সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৪৫ অপরাহ্ন

ই-পেপার

মিয়ানমারে এক বছরের জরুরি অবস্থা জারি

অনলাইন ডেস্ক:
আপডেট সময়: সোমবার, ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১০:৫১ পূর্বাহ্ণ

মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) নেত্রী অং সান সু চি এবং দেশটির রাষ্ট্রপতি উইন মিন্টকে আটকের পর দেশটিতে এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করেছে সেনাবাহিনী। পাশাপাশি দেশটির বড় শহরগুলোতে টহল দিচ্ছে সেনাবাহিনী।

বিবিসির খবরে জানানো হয়, সোমবার (০১ ফেব্রুয়ারি) আটক অভিযান শুরু হওয়ার এক ঘণ্টা পর মিলিটারি টিভি নিশ্চিত করে, সেনাবাহিনী দেশটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করেছে। স্থগিত করা হয়েছে পার্লামেন্ট অধিবেশন এবং টেলিফোন, ইন্টারনেট ও টিভি চ্যানেল সম্প্রচারও বন্ধ করা হয়েছে দেশটিতে।

আজ দেশটিতে নতুন পার্লামেন্টের প্রথম অধিবেশন বসার কথা ছিল। তার আগেই ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির প্রধান এবং মিয়ানমারে বেসামরিক প্রশাসনের মূলনেত্রী হিসেবে পরিচিত অং সান সু চি এবং প্রেসিডেন্ট ইউ উইন মিন্টসহ দলটির শীর্ষ নেতাদের আটক করে সেনাবাহিনী।

এনএলডির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, আইনপ্রণেতা এবং আঞ্চলিক মন্ত্রিপরিষদের বেশ কিছু সদস্যকেও নিরাপত্তা হেফাজতে নিয়েছে সেনাবাহিনী। নতুন পার্লামেন্টের প্রথম অধিবেশন শুরুর মাত্র কয়েক ঘন্টা আগে সেনাবাহিনীর এমন নগ্ন হস্তক্ষেপকে সেনা অভ্যুত্থান হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে। দেশটির রাজপথে টহল দিচ্ছে সেনাবাহিনী। বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে টেলিফোন সংযোগ। এসব কিছুই সেখানে একটি সেনা অভ্যুত্থানের ভয়াবহ চিত্র ফুটিয়ে তোলে।

ক্ষমতাসীন দলের মুখপাত্র মায়ো নিউন্ট সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘অং সান সু চি, রাষ্ট্রপতি উইন মিন্ট এবং অন্য শীর্ষ নেতাদের সোমবার ভোরে আটক করা হয়েছে। আমাদের ধরে নিতে হবে যে সেনা অভ্যুত্থান ঘটেছে। আমি জনগণকে উত্তেজিত না হয়ে আইন অনুসারে প্রতিক্রিয়া দেখানোর আহ্বান জানাই।’

গত বছরের ৮ নভেম্বর জাতীয় নির্বাচনে অং সান সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) বড় জয় পাওয়ার পর থেকেই দেশটিতে সেনাবাহিনীর সঙ্গে বেসামরিক প্রশাসনের উত্তেজনা চলছিল। নির্বাচনে ব্যাপক জালিয়াতির অভিযোগ তুলে ফলাফল মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায় সেনাবাহিনী সমর্থিত দল ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (ইউএসডিপি)। তারা নতুন নির্বাচনের দাবি তোলে। দাবি মানা না হলে সেনাবাহিনী ফের অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় বসতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেয়া হয়েছিল।

এর আগে, গত সপ্তাহে সামরিক মুখপাত্র মেজর জেনারেল জাও মিন তুন বলেন, সেনাবাহিনীর প্রধান মিন অং হ্লাইয়াং যৌক্তিকভাবে নির্বাচনের জালিয়াতিকে চিহ্নিত করেছেন। নির্বাচনে প্রতারণার অভিযোগ নিয়ে মিয়ানমারে যে রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে তার সমাধান না হলে ‘ব্যবস্থা নেওয়ার’ পরিকল্পনা আছে তাদের।

এটি কি অভ্যুত্থান হতে পারে- এমন প্রশ্নের জবাবে মুখপাত্র ‘সেই আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না’ বলে মন্তব্য করলে উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়।

এরপর গত শুক্রবার জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ও মিয়ানমারে অবস্থিত পশ্চিমা দেশগুলোর দূতাবাস দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার এ দেশটিতে সেনা হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানায়। যদিও পরের দিনই দেশটির সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে অভ্যুত্থানের আশঙ্কা নাকচ করে বলা হয়, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী সংবিধান মেনে আইন অনুযায়ী কাজ করবে।

গত বছর ৮ নভেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে অং সান সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) বড় জয় পায়। পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য যেখানে ৩২২টি আসনই যথেষ্ট, সেখানে এনএলডি পেয়েছে ৩৪৬টি আসন। সেনাবাহিনী সমর্থিত দল ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (ইউএসডিপি) ভোটে প্রতারণার অভিযোগ তুলে ফলাফল মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায় এবং নতুন করে নির্বাচন আয়োজনের দাবি তোলে। দাবি মানা না হলে সেনাবাহিনী ফের অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় বসতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেয় তারা।

সূত্র : বিবিসি, দ্য হিন্দু, রয়টার্স।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর