মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:২৯ পূর্বাহ্ন

ই-পেপার

আগৈলঝাড়ায় প্রধানমন্ত্রীর পাকা ঘর থেকে বাদ পরলেন শত শত গৃহহীনরা এমপি আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ’র হস্তক্ষেপ কামনা

প্রতিনিধির নাম:
আপডেট সময়: শনিবার, ৩১ অক্টোবর, ২০২০, ৫:১৩ অপরাহ্ণ

রুবিনা আজাদ, আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল:
“আশ্রয়ণের অধিকার, শেখ হাসিনার উপহার’’ এই শ্লোগানে মুজিব শতবর্ষে ‘ভ‚মিহীন ও গৃহহীন’ পরিবারের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় বরিশালের আগৈলঝাড়ায় শত শত ভ‚মিহীন ও গৃহহীনদের আশ্রয়স্থল বসত বাড়ির স্বপ্ন ধুলিস্যাত হয়ে গেছে ! অধিকার বঞ্চিত শত শত ভূমিহীন ও গৃহহীনরা জাতির পিতার ভাগ্নে স্থানীয় এমপি আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ’র হস্তক্ষেপে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহার পাকা বাড়ি পেয়ে তাদের মাথা গোজার ঠিকানা নিশ্চিতের জোর দাবি জানিয়েছেন।

উপজেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, মুজিব শতবর্ষে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প-২এর আওতায় ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে সারাদেশে ‘ভ‚মিহীন ও গৃহহীনদের জন্য সরকারের ২ শতক খাস জমি বন্দোবস্ত প্রদান পূর্বক ওই জায়গার উপর ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা ব্যয়ে দুই কক্ষ বিশিষ্ট সেমি পাকা বাড়ি নির্মাণের প্রকল্প গ্রহন করা হয়।

ওই প্রকল্পের আওতায় আগৈলঝাড়া উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে ‘ভ‚মিহীন ও গৃহহীন’দের তালিকা তৈরী করে বরিশাল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে তালিকা প্রেরণ করেন আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার রওশন ইসলাম চৌধুরী।

উপজেলায় ‘ভ‚মিহীন ও গৃহহীন’দের প্রণয়ন করা তালিকা অনুযায়ি, রাজিহার ইউনিয়নে ৩৭ পরিবার, বাকাল ইউনিয়নে ৪৯ পরিবার, বাগধা ইউনিয়নে ৭৭ পরিবার, গৈলা ইউনিয়নে ১৭৯ পরিবার ও রত্নপুর ইউনিয়নে ৪৩ পরিবারসহ মোট ৩৮৫পরিবার সদস্যদের নাম রয়েছে।
একাধিক ইউপি চেয়ারম্যানগন অভিযোগে বলেন, তাদের তৈরী করা তালিকা ইউএনও রওশন ইসলাম চৌধুরী ডিসি অফিসে না পাঠিয়ে এমনকি উপজেলা পরিষদের কোন মিটিংএ বিষয়টি উত্থাপন না করে নিজে একক কর্তৃত্বে খাটিয়ে অথি গোপনে ৩৬জনের একটি নামের তালিকা জেলায় প্রেরণ করেন।

চলতি বছর ২ সেপ্টেম্বর বরিশাল জেলা প্রশাসকের ২০-৯১৪ নং স্মারকের আলোকে গৃহ নির্মাণ প্রকল্প পরিচালক মো. মাহাবুব হোসেন (অতিরিক্ত সচিব) ১২অক্টোবর স্বাক্ষরিত ১২৮৮নং স্মারকে বরিশাল জেলার অনুকুলে ১০টি উপজেলায় ৮১৩৯টি গৃহ নির্মাণের জন্য স্বস্ব উপজেরা নির্বাহী অফিসারদের একাউন্টে ১লাখ ৭১হাজার টাকা হিসেবে মোট ১শ ৩৯ কোটি ১৭ লাখ ৬৯ হাজার টাকা সংশ্লিষ্ঠ উপজেলাগুলোতে বরাদ্দ প্রদান করেন।

ওই বরাদ্দপত্র অনুযায়ি জেলার মেহেন্দিগঞ্জে উপজেলায় ১৬২৮, বাবুগঞ্জে ৫০১, উজিরপুরে ১শ, বরিশাল সদরে ১৫৭, বাকেরগঞ্জে ১৫৪৫, হিজলায় ১৬৫৩, মুলাদীতে ৮৬৪, গৌরনদীতে ১২৫০, বানারীপাড়ায় ৪০৫ আর আগৈলঝাড়ায় মাত্র ৩৬টি ঘরের বরাদ্দ রয়েছে।

বরাদ্দপত্র প্রাপ্তির পর পাকা ঘরের বিষয়টি জানাজানি হলে অধিকার বঞ্চিত গৃহহীন পরিবার, সংশ্লিষ্ঠ ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদসহ ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে ইউএনও’র এহেন কাজে তীব্র অসন্তোষ ও চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

সূত্র আরও জানায়, সরকারী গেজেট অনুযায়ি আগৈলঝাড়া উপজেলার বিভিন্ন মৌজায় ‘ক’ তফসীলভুক্ত বিভিন্ন শ্রেণির ৫শ ৫২একরেরও বেশী জমি রয়েছে। অন্যদিকে সেপ্টেম্বর মাসে জেলায় পাঠানো সম্পত্তির হিসাব বিবরণীতে অর্পিত পরিমান দেখানো হয়েছে ২০৯.১৭একর। যার মধ্যে ১৮০একর সম্পত্তি ইজারাভুক্ত রয়েছে। ইজারা বর্হিভ‚ত সম্পত্তি রয়েছে ২৯.১৭একর।

এ ব্যাপারে এসিল্যান্ডের অতিরিক্ত দ্বায়িত্বে থাকা আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রওশন ইসলাম চৌধুরী বলেন, সরকার গৃহহীনদের জন্য গৃহ নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ‘এখনই ঘর নির্মানের জন্য উপযোগী’ এমন প্রতি ঘরের জন্য ২শতক করে খাস জমির চাহিদা অনুযায়ি তালিকা চেয়েছেন। আগৈলঝাড়া উপজেলায় যে পরিমান খাস জমি রয়েছে তাতে ৩৬ জনের বেশী গৃহহীনের ঘর নির্মাণ করা সম্ভব নয় বিধায় তিনি উপজেলা থেকে ৩৬জনের তালিকা জেলা প্রশাসকের কাছে প্রেরণ করেছেন। ওই তালিকা অনুমোদন হয়ে আসার সত্যতা স্বীকার করে তিনি আরও বলেন, শুধু খাস জমি থাকলেই হবে না, তাতে ‘এখনই ঘর তোলার উপযোগী’ জমি হতে হবে।

 

কারণ আগামী ১৫ জানুয়াররি মধ্যে নির্মান করা ঘর ভূমিহীনদের কাছে হস্তান্তর করতে হবে। পানি বা বিলে খাস জমি থাকলেও সেখানে ঘর নির্মান করা যাবে না জানিয়ে তিনি আরও বলেন, জেলার যে সকল উপজেলায় স্থানীয় চাহিদানুযায়ি বেশী সংখ্যক ঘর বরাদ্দ হয়েছে তারা হয়তো সরকারের নির্দেশনা বুঝতে কোথাও ভুল করেছেন। তারা হয়তো খাস জমির পরিবর্তে উপজেলায় ভিপি সম্পত্তির হিসাব অনুযায়ি তালিকা দাখিল করেছেন। ওই সকল উপজেলায় ঘর নির্মাণের সময় আইনী বিষয়টি ধরা পরলে তা হবে সবার জন্য বিব্রতকর। ভিপি সম্পত্তিতে ঘর তোলার কোন নির্দেশনা সরকার দেয়নি। যদি সরকার ভিপি সম্পত্তিতে ঘর তোলার নির্দেশনা প্রদান করে তবে আগৈলঝাড়া থেকে পুনরায় গৃহহীনদের তালিকা দেয়া হবে এবং তা বরাদ্দ হবে বলেও নিশ্চিত করেন তিনি। উপজেলায় খাস জমি খোঁজা হচ্ছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, নতুন খাস জমির সন্ধান পেলে সেই অনুযায়ি আবার জেলায় চাহিদা প্রেরণ করা হবে।

 

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রইচ সেরনিয়াবাত বলেন, দেশে কোন মানুষ গৃহহীন থাকবে না, প্রধানমন্ত্রীর সেই ঘোষণানুযায়ি উপজেলায় মুজিব বর্ষের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমরা সকল চেয়ারম্যানদের ভ‚মিহীনদের তালিকা তৈরী করতে বলি। সেই অনুযায়ি চেয়ারম্যানরা পাঁচটি ইউনিয়ন থেকে ৩৮৫টি গৃহহীন পরিবারের তালিকা তৈরী করে ইউএনও’র কাছে জমা দেন। ওই তালিকা থেকে কখন, কবে, কত জনের তালিকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ইউএনও প্রেরণ করেছে তা তার জানা নেই। ডিসি অফিসের একটি মিটিংএ আগৈলঝাড়ায় মাত্র ৩৬ পরিবারের নামে গৃহ বরাদ্দের কথা জানতে পারেন তিনি। বর্তমান প্রেক্ষাপটের বিষয়টি স্থানীয় এমপি আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আবদুল্লাহকে অবহিত করা হয়েছে।

 

CBALO/আপন ইসলাম


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর