবুল করো।’

হত্যার ১০দিন আগে ১২ই মে রাজুকে ফোনে মিতু জানান, তিনি খুবই সমস্যায় রয়েছেন, সহযোগিতা প্রয়োজন। রাজু সহযোগিতার আশ্বাস দিলে মিতু তাকে তার স্বামীকে হত্যার পরিকল্পনার কথা জানান। পরদিন রাজু ফোন দেন মিতুকে। ১৫ মিনিট ১৯ সেকেন্ডের আলোচনায় তারা হত্যার দিনক্ষণ চূড়ান্ত করেন। কীভাবে হত্যা করা হবে তা নিয়েও আলোচনা করেন তারা। প্রথমে রাজু তাবিজ করে হত্যার পরামর্শ দেয়। কিন্তু মিতু বলেন, এর আগেও স্বামীকে হত্যার জন্য তাবিজ-কবজ করে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে হত্যার পরিকল্পনা সফল করতে একাধিক পরিচিত ব্যক্তির কাছ থেকে প্রায় ৩০ হাজার টাকা ধার করে খরচ করে ফেলেছেন। ঘুমের ওষুধ বা ইনজেকশনের মাধ্যমে শরীরে বিষ প্রয়োগ করে হত্যা করা যায় কি না, এসব নিয়ে কথা বলেন তারা। এক পর্যায়ে উভয়ে সিদ্ধান্ত নেন, অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ খাইয়ে তাকে অচেতন করার পর কম্বলচাপা দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করা হবে। ১৪ই মে তিনবার কথা হয় তাদের। রাজু প্রথমে মিতুকে বুঝিয়ে বলেন, হত্যা না করে ধারদেনার টাকা পরিশোধ করলে হবে কিনা? কিন্তু মিতু রাজি হননি। মিতু বলেন, টাকা শোধ করলেই সমস্যার সমাধান হবে না। নাসিরকে হত্যা করতেই হবে, নাসির বেঁচে থাকলেই সমস্যা।

পরদিন ১৫ই মে আবারো কথা হয় তাদের। রাজুকে মিতু জানান, ২০ তারিখের আগে পাওনাদারদের টাকা পরিশোধ করতে হবে। এজন্য রাজুকে দ্রুত আসতে মিতু তাড়া দিতে থাকেন এবং হত্যার কাজটি করতে পারবেন কিনা তার নিশ্চয়তা চান। রাজু তাকে ‘শিগগিরই’ করতে পারবেন বলে নিশ্চিত করে।

১৬ মে আবারো তাদের কথা হয় এবং পাওনাদাররা টাকার জন্য তাড়া দিচ্ছেন কিনা, তা জানতে চান রাজু। ১৮ মে ১৯ মিনিট ২৫ সেকেন্ড কথা হয় রাজু ও মিতুর। এ সময় ফের রাজুকে বাড়িতে আসার জন্য তাড়া দেন মিতু। মিতু বলেন, রাসেল দফাদার নামের এক ব্যক্তির পাওনা টাকা পরিশোধ করতেই হবে। পাওনা টাকার জন্য বাড়িতে এসে জানালে নাসির খুব ঝামেলা বাধাবে। তাই যা করার ঈদের আগেই করতে হবে। তখন রাজু বলেন, তিনি যেখানে কাজ করেন সেখান থেকে টাকা নিয়ে ‘সময়মতো’ বাড়ি আসবেন। তার পরই হত্যা করা হবে নাসিরকে।

পরিকল্পনা অনুযায়ী ঈদের আগেই ২৩শে মে রাতে অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ খাইয়ে নাসিরকে কম্বল চাপা দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করেন মিতু ও রাজু। হত্যার পর দিন মিতুকে ফোন করে রাজু জানতে চান, সবকিছু ঠিকঠাক আছে কি-না। মিতু বলেন, সমস্যা নেই, সব ঠিক আছে। এরপর ১১ জুন মিতুকে ফোন করে তার সঙ্গে যোগাযোগ না রাখার কারণ জানতে চান রাজু। জবাবে মিতু জানান, ঝামেলায় আছেন, যোগাযোগ রাখা সম্ভব নয়। এরপরের ১৭ মিনিট ২৬ সেকেন্ডের এক রেকর্ডিং শুনে জানা যায়, কথোপকথনে রাজু মিতুর বিরুদ্ধে কথা না রাখার অভিযোগ আনেন। এক পর্যায়ে মিতু বিরক্ত হয়ে ফোন কেটে দেন।

মিতু ও রাজুর ফাঁস হওয়া এসব অডিও রেকর্ড পুলিশের হাতে চলে আসলে গত ১০ ফেব্রুয়ারি রাতে আটক হন তারা। পরের দিন নাসিরের ভাই জলিল বাদী হয়ে বরগুনা থানায় হত্যা মামলা করলে উভয়কে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করে পুলিশ। স্বামী হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছে মিতু।

গ্রেপ্তার ফাতেমা মিতু বরগুনা পৌরসভার থানাপাড়া এলাকার মো. মাহতাব হোসেনের মেয়ে এবং রাজু মিয়া ঢলুয়া ইউনিয়নের গুলবুনিয়া এলাকার বারেক মিয়ার ছেলে।

এ বিষয়ে বরগুনার পুলিশ সুপার মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর মল্লিক বলেন, গত বছরের ২৩ মে ঈদুল ফিতরের আগের দিন রাতে নাসিরের মৃত্যুর খবর পান তার স্বজনরা। পরবর্তী সময়ে নাসিরের স্বাভাবিক মৃত্যু জেনে তাকে স্বাভাবিক নিয়মেই দাফন করে স্বজনরা। ঘটনার আট মাস ১৯ দিন পর তার স্বজনরা জানতে পারেন- নাসিরের স্ত্রী ফাতেমা মিতু ও তার পরকীয়া প্রেমিক রাজু নাসিরকে পরিকল্পিতভাবে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে কম্বল চেপে শ্বাসরোধে হত্যা করেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ফাতেমা মিতুর পরকীয়া প্রেমিক রাজুর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি বরগুনার একটি দোকানে চার্জ করাতে দেন রাজু। সেখান থেকে তার মোবাইলটি হারিয়ে যায়। হারিয়ে যাওয়া ফোনে নাসিরকে হত্যার পরিকল্পনা এবং পরবর্তী বিষয়ে রাজু ও মিতুর কথোপকথনের রেকর্ড জমা থাকে। পরে হারিয়ে যাওয়া ওই ফোনের কথোপকথন পায় নাসিরের স্বজনরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে থানায় অভিযোগ করেন নাসিরের বড় ভাই জলিল হাওলাদার।

এ বিষয়ে নাসিরের বড় ভাই ও মামলার বাদী মো. জলিল হাওলাদার বলেন, ‘মিতুর কাছ থেকে আমার ভাইয়ের হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুর খবর পাই। তখন আমাদের কোনো সন্দেহ হয়নি। তাই স্বাভাবিক নিয়মেই আমরা নাসিরকে দাফন করি। এ ঘটনার ৯ মাসেরও বেশি সময় পর মিতু ও তার পরকীয়া প্রেমিক রাজুর মোবাইল ফোনে কথোপকথনের বেশ কয়েকটি রেকর্ড পাই আমরা। সেই রেকর্ডে নাসিরকে হত্যার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের কথোপকথন রয়েছে। তখন আমরা নাসিরকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার বিষয়টি নিশ্চিত হই। এরপর পুলিশে অভিযোগ করা হলে পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নাসির এবং মিতু দম্পতি দুই সন্তানের জনক-জননী। তাদের এক মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে মেয়ে বড় এবং ছেলে ছোট। আট বছর বয়সী মেয়ের নাম নুসরাত জাহান এবং পাঁচ বছর বয়সী ছেলের নাম মো. নাঈম।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর