রুবিনা আজাদ, আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল:
মুক্তিযুদ্ধে নবম সেক্টরের প্রধান সংগঠক, দক্ষিণাঞ্চলের প্রথম সচিবালয়ের বেসামরিক প্রধান, আওয়ামী লীগের প্রাক্তন রাজনীতিবিদ, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মন্ত্রীসভার যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী, ভাষা সৈনিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মোঃ নুরুল ইসলাম মনজুরের লাশ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় জানাজা শেষে দাফন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৬ মে) বাদ আছর গুলশান সোসাইটি জামে মসজিদে মরহুমের জানাজা শেষে বনানী গোরস্থানে দাফন করা হয়। এর আগে সোমবার (২৫ মে) রাত ১১টা ৫০ মিনিটে রাজধানীর এভার কেয়ার (সাবেক এ্যাপোলো) হাসপাতালে বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহির…..রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। তিনি স্ত্রী, ৪ পুত্র, ৩ কন্যাসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন, গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
নুরুল আলম মনজুর সংক্ষিপ্ত রাজনৈতিক পরিচয় \ ছাত্রাবস্থায় তিনি বরিশাল বিএম কলেজে ছাত্রলীগ, মুকুল ফৌজ পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের রাজনীতিসহ বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে থাকার পর ১৯৬২ সালে শহরের প্রধান নির্বাচনী এলাকা থেকে স্থানীয় নির্বাচনে তিনি বিজয়ী হন। ১৯৫৮ থেকে ১৯৭০ এর সবগুলো ঘুরনিবীত্যায় দুর্গত সেবার প্রধান উদ্যাক্তা, ১৯৭০ সালের নির্বাচনে তিনি বিপুল ভোটে বিজয়ী সংসদ সদস্য, ১৯৭১ এর ২৫ মার্চ মধ্যরাতে তিনি তার বরিশাল শহরের নিজ বাড়িতে সকল রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্বদের উপস্থিতিতে স্বাধীন দক্ষিণবাংলা সরকার গঠণ করে মুক্তিযুদ্ধের সূচনা করেন, তিনি নবম সেক্টর গঠণ করে তা পরিচালনা করেন। এছাড়াও তিনি অস্ত্রহাতে একাধিক সম্মুখ যুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহন করে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। ৭ ডিসেম্বর বরিশাল শহর শত্রুমুক্ত করার যুদ্ধেও তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন।স্বাধীনতার পর তিনি বাংলাদেশ সরকারে প্রথম যোগাযোগ ও রেলওয়ে প্রতিমন্ত্রী ছিলেন।
নুরুল ইসলাম মনজুরের গ্রামের বাড়ি বরিশাল বিভাগের পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়া উপজেলার নদমুলা ইউনিয়নের হেতালিয়া গ্রামে। তার বাবা মরহুম হেমায়েত উদ্দিন আহমেদ ছিলেন স্যানিটারি ইন্সপেক্টর। বাবার চাকরিস্থল বরিশাল শহরে ১৯৩৭ সালের ১৬ নভেম্বর তার জন্ম হয়।
বরিশাল জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও বরিশাল থেকে প্রকাশিত বিপ্লবী বাংলাদেশ পত্রিকার প্রকাশক মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আলম ফরিদ জানান, তার ভাই নুরুল ইসলাম মনজুর আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষের আইনজীবী ছিলেন। এছাড়া তিনি ১৯৫৪ থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
১৯৬১ সালে তিনি ইকবাল হল (জহুরুল হক হলের) ভিপি নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৬২ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত বৃহত্তর বরিশাল আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি ছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৯৭০ সালে তিনি বরিশাল সদর থেকে এমএনএ (জাতীয় পরিষদ সদস্য) নির্বাচিত হন। ১৯৭৩ সালে বরিশাল সদর থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে দলীয় কোন্দলের কারণে অভিমান করে তিনি ১৯৯১ সালে বিএনপিতে যোগদান করেন। ১৯৯৬ সালে পিরোজপুর-২ (ভান্ডারিয়া-কাউখালী) আসন থেকে নুরুল ইসলাম মনজুর সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।