বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারী ২০২৫, ০২:১৯ পূর্বাহ্ন

ই-পেপার

রামগড়ে স্বামীর মৃত্যুর দুই যুগ পার হলেও বিধবা ভাতা পাননি বৃদ্ধা বিবি হাজেরা খাতুন

প্রতিনিধির নাম:
আপডেট সময়: শনিবার, ৩০ মে, ২০২০, ৫:৫৯ অপরাহ্ণ

বেলাল হোসাইন,খাগড়াছড়ি :
অভাব,চিন্তা এবং বয়সের ভারে ন্যুব্জ হয়ে পড়েছে শরীরটা।হাটা-চলার শক্তি নেই শরীরে। তারপরও বেঁচে থাকার তাগিদে খাবারের সন্ধানে প্রতিদিনই বাড়ি থেকে বের হতে হয় খাগড়াছড়ি জেলার রামগড় ১নং ইউনিয়নের  ৬৫ বছর বয়সী এই অসহায় বৃদ্ধাকে। তবে ভিক্ষার জন্য নয়, পরিচিত জনদের সাক্ষাতের জন্য। পরিচিত জনরা তাকে পথে-ঘাটে সামনে পেলে কিছু পয়সা দেন। আর সেই পয়সায়ই চলে তার জীবন-জীবিকা।
বিবি হাজেরা খাতুন বলেন, আমি  রামগড় উপজেলার ১ নং ইউনিয়নের লামকু পাড়ার এক হতদরিদ্র পরিবারের মানুষ,আজ ২৫ বছর আমার স্বামী বেঁচে নেই,আমার স্বামী  আলী আহমেদ মারা যাওয়ার পর আমার পরিবারে  অন্ধকার নেমে আসে, আমি ছেলে মেয়ে নিয়া অনেক কষ্টে দিন পার করতেছি, বয়সের কারনে কোন কাজ কর্ম করতে পারিনা, আমার প্রতিবেশী এক মহিলা আমাকে রামগড় উপজেলা সমাজ সেবা অফিসারের  কার্যালয়ে বিধবা ভাতার আবেদন করতে বলে, অভাবে আমি চক্ষু লজ্জা বাদ দিয়ে  এলাকার চেয়ারম্যান ও মেম্বারের ধারে ধারে ঘুরেছি,তার পর অনেক কষ্ট করে   সুপারিশ নিয়া রামগড় উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার বরাবর বিধবা ভাতার জন্য আবেদন করেছিলাম অনেক বার শুনানি হলেও  আবেদনের কোন শুনানিতে ডাকা হয়নি আমাকে, আমি গরিব অসহায় বলে কারো সহযোগিতা পাচ্ছি  না,একবার নয় বহুবার আবেদন করেছি,অফিসারেরাও আশ্বাস দিয়েছে,  কিন্তু আজ পর্যন্ত আমার নামে বিধবা ভাতার বইটি করাতে পারিনি।তিনি বলেন অনেকের স্বামী মৃত্যুর ৬ মাস পরেও বিধবা ভাতার বই পেয়েছে, আর আমার ২৫ বছর স্বামী মৃত্যুর পরও আমি পাচ্ছি না, আমি মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন জানাচ্ছি আমার মত যারা বিধবা হয়েও বিধবা ভাতা পাচ্ছে না,অতি কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন তারা যেন বিধবা ভাতা পায় সে বিষয়ে কতৃপক্ষকে যেন পদক্ষেপ নিতে বলেন।
নানা সংকটে আর্থিক কষ্টে দিন কাটালেও হাজেরা খাতুনের কপালে জোটেনি সরকারি কোন সহযোগিতা। শনিবার সকালে ১নং রামগড় ইউনিয়নের লামকু পাড়ায় গিয়ে কথা হয় বৃদ্ধা হাজেরা খাতুনের সঙ্গে। হাজেরা খাতুন বলেন, ‘আমি ভিক্ষা করিনা। ভিক্ষা করা পাপ। তবে হাটার পথে পরিচিতজনেরা খুশি হয়ে যা কিছু দেয় তা দিয়ে চলি। খুব একটা হাটা-চলা করতেও পারিনা। মাথা ঘুরায়’।
 সরকারিভাবে বরাদ্দ কৃত অন্যান্য সুযোগ সুবিধা পায় কিনা জিজ্ঞেস করা হলে   হাজেরা খাতুন চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বলেন,  ‘সরকারি সাহায্য কোনদিন পাইনি। সরকারতো অনেক দেয় শুনি। আর কত দিবে। আমার কপালে নাই’।
এবিষয় রামগড় উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার আজিজুর রহমান কে  জিজ্ঞেস করা হলে তিনি   বলেন উপজেলা  পর্যায় দুইটি কমিটি কাজ করতেছে আমরা জমাকৃত আবদেনের তালিকা গুলো যাচাবাচাই কমিটির নিকট সদস্য সচিব হিসেবে প্রেরণ করে থাকি, ঐ তালিকা থেকে যাচাইবাচাই কমিটি ভাতার জন্য যাদের কে নির্বাচিত করেন তারাই ভাতা ভোগী হিসেবে গন্য হন, এতে সরকারী নীতিমালার বাইরে আমাদের কিছু করার থাকে না।
রামগড় ১ নং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ভাতা বাস্তবায়ন  কমিটির সভাপতি মোঃ শাহ আলম মজুমদার বলেন এই ব্যাপারে কোন মহিলা আমার কাছে আসেনি,তবে এটা খুবই দুঃখজনক ২৫ বছর আগে স্বামী মারা যাওয়ার পরো তিনি বিধবা ভাতা পাচ্ছেন না।আগামীতে তার ভাতা  আবেদন পত্র  পাওয়ার পর যাচাইবাচাই করে বিধবা ভাতা দেওয়ার জন্য চেষ্টা করবো।
এ ব্যাপারে রামগড় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আনম বদরুদ্দোজা  জানান,বিবি হাজেরা খাতুনের  বিধবা ভাতা এবং সরকারি কোন সহায়তা না পাওয়ার বিষয়টি তার সাথে দেখা করে বিস্তারিত খোঁজ খবর নেয়া হবে এবং প্রয়োজনমত তাকে সরকারি সকল সাহায্য  এবং সুযোগ সুবিধার আওতায় আনা হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর