নভেল করোনাভাইরাসের চেয়ে অনেক বেশি প্রাণঘাতী ইবোলা ভাইরাসে আক্রান্ত নতুন এক রোগী শনাক্ত হয়েছেন মধ্য আফ্রিকার দেশ কঙ্গোয়। গত সপ্তাহে পূর্বাঞ্চলীয় বুটেম্বো শহরের কাছে এক নারীর শরীরে ভয়াবহ এই ভাইরাস ধরা পড়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। খবর রয়টার্সের।জানা গেছে, গত ১ ফেব্রুয়ারি বিয়েনা শহরে ইবোলা সংক্রমণের উপসর্গযুক্ত ওই নারী শনাক্ত হন। এর মাত্র দু’দিন পরেই বুটেম্বোর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
ওই নারীর স্বামী আগের এক প্রাদুর্ভাবের সময় ইবোলায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। তবে এবারের সংক্রমণ থেকে ইতোমধ্যে নতুন প্রাদুর্ভাব শুরু হয়েছে কি না তা এখনো নিশ্চিত নয়।রোববার কঙ্গোর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, প্রাদেশিক রেসপন্স টিম ইতোমধ্যে কঠোরভাবে কাজ করছে। তাদের সাহায্য করবে জাতীয় রেসপন্স টিম, যা শিগগিরই বুটেম্বো যাবে।
কঙ্গোয় ইবোলা নিয়ন্ত্রণে সহযোগিতা করা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, মৃত নারীর সংস্পর্শে আসা অন্তত ৭০ জনকে চিহ্নিত করেছে স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। তিনি যেসব জায়গায় গিয়েছিলেন, সেগুলোও জীবাণুমুক্ত করা হয়েছে। এই সংক্রমণের সঙ্গে পূর্ববর্তী সংক্রমণের যোগসূত্র রয়েছে কি না নিশ্চিত হতে ভাইরাসের নমুনা দেশটির রাজধানী কিনশাসায় পাঠানো হয়েছে।ডব্লিউএইচও বলেছে, বড় আকারে প্রাদুর্ভাবের পরে বিক্ষিপ্ত সংক্রমণ থাকা অস্বাভাবিক নয়।
নতুন করে ইবোলার সংক্রমণ কঙ্গোয় করোনাভাইরাস মোকাবিলা কার্যক্রমকে চ্যালেঞ্জর মুখে ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। দেশটিতে এপর্যন্ত অন্তত ২৩ হাজার ৬০০ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, মারা গেছেন ৬৮১ জন। এবছরের প্রথমার্ধেই সেখানে করোনারোধী টিকাদান শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিপরীতে, ১৯৭৬ সালে প্রথমবার শনাক্তের পর ইতোমধ্যে ১১বার বড় আকারে ইবোলা প্রাদুর্ভাবের মুখোমুখি হয়েছে কঙ্গো, যা অন্য দেশগুলোর তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।মাত্র তিন মাস আগেই উত্তরশ্চিমাঞ্চলীয় ইকুয়েটুর প্রদেশে ১১তম ইবোলা সংক্রমণ সমাপ্তির ঘোষণা দিয়েছিল কঙ্গো সরকার। এতে ১৩০ জন আক্রান্ত এবং অন্তত ৫৫ জন মারা গিয়েছিলেন।
একই সময় দেশটির পূর্বাঞ্চলে চলছিল ইবোলার ১০ম প্রাদুর্ভাব। এটি স্থায়ী হয়েছিল ২০১৮ সালের ১ আগস্ট থেকে ২০২০ সালের ২৫ জুন পর্যন্ত, যাতে মারা যান অন্তত ২ হাজার ২০০ জন। বিশ্বের ইতিহাসে এটাই ইবোলায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এবং কঙ্গোতে সর্বোচ্চ প্রাণহানির ঘটনা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, ইবোলায় মৃত্যুহার সাধারণত ৫০ শতাংশের কাছাকাছি, তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি ৯০ শতাংশ পর্যন্ত প্রাণঘাতী হতে পারে।অবশ্য আশার কথা, বিশ্বে ইতোমধ্যে ইবোলারোধী টিকা রয়েছে। আর এই ভাইরাসটি করোনার মতো উপসর্গহীন রোগীদের মাধ্যমে ছড়ায় না।
কঙ্গোর নিরক্ষীয় বনাঞ্চলগুলো ইবোলা ভাইরাসের আবাসস্থল। করোনার মতো এটিও প্রাথমিকভাবে বাদুড়ের শরীরে থাকে বলে ধারণা করা হয়।ইবোলায় আক্রান্ত হলে রোগীর প্রচুর বমি এবং ডায়রিয়া দেখা দেয়। ভাইরাসটি শরীর-নিঃসৃত তরলের মাধ্যমে ছড়িয়ে থাকে।