এস.কে হিমেল,নীলফামারী প্রতিনিধিঃ
১৯৭১সালের মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করেও আজও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি মেলেনি। নীলফামারীর সদর উপজেলার পলাশবাড়ী ইউনিয়নের আরাজী ইটাখোলার গ্রামের নুর মোহাম্মদ (৬৪)। তাহার জন্ম কুড়িগ্রাম এলাকার উলিপুর থানার পাটওয়ারী পাড়ার, পেরাড়চর, গ্রামের মৃত জহর উদ্দিনের ছেলে। তিনি জীবিকা নির্বাহের জন্য করছে সাইকেল মেকারি। ১৯৭১ সালে জীবন বাজি রেখে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ গ্রহন করে বাংলাদেশের লাল সবুজের পতাকা ছিনিয়ে আনা লাখো বীর সেনাদের মধ্যে নুর মোহাম্মদ । ৭১’ এর রনাঙ্গনে ছিলেন একজন নবম শ্রেনীর তরতাজা স্কুলের ছাত্র। সেই ছাত্র এখন বৃদ্ধ। ভোটার আইডি কার্ড অনুসারে তার বয়স এখন (৬৪) বছর।
তার দরিদ্র সংসারে বর্তমানে রয়েছে স্ত্রী রাবেয়া বেগম, ৩ মেয়ে ও ১ ছেলে। তার একমাত্র ছেলে ফেরদৌস এখন হাফিজী মাদরাসার শিক্ষক। সামান্য বেতনে ও তার বাবার সাইকেল মেকারিতে রোজগারের চলে তাদের সংসার। ১৯৭১ সালে এদেশের বাঙ্গালির উপর নির্বিচারে যখন গুলি চালায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনি। তখন তিনি কুড়িগ্রাম রৌমারীতে পড়ালেখা করেন। তখন তাহার বয়স ছিলো ১৫ বছরের উপরে। তিনি বঙ্গবন্ধুর ডাকে সারা দিয়ে মাতৃভুমি রক্ষার্থে মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েন।
তৎকালীন ভারতে মুজিব ক্যাম্পে গিয়ে প্রায় ২৮ দিন গ্যারিলা (সাধারণ) ট্রেনিং করেন। ট্রেনিং শেষে দেশে এসে কুড়িগ্রাম জেলার মুক্তিকালীন কমান্ডার মোঃ খায়রুল আলোমের দলে তিনি নাম লেখান। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময় কুড়িগ্রাম ৬নং সেক্টরে অধিনে ছিল। সে সময় তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে থেকে দেশ রক্ষায় যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ন দায়িত্ব পালন করেন। এসময় তিনিসহ ৩৫ জনের একটি টিম এলএমজি, এচএলআর ও থ্রি নট রাইফেল গ্রেনেট দিয়ে পাকিস্তানি ৮০ জনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন।
মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল্লাহ, আব্দুল আহাদ, এসব মুক্তিযোদ্ধারা মিলে এক সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাদের ওপর হামলা চালাতেন। এবং সে সময় প্রত্যেকটি অপারেশনে তার ভুমিকা ছিল প্রসংসনীয়। নুর মোহাম্মদের জীবন বাজী রেখে কুড়িগ্রাম জেলায় গুরত্বপূর্ন স্থানে একের পর এক পাকসেনাদের মুখোমুখি যুদ্ধ করেন। এভাবে দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধের পর দেশ স্বাধীন হয়। দেশ স্বাধীন হয়েছে ঠিকই কিন্তু আজ পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি মেলেনি বৃদ্ধ নুর মোহাম্মদের ভাগ্যে।
সরেজমিনে নুর মোহাম্মদের সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি বলেন এ বিষয়ে আমি আর কিছু বলতে চাইনা- তারপরও সাংবাদিক দেখে মনের আবেগ ধরে রাখতে না পেরে বুক ফাঁটা কন্ঠে বলেন কি বলবো দেশটা স্বাধীনতার জন্য জীবন দিতে রাজি ছিলাম। কিন্তু আল্লাহ আমাকে বেঁচে রেখেছেন । এখনো পায়ে পাকিস্তানি বাহিনীর গুলি আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
তিনি কান্না কন্ঠে বলেন, কুড়িগ্রাম, পেরাড়চর নদী ভাঙ্গনের কারন স্বাধীনতার আটরো বছরে ১৯৮৮ সাল পযর্ন্ত বন্যায় আমাদের বাড়ীঘর প্রায় ২৩বার ভেঙ্গে নদীতে বিলিন হয়ে যায়। অবশেষে আমি,স্ত্রী ও সন্তানাদি নিয়ে নীলফামারীর পলাশবাড়ীতে সরকারী জমিতে বসবাস শুরু করি। নিজের জায়গা জমি নাই। মাত্র চার শতক সরকারী খাশ জমির উপর দো’চালা টিনের ঘর। জীবন বাঁচানোর তাগিদে সাইকেল মেকারি করে জীবন চলে।
পরবর্তীতে কুড়িগ্রাম জেলা কমান্ডার মোঃ সিরাজুল ইসলাম (টুকু) সত্যায়িত ২০০৮ সালে স্বাক্ষরিত প্রত্যায়নে মাধম্যে তেনাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে সত্যায়িত করেন। উলিপুর উপজেলা কমান্ডার মো ফয়জার রহমান প্রত্যায়নের মাধ্যমে নীলফামারী জেলা কমান্ডারকে বীর মুক্তিযোদ্ধা নুর মোহাম্মদকে নীলফামারী জেলায় স্থায়ী বসবাসের জন্য মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম দেওয়ার জন্য প্রত্যায়ন দেন। তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা তার কল্যাণ ট্রাস্ট নং(৩৯৬৯৬)। এরপরও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পাননি তিনি। এরপরও অনেকবার আবেদন করেন তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি দেওয়ার কথা বলে জেলা ও উপজেলার কমান্ডাররা আশ্বস্ত করলেও আজ পযর্ন্ত মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় স্থান হয়নি তার। তিনি বলেন মৃত্যুর আগে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় তার নাম মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কাছে জোর দাবি করেন ।
বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ রংপুর বিভাগের সভাপতি মোঃ সফিয়ার রহমান বলেন, আসলে নীলফামারীতে অনেক রাজাকার টাকার বিনিময়ে মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফেকেট নিয়েছে। আর আসল মুক্তিযোদ্ধারা বাদ পড়েছে। বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপক্ষের নিরলস ভাবে দেখাশুনা করছে। তাই সঠিক মুক্তিযোদ্ধের খোঁজ করে বের করতে হবে।
CBALO/আপন ইসলাম